০৯:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

ইউনূস বলেছিলেন “ অসাধারণ সুযোগ” : দশ মাসের বাস্তবতা

রাষ্ট্রের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শাসন কার্যকরী হতে পারেনি—অভিজ্ঞতার ঘাটতি, ব্যক্তিগত স্বার্থের সংঘাত, দলীয় পক্ষপাত এবং বিদেশ সফরে কোনো পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে না পারায় তাঁর নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ’ আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাইডলাইনে ঠাঁসা হয়েছে।

অভিজ্ঞতার ঘাটতি ও প্রশাসনিক জটিলতা

ড. ইউনূস একজন বিশ্বখ্যাত উদ্যোগী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী হলেও, রাজনীতিতে ও দফতরের প্রশাসনে তার অভিজ্ঞতা সীমিত। ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর প্যারিস থেকে ফিরে বিমানবন্দরেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “বাংলাদেশের সামনে একটি অসাধারণ সুযোগ, যা আর পাওয়া যাবে না।” কিন্তু তাঁর ১০ মাসের শাসনে নীতি-নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে বারবার বিলম্ব হয়েছে।

  • নীতি-নির্ধারণে দেরি: দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, মাইক্রোম্যানেজমেন্ট এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অনভিজ্ঞতার কারণে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে।
  • বিলম্বিত পুনর্মূল্যায়ন: জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও সামাজিক কল্যাণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো যথাসময়ে অগ্রসর হয়নি, যা দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করেছে।

এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, “একজন ব্যবসায়ী হিসেবে অভ্যস্ত তিনি করপোরেট কাঠামোতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন; কিন্তু রাজনীতির জটিলতা অন্য প্রকার। প্রতিটি বিষয়ে কৰি নেওয়ার আগে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া বুঝতে অনেক সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন, যার ফলে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।”

স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ

বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করে, জাতীয় উপদেষ্টা হনোরদক্ষতার সুযোগ নিয়ে ড. ইউনূস তার ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়েছেন।

  • কর আরোপ ও মওকুফ: এ আমরা দেখেছি—“৬৬৬ কোটি টাকার কর আরোপ করা হয়েছিল” যা ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি মওকুফ হয়েছে।
  • গ্রামীণ ব্যাংক শেয়ার হ্রাস: গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের শেয়ার কমিয়েছেন; অথচ কেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে নিজেই এইরকম সমন্বয় করেছিলেন, সে যুক্তি অনুপস্থিত রয়েছে।
  • স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনুমোদন ও সুবিধা: রিক্রুটিং এজেন্সি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির অনুমোদন দ্রুত করে নেওয়া হয়েছে—যা অন্য একটি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অত্যন্ত অলিখিত প্রশ্নের সৃষ্টি করত।

একজন ব্যবসায়ী নেতার মন্তব্য, “দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সড়ক পরিবহন সেক্টর যখন সংকটে ছিল, তখন তিনি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিক সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারি পলিসিতে প্রাধান্য দিয়েছেন। এতে সার্বিক পরিকল্পনার অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।”

নিরপেক্ষতা হারানো ও দলীয় পক্ষপাত

ড. ইউনূস এসে নিজের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করিয়ে নিলেও বিরোধীদলীয় নেতাদের “মিথ্যা ও হয়রানিমূলক” মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে দ্রুত গতি আনেননি।

  • বিভিন্ন রাজনৈতিক দলবিরোধী মামলায় অনিশ্চিত গতি: বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের নেতা-নেত্রীরা দমনমূলক অভিযোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না, অথচ তার নিজের মামলাগুলো এক মাসের মধ্যে বাতিল।
  • এনসিপির প্রতি পক্ষপাত: জুলাই আন্দোলন সংগঠিত ছাত্রদের একাংশ যখন ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি) নামে দল গঠন করে, তখনই তিনি ওই দলের দুজন নেতাকে উপদেষ্টা পদে রেখেছেন—যদিও একবার পদত্যাগ করেননি এমন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। “সরকারের উচ্চপদে থেকে নিরপেক্ষ থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখানো উচিত নয়,” বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।

