০৬:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়াকেন্দ্রিক কৌশলে এক ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে  

যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে দ্বিধা

ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদিও বারবার বলা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে মনোযোগ দেবেবাস্তবে প্রশাসনের অগ্রাধিকার যেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি বিমান অভিযানে আটকে আছে। ফলে এশিয়াকেন্দ্রিক কৌশল নিয়ে এক ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

প্রায়োরিটি নির্ধারণে প্রশাসনের অনীহা

ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল পাপারোর এপ্রিলের কংগ্রেস সাক্ষ্যে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়। তিনি বলেনযুক্তরাষ্ট্রের আরও বেশি সামরিক সক্ষমতা প্রয়োজনঅথচ কার্যকর কৌশল বলতে বোঝায় বেছে নেওয়াসবকিছু একসাথে পাওয়া সম্ভব নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গিই প্রমাণ করে যে প্রশাসনের একাংশ এখনও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত নয়।

ইউক্রেন বনাম চীন: কৌশলগত দ্বন্দ্ব

পাপারো দাবি করেনইউক্রেনে রাশিয়ার জয় চীনকে সাহসী করে তুলবেআর পরাজয় হলে তারা সতর্ক হবে। কিন্তু প্রশাসনের অন্য অংশ বলছেইউক্রেনে অতিরিক্ত বিনিয়োগ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে দুর্বল করে দেবে। এর ফলে দেখা যাচ্ছেএকক নীতির অভাব এবং যুদ্ধ উপকরণের সংকটবিশেষ করে প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি ও হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্রের মতো উচ্চমূল্যের সরঞ্জামনতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

চীনের সঙ্গে নৌ শক্তির ভারসাম্য

পাপারো জানানপশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনা জাহাজঘাটাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় দ্বিগুণ গতি সাবমেরিন তৈরি করছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনো কিছু প্রজন্মগত’ সুবিধা ধরে রেখেছেচীনা সাবমেরিনগুলো ইতিমধ্যে উন্নত অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল নিয়ে এসেছেযা আমেরিকান সাবমেরিনের তুলনায় এগিয়ে।

তিনি সাবমেরিন উৎপাদনের হার দ্বিগুণ করার কথা বলেনকিন্তু গত এক দশক ধরে পেন্টাগনের চেষ্টা সীমিত ফল দিয়েছে।

অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এবং অতীত নির্ভরতা

পাপারো নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী এবং উভচর আক্রমণ জাহাজকে সমান গুরুত্বপূর্ণ বললেওসাম্প্রতিক গবেষণা বলছেচীনের অত্যাধুনিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের এসব বড় যুদ্ধজাহাজকে ভয়ানক ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (CSIS)-এর একটি ওয়ারগেম বিশ্লেষণে দেখা গেছেযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাথমিক ধাপেই যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরীগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

চীনের হাইপারসনিক মিসাইল সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। তবুও পাপারোর ভাষণ থেকে বোঝা যায়তিনি এখনো পুরনো যুদ্ধ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলবিশেষ করে বিমানবাহী রণতরী ও ঐতিহ্যগত প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে।

বাস্তবতাভিত্তিক কৌশলের প্রয়োজন

যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে পিভট করতে চায়তাহলে কৌশলগতভাবে নতুন করে মূল্যায়ন দরকার। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলোকি ধরনের নিরাপত্তা স্বার্থকে যুক্তরাষ্ট্র জরুরি’ বলে গণ্য করবে?

জাপান ও ফিলিপাইনের মতো চুক্তিভিত্তিক মিত্রদের দ্বীপ প্রতিরক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাস্তবসম্মত ও তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল। অথচ তাইওয়ান কোনো চুক্তিভিত্তিক মিত্র নয় এবং সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপের অর্থ হতে পারে বিপর্যয়কর ক্ষতি ও এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি।

অন্যদিকেমিত্র দেশগুলোর মূল দ্বীপ রক্ষা করা সাবমেরিন এবং রোবোটিক জাহাজের মাধ্যমে করা সম্ভবযার ফলে সামগ্রিক নৌ-শক্তি কমিয়েও কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

উন্নীত ব্যয় নয়বরং পুনঃমূল্যায়ন চাই

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে একাধিক ফ্রন্টে জড়িয়ে পড়ছে এবং একসাথে সব কিছুর জন্য বাজেট চাইছেতা অবাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। সত্যিকারের প্রয়োজন একটি বাস্তববাদী ও আত্মসংযমী কৌশলযা যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক শক্তি ও নতুন সামরিক ভারসাম্যের সঙ্গে মানানসই।

যদি যুক্তরাষ্ট্র কিছু অপ্রয়োজনীয় ফ্রন্ট থেকে পিছু হটে এবং অত্যাবশ্যকীয় নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করেতবে এটি কেবল জাতীয় নিরাপত্তাকেই জোরদার করবে নাবরং রাষ্ট্রীয় আর্থিক স্থিতিশীলতাও বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়াকেন্দ্রিক কৌশলে এক ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে  

