০২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

জানুয়ারি-মার্চে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশে, পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেল

গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে ভারতের অর্থনীতি ৭.৪ শতাংশ হারে বেড়েছে, যা আগের প্রান্তিকের ৬.৪ শতাংশের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং গত এক বছরে সর্বোচ্চ। শুক্রবার ভারতের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানায়। এই হার রয়টার্সের করা অর্থনীতিবিদদের গড় পূর্বাভাস ৬.৭ শতাংশকেও ছাড়িয়ে গেছে।

সম্পূর্ণ অর্থবছরের হিসেবে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে ৬.৫ শতাংশ, যা আগের বছরের ৯.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় কম।

পুঁজি বিনিয়োগ ও ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে

প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মোট স্থায়ী মূলধনী গঠন অর্থাৎ ব্যক্তিগত ও সরকারি পুঁজি বিনিয়োগ বেড়েছে ৯.৪ শতাংশ, যেখানে আগের তিন মাসে ছিল ৫.২ শতাংশ। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয়ও বেড়েছে ৬.০ শতাংশ।

খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধির বিশ্লেষণ

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে নির্মাণ খাতে, যেখানে প্রবৃদ্ধির হার ১০.৮ শতাংশ। এরপরই আছে জন প্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য পরিষেবা খাত, যার প্রবৃদ্ধি ৮.৭ শতাংশ। আর্থিক, রিয়েল এস্টেট ও পেশাগত সেবা খাতও ভালো করেছে, প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ।

সরকারি ব্যয় ও গ্রামীণ চাহিদা প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি

আইসিআইসিআই ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবৃদ্ধি আরও জোরালো হয়েছে, যার পেছনে মূল চালক ছিল সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, গ্রামীণ চাহিদা, অভ্যন্তরীণ পর্যটন এবং পরিষেবা রপ্তানি।

তারা আরও জানায়, কৃষি উৎপাদন গ্রামীণ চাহিদা বাড়াচ্ছে এবং নির্মাণ খাত স্থিতিশীল রয়েছে। তবে শহরভিত্তিক চাহিদা এখনও দুর্বল এবং এটি ধীরে ধীরে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে—বিশেষ করে আগামী জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো সংশোধনের পর।

সুদহার কমিয়ে সহায়তা করছে রিজার্ভ ব্যাংক

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) টানা দ্বিতীয়বার সুদের হার কমিয়েছে, যাতে মন্দার আশঙ্কার মাঝে প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন দেওয়া যায়। একই সঙ্গে তারা অর্থবছর শেষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৬.৫ শতাংশ করেছে।

রিজার্ভ ব্যাংকের মুদ্রানীতির বৈঠক আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে মূল সুদের হার নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ইতোমধ্যে এপ্রিল মাসে খুচরা মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৩.১৬ শতাংশে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং টানা তিন মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ৪ শতাংশের নিচে রয়েছে।

আগামীর দৃষ্টিভঙ্গি: তিন দশক ধরে দ্রুততম প্রবৃদ্ধির আশা

বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, আগামী তিন দশক ধরে ভারতই থাকবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মধ্যে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক অস্থিরতার মাঝেও ভারত ৬-৭ শতাংশের স্থায়ী প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে এবং উন্নয়নশীল বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম সফল দেশ হয়ে উঠেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, “ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন প্রায় ৬৯০ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম। গত তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের নিচে রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংক তার মুদ্রা ও তারল্য ব্যবস্থাপনায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে।”

রপ্তানি ও ভবিষ্যৎ প্রবণতা

চতুর্থ প্রান্তিকে এই প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালক ছিল রপ্তানির হঠাৎ উল্লম্ফন বলে মনে করছেন চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ স্কুল অব ইকোনমিক্সের পরিচালক এন. আর. ভানুমূর্তি। তবে তিনি বলেন, “উৎপাদন খাতে কিছুটা ধীরগতি আছে, কারণ সেখানে এখনও বেসরকারি বিনিয়োগ তেমন বাড়েনি।”

তবে আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে উন্নতি দেখা যাবে বলে আশা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৮ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকের ৩.৬ শতাংশ থেকে বেশি হলেও গত বছরের একই সময়ে ছিল ১১.৩ শতাংশ।

ভারতের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের চিত্র বেশ শক্তিশালী, যেখানে রপ্তানি, পুঁজি বিনিয়োগ ও সরকারি ব্যয় প্রধান ভূমিকা পালন করছে, যদিও শহুরে চাহিদা ও বেসরকারি বিনিয়োগে কিছুটা দুর্বলতা এখনও রয়ে গেছে। সরকার ও রিজার্ভ ব্যাংকের নীতিগত পদক্ষেপগুলো এ প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করে তুলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

জানুয়ারি-মার্চে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশে, পূর্বাভাস ছাড়িয়ে গেল