এক সাধারণ নাগরিক বলেছেন, “জনগণ তখনই ড. ইউনূসের কাছে মুখ ফিরিয়ে নেন যখন দেখা যায়, তিনি কোনো দল বা গোষ্ঠীর ভালবাসা পাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, দেশের সর্বজনীন স্বার্থ বিবেচনা না করে।”

বিদেশ সফরের পরিধিসাইডলাইন বৈঠক ও আন্তর্জাতিক মর্যাদাহানি

ড. ইউনূস গত ১০ মাসে অন্তত ১০ বার বিদেশ সফর করেছেন, কিন্তু কোনো বিদেশি সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে পারেননি। সর্বশেসে সাইডলাইন (পাশাপাশি) বৈঠকের মধ্যেই দিন কাটানো হয়েছে—ফলশ্রুতিতে “বাংলাদেশ” আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্র থেকে সরে গিয়ে স্ট্যান্ডবাই অবস্থায় ঠাঁসা পড়েছে।

  • বাইপাশ বৈঠকের অভাব: দিল্লি থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিভিন্ন মিশনে বিপুল সময় ও অর্থ ব্যয় করেও কোনো সম্মানজনক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সম্ভব হয়নি; বরং সম্মানজনক ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের বদলে সাইডলাইনে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে আসীন হয়েছেন।
  • ভিসা-নিষেধ ও প্রত্যক্ষ ফলাফলহীনতা: সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডসহ বহু দেশে আজ বাংলাদেশের পেশাজীবীদের জন্য ভিসা প্রায় বন্ধ; অথচ এই সমস্যা সমাধানে তার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার বদলে তিনি শুধুমাত্র পাশের কর্নারে অবস্থান করছেন, যা দেশের কূটনৈতিক মর্যাদায় আঘাত এসেছে।

কূটনীতিবিদরা বলে, “যখন আপনার কোনো প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পূর্ব নির্ধারিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক থাকে, তখন দেশ পঞ্চমা—এ ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ’—যোগাযোগ ও সহযোগিতার সুযোগ পায়। কিন্তু এ সময়ে আমরা শুধু দেখতে পাই যে সাইডলাইন বৈঠকেই সময় কেটে যাচ্ছে; ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।”

নির্বাচন  ও রাজনৈতিক বিভাজনের উসকানি

জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল “ডিসেম্বরে নির্বাচন” দাবি করলেও ড. ইউনূস “ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে চান না” মন্তব্য করে বিভাজন উস্কে দিয়েছেন।

  • দৃঢ় অবস্থান না নেয়া: টানা বলেছেন, “ডিসেম্বরে শুধু একটি দল নির্বাচন চায়”—যা পরম পক্ষপাতহীনতা লঙ্ঘন করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “অনেকেই মনে করেন, তিনি এমন বক্তব্য দিয়ে বিভক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে চান যাতে প্রথম থেকেই বিরোধী দলগুলোতে দমনের ছাপ থাকে।”
  • ইশরাক হোসেনের মেয়রপদ: নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করার পর শপথ গ্রহণ অবিলম্বে না করানো—যা আগের উদাহরণ থেকে সম্পূর্ণ প্রভেদ। এক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করে, “নির্বাচন নিয়ে অস্বচ্ছতা অব্যাহত থাকলে দেশের রাজনৈতিক বিভাজন তীব্রতর হবে।

সমালোচনার প্রতিবেদন ও জনমতের দিকপাল্টা

ড. ইউনূস সরকারের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে জনমত বিপরীতমুখী হয়েছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সহ প্রায় সব দলই তাকে “নিরপেক্ষতা হারিয়ে” ঠিকঠাক কাজ করেননি বলে তীব্র সমালোচনা করছে।

