প্রশিক্ষণে নতুন সংযোজন
চীনের বিমানবাহিনী তাদের পাইলট প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে আকাশপথে জ্বালানি ভরার (এরিয়াল রিফুয়েলিং) অনুশীলন যুক্ত করেছে। পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এই উদ্যোগের মাধ্যমে যুদ্ধ সক্ষমতা এবং দূরপাল্লার অভিযানের ক্ষমতা আরও বাড়াতে চাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশ করে। সেখানে পিএলএ এয়ার ফোর্সের শিজিয়াঝুয়াং ফ্লাইট একাডেমির প্রশিক্ষকদের দুটি জে-১০ যুদ্ধবিমান নিয়ে একটি রিফুয়েলিং মহড়ায় অংশ নিতে দেখা যায়। এ অনুশীলনে সহায়তা করে ইউওয়াই-২০ নামের একটি জ্বালানি ট্যাঙ্কার বিমান।
জে-১০ ও ইউওয়াই-২০: চীনা সামরিক শক্তির প্রতীক
জে-১০ যুদ্ধবিমানকে মার্কিন এফ-১৬-এর সমতুল্য ধরা হয়। এর একটি দুই আসনের সংস্করণ প্রশিক্ষণ ও আঘাতমূলক অভিযানের জন্য ব্যবহার হয়। সম্প্রতি পাকিস্তান এই জে-১০সিই সংস্করণ ব্যবহার করে ভারতীয় ফরাসি নির্মিত রাফাল যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামিয়েছে।
অন্যদিকে ইউওয়াই-২০ ট্যাঙ্কার একটানা ১০০ টন পর্যন্ত জ্বালানি সরবরাহ করতে পারে, যা দীর্ঘপথে অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশিক্ষণ বিস্তারে ধাপে ধাপে পরিকল্পনা
সিসিটিভি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই রিফুয়েলিং প্রশিক্ষণ এখন ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ করা হবে। উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পাইলটদের আরও বাস্তবধর্মী প্রস্তুতি দেওয়া।
সাবেক পিএলএ প্রশিক্ষক সঙ ঝংপিং বলেন, “আগে এই ধরনের অনুশীলন শুধু অভিজ্ঞ ইউনিটগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন এটি শিক্ষানবিশ পাইলটদের প্রশিক্ষণেও যুক্ত হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি বৈশ্বিক কার্যক্ষমতা সম্পন্ন কৌশলগত বিমানবাহিনী গঠনের নতুন দিক উন্মোচিত হলো।”
তিনি আরও বলেন, “এতে পাইলটরা শুরুতেই দূরপাল্লার অভিযানের মানসিকতা গড়ে তুলবে এবং প্রশিক্ষণ শেষ করে খুব অল্প সময়েই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠবে।”
যুদ্ধ কৌশলে রিফুয়েলিং-এর গুরুত্ব
আকাশে জ্বালানি ভরার দক্ষতা একজন যুদ্ধবিমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি যুদ্ধবিমানকে দীর্ঘ সময় আকাশে টিকে থাকার সুযোগ দেয় এবং আঘাত হানার পরিসর বাড়ায়। এছাড়া, এ ধরনের কৌশল অভিন্ন অভিযানের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
রিফুয়েলিং প্রক্রিয়ায় চারটি ধাপ রয়েছে: সাক্ষাৎ, সংযোগ, জ্বালানি সরবরাহ এবং বিচ্ছেদ। পুরো প্রক্রিয়ায় নিখুঁত সমন্বয় এবং কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়, বিশেষ করে যখন বিমানগুলিতে অস্ত্র থাকে।
প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নতুন ধাপ
শিজিয়াঝুয়াং একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক ইউ হংলিয়াং জানান, আগে সীমিত সিমুলেটর সুবিধার কারণে এ ধরনের অনুশীলন সম্ভব ছিল না। তবে তৃতীয় প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ এখন আরও উন্নত হওয়ায় জটিল কৌশলগুলো প্রশিক্ষণে যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণে বাস্তব পরিস্থিতির অনুকরণ এবং নতুন শিক্ষণ কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে শেখার মান আরও উন্নত হয়েছে।”
ইউওয়াই-২০: চীনের নিজস্ব তৈরি বৃহৎ ট্যাঙ্কার
প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত ইউওয়াই-২০ চীনের নিজস্ব নির্মিত প্রথম বৃহৎ এয়ার ট্যাঙ্কার। এটি হোস ও ড্রোগ সিস্টেম ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে অন্য বিমানগুলো মাঝআকাশে জ্বালানি নেয়। এই ট্যাঙ্কার এপ্রিল ও মে মাসে মিশরের সঙ্গে চীনের প্রথম যৌথ মহড়াতেও অংশ নেয়, যা ছিল আফ্রিকায় চীনের সবচেয়ে বড় সামরিক মোতায়েন।
প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন
আগে চীনা পাইলটরা ধাপে ধাপে জে-৮, জে-৯ এবং জে-১০ প্রশিক্ষণ বিমান চালিয়ে অপারেশনাল ইউনিটে প্রশিক্ষণ নিত। কিন্তু এখন সিমুলেটরের ব্যাপক ব্যবহারে প্রশিক্ষণের সময় এক বছর কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
চীনা অ্যারোস্পেস স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, এখনো পিএলএ পাইলটদের মৌলিক প্রশিক্ষণ থেকে সম্মুখ সারিতে যেতে চার বছর সময় লাগে, যেখানে মার্কিন বিমানবাহিনীতে এই সময় মাত্র দুই বছর।
এই প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন চীনের বিমানবাহিনীকে আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে। এতে করে চীনের বৈশ্বিক সামরিক সক্ষমতা আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।