১০:৫৯:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে ভারতের অর্থনীতি ৭.৪ শতাংশ হারে বেড়েছে, যা আগের প্রান্তিকের ৬.৪ শতাংশের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং গত এক বছরে সর্বোচ্চ। শুক্রবার ভারতের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানায়। এই হার রয়টার্সের করা অর্থনীতিবিদদের গড় পূর্বাভাস ৬.৭ শতাংশকেও ছাড়িয়ে গেছে।

সম্পূর্ণ অর্থবছরের হিসেবে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে ৬.৫ শতাংশ, যা আগের বছরের ৯.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় কম।

পুঁজি বিনিয়োগ ও ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে

প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মোট স্থায়ী মূলধনী গঠন অর্থাৎ ব্যক্তিগত ও সরকারি পুঁজি বিনিয়োগ বেড়েছে ৯.৪ শতাংশ, যেখানে আগের তিন মাসে ছিল ৫.২ শতাংশ। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয়ও বেড়েছে ৬.০ শতাংশ।

খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধির বিশ্লেষণ

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে নির্মাণ খাতে, যেখানে প্রবৃদ্ধির হার ১০.৮ শতাংশ। এরপরই আছে জন প্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য পরিষেবা খাত, যার প্রবৃদ্ধি ৮.৭ শতাংশ। আর্থিক, রিয়েল এস্টেট ও পেশাগত সেবা খাতও ভালো করেছে, প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ।

সরকারি ব্যয় ও গ্রামীণ চাহিদা প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি

আইসিআইসিআই ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবৃদ্ধি আরও জোরালো হয়েছে, যার পেছনে মূল চালক ছিল সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, গ্রামীণ চাহিদা, অভ্যন্তরীণ পর্যটন এবং পরিষেবা রপ্তানি।

তারা আরও জানায়, কৃষি উৎপাদন গ্রামীণ চাহিদা বাড়াচ্ছে এবং নির্মাণ খাত স্থিতিশীল রয়েছে। তবে শহরভিত্তিক চাহিদা এখনও দুর্বল এবং এটি ধীরে ধীরে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে—বিশেষ করে আগামী জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো সংশোধনের পর।

সুদহার কমিয়ে সহায়তা করছে রিজার্ভ ব্যাংক

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) টানা দ্বিতীয়বার সুদের হার কমিয়েছে, যাতে মন্দার আশঙ্কার মাঝে প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন দেওয়া যায়। একই সঙ্গে তারা অর্থবছর শেষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৬.৫ শতাংশ করেছে।

রিজার্ভ ব্যাংকের মুদ্রানীতির বৈঠক আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে মূল সুদের হার নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ইতোমধ্যে এপ্রিল মাসে খুচরা মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৩.১৬ শতাংশে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং টানা তিন মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ৪ শতাংশের নিচে রয়েছে।

আগামীর দৃষ্টিভঙ্গি: তিন দশক ধরে দ্রুততম প্রবৃদ্ধির আশা

বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, আগামী তিন দশক ধরে ভারতই থাকবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মধ্যে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক অস্থিরতার মাঝেও ভারত ৬-৭ শতাংশের স্থায়ী প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে এবং উন্নয়নশীল বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম সফল দেশ হয়ে উঠেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, “ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন প্রায় ৬৯০ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম। গত তিন মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের নিচে রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংক তার মুদ্রা ও তারল্য ব্যবস্থাপনায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে।”

রপ্তানি ও ভবিষ্যৎ প্রবণতা

চতুর্থ প্রান্তিকে এই প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালক ছিল রপ্তানির হঠাৎ উল্লম্ফন বলে মনে করছেন চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ স্কুল অব ইকোনমিক্সের পরিচালক এন. আর. ভানুমূর্তি। তবে তিনি বলেন, “উৎপাদন খাতে কিছুটা ধীরগতি আছে, কারণ সেখানে এখনও বেসরকারি বিনিয়োগ তেমন বাড়েনি।”

তবে আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে উন্নতি দেখা যাবে বলে আশা করেন তিনি।

উল্লেখ্য, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৮ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকের ৩.৬ শতাংশ থেকে বেশি হলেও গত বছরের একই সময়ে ছিল ১১.৩ শতাংশ।

ভারতের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের চিত্র বেশ শক্তিশালী, যেখানে রপ্তানি, পুঁজি বিনিয়োগ ও সরকারি ব্যয় প্রধান ভূমিকা পালন করছে, যদিও শহুরে চাহিদা ও বেসরকারি বিনিয়োগে কিছুটা দুর্বলতা এখনও রয়ে গেছে। সরকার ও রিজার্ভ ব্যাংকের নীতিগত পদক্ষেপগুলো এ প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করে তুলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।