  • নিরপেক্ষতার প্রত্যাশিত ধ্বংস: “যখন নিরপেক্ষ ছিলেন তখনই সবাই সমর্থন করত, এখন দেখা যাচ্ছে কোনো দল বা গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতার ছাপ”।
  • নাগরিকদের হতাশা: “একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব যখন পক্ষপাত দেখান, তখন জনগণের বিশ্বাস নষ্ট হয়,”—এক তরুণ মন্তব্য করেছেন।

রাজনৈতিক মহলে আশা কমেছে, “শাসনের নামে শুধু ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ, দলের পক্ষপাত ও দেশে সাংগঠনিক বিভাজনই যে বাড়িয়ে তোলা যায়।”

পরবর্তী দৃশ্যপট

বর্তমানে মূল রাজনৈতিক দলগুলোতে চলছে আলোচনা—দেশের স্থিতিশীলতা, নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেনা হুমকি, আন্তর্জাতিক মর্যাদাহানি, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব—এসব মিলে দেশের সার্বিক চিত্র অন্ধকারাচ্ছন্ন।

  • নির্বাচনের চাপ: ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। সেনাসদস্যরা স্পষ্টভাবে বলেছেন, “যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন না হয়, তাহলে ব্যারাকে ফেরে আসা বাধ্যতামূলক হবে।”
  • কূটনৈতিক রূপান্তর জরুরি: বিদেশ সফরের ফলাফল শূন্য হওয়ার পর “দ্বিপাক্ষিক বৈঠকবিহীন কূটনীতির কৌশল অবিলম্বে বদলাতে হবে,” বলছেন প্রজ্ঞাবান কূটনীতিবিদরা।

জনপ্রিয় সমালোচকদের কথায়, “ড. ইউনূসেকের পরবর্তী পদক্ষেপ দেশকে ইতিবাচক পথ দেখাবে কিনা—এটাই আসল মাপকাঠি।”

ইউনূস বলেছিলেন “ অসাধারণ সুযোগ” : দশ মাসের বাস্তবতা

০৩:২৯:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

রাষ্ট্রের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শাসন কার্যকরী হতে পারেনি—অভিজ্ঞতার ঘাটতি, ব্যক্তিগত স্বার্থের সংঘাত, দলীয় পক্ষপাত এবং বিদেশ সফরে কোনো পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে না পারায় তাঁর নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ’ আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাইডলাইনে ঠাঁসা হয়েছে।

অভিজ্ঞতার ঘাটতি ও প্রশাসনিক জটিলতা

ড. ইউনূস একজন বিশ্বখ্যাত উদ্যোগী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী হলেও, রাজনীতিতে ও দফতরের প্রশাসনে তার অভিজ্ঞতা সীমিত। ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর প্যারিস থেকে ফিরে বিমানবন্দরেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “বাংলাদেশের সামনে একটি অসাধারণ সুযোগ, যা আর পাওয়া যাবে না।” কিন্তু তাঁর ১০ মাসের শাসনে নীতি-নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে বারবার বিলম্ব হয়েছে।

  • নীতি-নির্ধারণে দেরি: দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, মাইক্রোম্যানেজমেন্ট এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অনভিজ্ঞতার কারণে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে।
  • বিলম্বিত পুনর্মূল্যায়ন: জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও সামাজিক কল্যাণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো যথাসময়ে অগ্রসর হয়নি, যা দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করেছে।

এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, “একজন ব্যবসায়ী হিসেবে অভ্যস্ত তিনি করপোরেট কাঠামোতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন; কিন্তু রাজনীতির জটিলতা অন্য প্রকার। প্রতিটি বিষয়ে কৰি নেওয়ার আগে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া বুঝতে অনেক সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন, যার ফলে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।”

স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ

বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করে, জাতীয় উপদেষ্টা হনোরদক্ষতার সুযোগ নিয়ে ড. ইউনূস তার ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়েছেন।

