০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

আফ্রিকার নিরাপত্তা ও নেতৃত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন

কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো আফ্রিকান প্রতিরক্ষা প্রধানদের সম্মেলন

যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকা কমান্ড (AFRICOM)-এর প্রধান মার্কিন মেরিন কোরের জেনারেল মাইকেল ল্যাংলি সম্প্রতি কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত আফ্রিকান প্রতিরক্ষা প্রধানদের সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে আফ্রিকার ৩৭টির বেশি দেশের সামরিক নেতারা অংশ নেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আফ্রিকান নেতৃত্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা অর্জনের কৌশল।

আফ্রিকান সেনাবাহিনীর আত্মনির্ভরতা ও নেতৃত্বগুণ

জেনারেল ল্যাংলি বলেন, আফ্রিকান সামরিক বাহিনীগুলো এখন আর কারো সাহায্যের অপেক্ষায় নেই। তারা নিজ উদ্যোগেই নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদের হাতে নিচ্ছে। তিনি আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকৌশল ব্যাখ্যা করেন, যা সন্ত্রাসবাদ দমনে আফ্রিকান অংশীদারদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় স্তরে স্থিতিশীলতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়।

শান্তি আসে শক্তির মাধ্যমে’ — AFRICOM-এর কৌশল

AFRICOM-এর লক্ষ্য হলো আফ্রিকান দেশগুলোর সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ ও আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলা। এ জন্য শুধু সামরিক প্রশিক্ষণ নয়, বরং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, প্রতিষ্ঠানগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ল্যাংলি উদাহরণ দেন কিবেরা এলাকার SHOFCO নামে এক সংগঠনের, যারা কমিউনিটি নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করছে।

স্বাধীন প্রতিরক্ষা কার্যক্রমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আফ্রিকা

AFRICOM বিভিন্ন সামরিক মহড়া ও অভিযানের মাধ্যমে আফ্রিকান দেশগুলোকে সহযোগিতা করছে, যেমন আফ্রিকান লায়ন, ফ্লিন্টলক, ওবানগামে এক্সপ্রেস, কাটলাস এক্সপ্রেস ইত্যাদি। ২০২৫ সালের ‘জাস্টিফায়েড অ্যাকর্ড’ মহড়ায় ২০টি দেশের ১৩০০ সেনা অংশ নেয়, যা পূর্ব আফ্রিকার সর্ববৃহৎ মহড়া। এই ধরনের মহড়া আফ্রিকান দেশগুলোকে একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে সঙ্কট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করছে।

সন্ত্রাসের কেন্দ্রস্থল: সাহেল অঞ্চল

জেনারেল ল্যাংলি জানান, সাহেল অঞ্চল—বিশেষ করে মালি, বুরকিনা ফাসো, ও নাইজার—সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বুরকিনা ফাসোতে সরকার দেশের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। সন্ত্রাসীরা এখন পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে পৌঁছাতে চাচ্ছে, যাতে তারা চোরাচালান, মানবপাচার, ও অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। এ কারণে ঘানা, কোট দিভোয়ার, এবং বেনিন তাদের উত্তর সীমান্তে কড়া নজরদারি করছে।

সোমালিয়ায় সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে AFRICOM চলতি বছর সোমালিয়ায় ২৫টির বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে, যা গত বছরের দ্বিগুণ। তবে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে ল্যাংলি জানান।

চীনা সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক প্রভাব প্রতিহত করাও AFRICOM-এর একটি বড় লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকায় স্বচ্ছ ও টেকসই অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে চায়, যেখানে নিরাপত্তা ও বাণিজ্য একত্রে অগ্রসর হয়। নিরাপত্তা ছাড়া বিনিয়োগ সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

যুব নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনই ভবিষ্যতের ভরকেন্দ্র

ল্যাংলি বলেন, আফ্রিকার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তরুণদের ওপর। তিনি আলজেরিয়া, মরক্কো, গ্যাবনসহ বিভিন্ন দেশে তরুণ উদ্ভাবকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। STEM ও রোবটিক্সে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ দেখে তিনি আফ্রিকার সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী।

নির্ভরশীলতা নয়দীর্ঘমেয়াদী সক্ষমতা গড়ে তোলাই লক্ষ্য

AFRICOM অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে কেবল স্বল্পমেয়াদি সহায়তায় বিশ্বাস করে না, বরং চায় দীর্ঘমেয়াদি প্রতিষ্ঠাগত সক্ষমতা তৈরি হোক। ল্যাংলি বলেন, একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল, এবং সমৃদ্ধ আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দান নয়, বরং একটি কৌশলগত প্রয়োজন।

শেষবারের মতো সম্মেলন নেতৃত্ব দিলেন ল্যাংলি

এই সম্মেলন সম্ভবত AFRICOM প্রধান হিসেবে জেনারেল ল্যাংলির শেষ সম্মেলন। তিনি বলেন, নেতৃত্ব বদলালেও AFRICOM-এর মিশন একই থাকবে—আফ্রিকান অংশীদারদের পাশে থাকা এবং যৌথভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আফ্রিকার নিরাপত্তা ও নেতৃত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন

১০:০০:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো আফ্রিকান প্রতিরক্ষা প্রধানদের সম্মেলন

যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকা কমান্ড (AFRICOM)-এর প্রধান মার্কিন মেরিন কোরের জেনারেল মাইকেল ল্যাংলি সম্প্রতি কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত আফ্রিকান প্রতিরক্ষা প্রধানদের সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে আফ্রিকার ৩৭টির বেশি দেশের সামরিক নেতারা অংশ নেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আফ্রিকান নেতৃত্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা অর্জনের কৌশল।

আফ্রিকান সেনাবাহিনীর আত্মনির্ভরতা ও নেতৃত্বগুণ

জেনারেল ল্যাংলি বলেন, আফ্রিকান সামরিক বাহিনীগুলো এখন আর কারো সাহায্যের অপেক্ষায় নেই। তারা নিজ উদ্যোগেই নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদের হাতে নিচ্ছে। তিনি আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকৌশল ব্যাখ্যা করেন, যা সন্ত্রাসবাদ দমনে আফ্রিকান অংশীদারদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় স্তরে স্থিতিশীলতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়।

শান্তি আসে শক্তির মাধ্যমে’ — AFRICOM-এর কৌশল

AFRICOM-এর লক্ষ্য হলো আফ্রিকান দেশগুলোর সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ ও আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলা। এ জন্য শুধু সামরিক প্রশিক্ষণ নয়, বরং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, প্রতিষ্ঠানগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ল্যাংলি উদাহরণ দেন কিবেরা এলাকার SHOFCO নামে এক সংগঠনের, যারা কমিউনিটি নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করছে।

স্বাধীন প্রতিরক্ষা কার্যক্রমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আফ্রিকা

AFRICOM বিভিন্ন সামরিক মহড়া ও অভিযানের মাধ্যমে আফ্রিকান দেশগুলোকে সহযোগিতা করছে, যেমন আফ্রিকান লায়ন, ফ্লিন্টলক, ওবানগামে এক্সপ্রেস, কাটলাস এক্সপ্রেস ইত্যাদি। ২০২৫ সালের ‘জাস্টিফায়েড অ্যাকর্ড’ মহড়ায় ২০টি দেশের ১৩০০ সেনা অংশ নেয়, যা পূর্ব আফ্রিকার সর্ববৃহৎ মহড়া। এই ধরনের মহড়া আফ্রিকান দেশগুলোকে একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে সঙ্কট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করছে।

সন্ত্রাসের কেন্দ্রস্থল: সাহেল অঞ্চল

জেনারেল ল্যাংলি জানান, সাহেল অঞ্চল—বিশেষ করে মালি, বুরকিনা ফাসো, ও নাইজার—সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বুরকিনা ফাসোতে সরকার দেশের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। সন্ত্রাসীরা এখন পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে পৌঁছাতে চাচ্ছে, যাতে তারা চোরাচালান, মানবপাচার, ও অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। এ কারণে ঘানা, কোট দিভোয়ার, এবং বেনিন তাদের উত্তর সীমান্তে কড়া নজরদারি করছে।

সোমালিয়ায় সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে AFRICOM চলতি বছর সোমালিয়ায় ২৫টির বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে, যা গত বছরের দ্বিগুণ। তবে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে ল্যাংলি জানান।

চীনা সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক প্রভাব প্রতিহত করাও AFRICOM-এর একটি বড় লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকায় স্বচ্ছ ও টেকসই অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে চায়, যেখানে নিরাপত্তা ও বাণিজ্য একত্রে অগ্রসর হয়। নিরাপত্তা ছাড়া বিনিয়োগ সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

যুব নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনই ভবিষ্যতের ভরকেন্দ্র

ল্যাংলি বলেন, আফ্রিকার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তরুণদের ওপর। তিনি আলজেরিয়া, মরক্কো, গ্যাবনসহ বিভিন্ন দেশে তরুণ উদ্ভাবকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। STEM ও রোবটিক্সে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ দেখে তিনি আফ্রিকার সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী।

নির্ভরশীলতা নয়দীর্ঘমেয়াদী সক্ষমতা গড়ে তোলাই লক্ষ্য

AFRICOM অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে কেবল স্বল্পমেয়াদি সহায়তায় বিশ্বাস করে না, বরং চায় দীর্ঘমেয়াদি প্রতিষ্ঠাগত সক্ষমতা তৈরি হোক। ল্যাংলি বলেন, একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল, এবং সমৃদ্ধ আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দান নয়, বরং একটি কৌশলগত প্রয়োজন।

শেষবারের মতো সম্মেলন নেতৃত্ব দিলেন ল্যাংলি

এই সম্মেলন সম্ভবত AFRICOM প্রধান হিসেবে জেনারেল ল্যাংলির শেষ সম্মেলন। তিনি বলেন, নেতৃত্ব বদলালেও AFRICOM-এর মিশন একই থাকবে—আফ্রিকান অংশীদারদের পাশে থাকা এবং যৌথভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।