১২:৩০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে দ্বিধা

ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদিও বারবার বলা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে মনোযোগ দেবেবাস্তবে প্রশাসনের অগ্রাধিকার যেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি বিমান অভিযানে আটকে আছে। ফলে এশিয়াকেন্দ্রিক কৌশল নিয়ে এক ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

প্রায়োরিটি নির্ধারণে প্রশাসনের অনীহা

ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল পাপারোর এপ্রিলের কংগ্রেস সাক্ষ্যে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়। তিনি বলেনযুক্তরাষ্ট্রের আরও বেশি সামরিক সক্ষমতা প্রয়োজনঅথচ কার্যকর কৌশল বলতে বোঝায় বেছে নেওয়াসবকিছু একসাথে পাওয়া সম্ভব নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গিই প্রমাণ করে যে প্রশাসনের একাংশ এখনও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত নয়।

ইউক্রেন বনাম চীন: কৌশলগত দ্বন্দ্ব

পাপারো দাবি করেনইউক্রেনে রাশিয়ার জয় চীনকে সাহসী করে তুলবেআর পরাজয় হলে তারা সতর্ক হবে। কিন্তু প্রশাসনের অন্য অংশ বলছেইউক্রেনে অতিরিক্ত বিনিয়োগ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে দুর্বল করে দেবে। এর ফলে দেখা যাচ্ছেএকক নীতির অভাব এবং যুদ্ধ উপকরণের সংকটবিশেষ করে প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি ও হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্রের মতো উচ্চমূল্যের সরঞ্জামনতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

চীনের সঙ্গে নৌ শক্তির ভারসাম্য

পাপারো জানানপশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনা জাহাজঘাটাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় দ্বিগুণ গতি সাবমেরিন তৈরি করছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনো কিছু প্রজন্মগত’ সুবিধা ধরে রেখেছেচীনা সাবমেরিনগুলো ইতিমধ্যে উন্নত অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ মিসাইল নিয়ে এসেছেযা আমেরিকান সাবমেরিনের তুলনায় এগিয়ে।

তিনি সাবমেরিন উৎপাদনের হার দ্বিগুণ করার কথা বলেনকিন্তু গত এক দশক ধরে পেন্টাগনের চেষ্টা সীমিত ফল দিয়েছে।

অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এবং অতীত নির্ভরতা

পাপারো নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী এবং উভচর আক্রমণ জাহাজকে সমান গুরুত্বপূর্ণ বললেওসাম্প্রতিক গবেষণা বলছেচীনের অত্যাধুনিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের এসব বড় যুদ্ধজাহাজকে ভয়ানক ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (CSIS)-এর একটি ওয়ারগেম বিশ্লেষণে দেখা গেছেযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাথমিক ধাপেই যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরীগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

চীনের হাইপারসনিক মিসাইল সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। তবুও পাপারোর ভাষণ থেকে বোঝা যায়তিনি এখনো পুরনো যুদ্ধ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলবিশেষ করে বিমানবাহী রণতরী ও ঐতিহ্যগত প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে।

বাস্তবতাভিত্তিক কৌশলের প্রয়োজন

যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে পিভট করতে চায়তাহলে কৌশলগতভাবে নতুন করে মূল্যায়ন দরকার। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলোকি ধরনের নিরাপত্তা স্বার্থকে যুক্তরাষ্ট্র জরুরি’ বলে গণ্য করবে?

জাপান ও ফিলিপাইনের মতো চুক্তিভিত্তিক মিত্রদের দ্বীপ প্রতিরক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাস্তবসম্মত ও তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল। অথচ তাইওয়ান কোনো চুক্তিভিত্তিক মিত্র নয় এবং সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপের অর্থ হতে পারে বিপর্যয়কর ক্ষতি ও এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি।

অন্যদিকেমিত্র দেশগুলোর মূল দ্বীপ রক্ষা করা সাবমেরিন এবং রোবোটিক জাহাজের মাধ্যমে করা সম্ভবযার ফলে সামগ্রিক নৌ-শক্তি কমিয়েও কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

উন্নীত ব্যয় নয়বরং পুনঃমূল্যায়ন চাই

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে একাধিক ফ্রন্টে জড়িয়ে পড়ছে এবং একসাথে সব কিছুর জন্য বাজেট চাইছেতা অবাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। সত্যিকারের প্রয়োজন একটি বাস্তববাদী ও আত্মসংযমী কৌশলযা যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক শক্তি ও নতুন সামরিক ভারসাম্যের সঙ্গে মানানসই।

যদি যুক্তরাষ্ট্র কিছু অপ্রয়োজনীয় ফ্রন্ট থেকে পিছু হটে এবং অত্যাবশ্যকীয় নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করেতবে এটি কেবল জাতীয় নিরাপত্তাকেই জোরদার করবে নাবরং রাষ্ট্রীয় আর্থিক স্থিতিশীলতাও বজায় রাখতে সাহায্য করবে।