  • কর আরোপ ও মওকুফ: এ আমরা দেখেছি—“৬৬৬ কোটি টাকার কর আরোপ করা হয়েছিল” যা ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি মওকুফ হয়েছে।
  • গ্রামীণ ব্যাংক শেয়ার হ্রাস: গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের শেয়ার কমিয়েছেন; অথচ কেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে নিজেই এইরকম সমন্বয় করেছিলেন, সে যুক্তি অনুপস্থিত রয়েছে।
  • স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনুমোদন ও সুবিধা: রিক্রুটিং এজেন্সি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির অনুমোদন দ্রুত করে নেওয়া হয়েছে—যা অন্য একটি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অত্যন্ত অলিখিত প্রশ্নের সৃষ্টি করত।

একজন ব্যবসায়ী নেতার মন্তব্য, “দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সড়ক পরিবহন সেক্টর যখন সংকটে ছিল, তখন তিনি তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিক সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারি পলিসিতে প্রাধান্য দিয়েছেন। এতে সার্বিক পরিকল্পনার অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।”

নিরপেক্ষতা হারানো ও দলীয় পক্ষপাত

ড. ইউনূস এসে নিজের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করিয়ে নিলেও বিরোধীদলীয় নেতাদের “মিথ্যা ও হয়রানিমূলক” মামলা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে দ্রুত গতি আনেননি।

  • বিভিন্ন রাজনৈতিক দলবিরোধী মামলায় অনিশ্চিত গতি: বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের নেতা-নেত্রীরা দমনমূলক অভিযোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না, অথচ তার নিজের মামলাগুলো এক মাসের মধ্যে বাতিল।
  • এনসিপির প্রতি পক্ষপাত: জুলাই আন্দোলন সংগঠিত ছাত্রদের একাংশ যখন ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি) নামে দল গঠন করে, তখনই তিনি ওই দলের দুজন নেতাকে উপদেষ্টা পদে রেখেছেন—যদিও একবার পদত্যাগ করেননি এমন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। “সরকারের উচ্চপদে থেকে নিরপেক্ষ থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখানো উচিত নয়,” বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।

এক সাধারণ নাগরিক বলেছেন, “জনগণ তখনই ড. ইউনূসের কাছে মুখ ফিরিয়ে নেন যখন দেখা যায়, তিনি কোনো দল বা গোষ্ঠীর ভালবাসা পাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, দেশের সর্বজনীন স্বার্থ বিবেচনা না করে।”

বিদেশ সফরের পরিধিসাইডলাইন বৈঠক ও আন্তর্জাতিক মর্যাদাহানি

ড. ইউনূস গত ১০ মাসে অন্তত ১০ বার বিদেশ সফর করেছেন, কিন্তু কোনো বিদেশি সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে পারেননি। সর্বশেসে সাইডলাইন (পাশাপাশি) বৈঠকের মধ্যেই দিন কাটানো হয়েছে—ফলশ্রুতিতে “বাংলাদেশ” আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্র থেকে সরে গিয়ে স্ট্যান্ডবাই অবস্থায় ঠাঁসা পড়েছে।

  • বাইপাশ বৈঠকের অভাব: দিল্লি থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিভিন্ন মিশনে বিপুল সময় ও অর্থ ব্যয় করেও কোনো সম্মানজনক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সম্ভব হয়নি; বরং সম্মানজনক ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্রের বদলে সাইডলাইনে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে আসীন হয়েছেন।
  • ভিসা-নিষেধ ও প্রত্যক্ষ ফলাফলহীনতা: সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডসহ বহু দেশে আজ বাংলাদেশের পেশাজীবীদের জন্য ভিসা প্রায় বন্ধ; অথচ এই সমস্যা সমাধানে তার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার বদলে তিনি শুধুমাত্র পাশের কর্নারে অবস্থান করছেন, যা দেশের কূটনৈতিক মর্যাদায় আঘাত এসেছে।

কূটনীতিবিদরা বলে, “যখন আপনার কোনো প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পূর্ব নির্ধারিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক থাকে, তখন দেশ পঞ্চমা—এ ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ’—যোগাযোগ ও সহযোগিতার সুযোগ পায়। কিন্তু এ সময়ে আমরা শুধু দেখতে পাই যে সাইডলাইন বৈঠকেই সময় কেটে যাচ্ছে; ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।”

নির্বাচন  ও রাজনৈতিক বিভাজনের উসকানি

জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল “ডিসেম্বরে নির্বাচন” দাবি করলেও ড. ইউনূস “ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে চান না” মন্তব্য করে বিভাজন উস্কে দিয়েছেন।

  • দৃঢ় অবস্থান না নেয়া: টানা বলেছেন, “ডিসেম্বরে শুধু একটি দল নির্বাচন চায়”—যা পরম পক্ষপাতহীনতা লঙ্ঘন করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “অনেকেই মনে করেন, তিনি এমন বক্তব্য দিয়ে বিভক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে চান যাতে প্রথম থেকেই বিরোধী দলগুলোতে দমনের ছাপ থাকে।”
  • ইশরাক হোসেনের মেয়রপদ: নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করার পর শপথ গ্রহণ অবিলম্বে না করানো—যা আগের উদাহরণ থেকে সম্পূর্ণ প্রভেদ। এক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করে, “নির্বাচন নিয়ে অস্বচ্ছতা অব্যাহত থাকলে দেশের রাজনৈতিক বিভাজন তীব্রতর হবে।

সমালোচনার প্রতিবেদন ও জনমতের দিকপাল্টা

ড. ইউনূস সরকারের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে জনমত বিপরীতমুখী হয়েছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সহ প্রায় সব দলই তাকে “নিরপেক্ষতা হারিয়ে” ঠিকঠাক কাজ করেননি বলে তীব্র সমালোচনা করছে।

  • নিরপেক্ষতার প্রত্যাশিত ধ্বংস: “যখন নিরপেক্ষ ছিলেন তখনই সবাই সমর্থন করত, এখন দেখা যাচ্ছে কোনো দল বা গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতার ছাপ”।
  • নাগরিকদের হতাশা: “একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব যখন পক্ষপাত দেখান, তখন জনগণের বিশ্বাস নষ্ট হয়,”—এক তরুণ মন্তব্য করেছেন।

রাজনৈতিক মহলে আশা কমেছে, “শাসনের নামে শুধু ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ, দলের পক্ষপাত ও দেশে সাংগঠনিক বিভাজনই যে বাড়িয়ে তোলা যায়।”

পরবর্তী দৃশ্যপট

বর্তমানে মূল রাজনৈতিক দলগুলোতে চলছে আলোচনা—দেশের স্থিতিশীলতা, নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেনা হুমকি, আন্তর্জাতিক মর্যাদাহানি, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব—এসব মিলে দেশের সার্বিক চিত্র অন্ধকারাচ্ছন্ন।

  • নির্বাচনের চাপ: ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। সেনাসদস্যরা স্পষ্টভাবে বলেছেন, “যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন না হয়, তাহলে ব্যারাকে ফেরে আসা বাধ্যতামূলক হবে।”
  • কূটনৈতিক রূপান্তর জরুরি: বিদেশ সফরের ফলাফল শূন্য হওয়ার পর “দ্বিপাক্ষিক বৈঠকবিহীন কূটনীতির কৌশল অবিলম্বে বদলাতে হবে,” বলছেন প্রজ্ঞাবান কূটনীতিবিদরা।

জনপ্রিয় সমালোচকদের কথায়, “ড. ইউনূসেকের পরবর্তী পদক্ষেপ দেশকে ইতিবাচক পথ দেখাবে কিনা—এটাই আসল মাপকাঠি।”