০৬:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

তুরস্কের জেন জেড এরদোয়ানের বিপরীতে যাচ্ছে

২০০৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের শাসনকালে জন্ম-নেয়া কিংবা বড় হওয়া তুর্কি তরুণ-তরুণীরা এখন তাঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের ১৯ মার্চ প্রধান বিরোধী নেতা একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তার ঘিরে লক্ষাধিক স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে। এরপর থেকে বহু শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার, কারাবাস ও গৃহবন্দি অবস্থার মুখোমুখি।

ইমামোগলুর গ্রেপ্তার: তরুণদের জাগরণ

গ্রেপ্তারের দিন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এখনও প্রায় ৩০ জন বিচারকের রায়ের অপেক্ষায় কারাগারে, আর ১২ জন গৃহবন্দি। বড় সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও শহরের রাস্তাঘাট ও ক্যাম্পাসে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অবস্থান কর্মসূচি, বয়কট কিংবা ক্ষুদ্র প্রতিবাদ চলেছে। ১৩ মে মাত্র ছয় শিক্ষার্থী একটি বিতর্কিত ধর্মীয় বক্তার সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই গ্রেপ্তার হন।

ধর্মভীরু প্রজন্ম গড়ার স্বপ্ন ভেস্তে যাচ্ছে

এরদোয়ান বরাবরই “ধার্মিক তরুণ” তৈরি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আজকের জেন জেড (১৮-২৯ বছর) আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম ধর্মীয় অনুশাসনে বিশ্বাসী এবং ক্ষমতাসীন একে পার্টির প্রতি নিরুৎসাহ। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, এই বয়সী ভোটারদের মাত্র ১১ শতাংশ একে পার্টিকে সমর্থন করার কথা বলেছেন। শিক্ষাগ্রহণ, আয়-রোজগার কিংবা ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন আনার সুযোগ—সবকিছুর পথ সরকার দখল করে রেখেছে বলে তরুণদের অভিযোগ। রাজনৈতিক সমাবেশে তারা দলবেঁধে চলে যায়, বক্তাদের ‘চুপ’ করিয়ে দেয়।

 

ভোটের হিসাব ও রাস্তায় প্রতিরোধ

মোট ভোটারদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই এখন জেন জেড। তাদের সোচ্চার উপস্থিতি বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)-কে আরও সাহসী করে তুলেছে। ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর পুলিশের ব্যারিকেড ভেদ করে তরুণদের প্রবল মিছিলে ভয়ের “সীমারেখা ভেঙে” গেছে—এমন মত বিশ্লেষকদের। সপ্তাহজুড়ে গণজমায়েত নিষিদ্ধ থাকলেও দেশের গত এক দশকে দেখা সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ গড়ে ওঠে, যা সরকারের ওপর চাপ বাড়ায় এবং ইমামোগলুর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনতে সরকার পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

দমনপীড়নের নতুন ঢেউ

তবু দমন-পীড়ন থামেনি। ২৬ মে দুর্নীতির অভিযোগে সিএইচপির কয়েকজন পৌর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মে দিবসের কর্মসূচিতে প্রায় ৪০০ জনকে আটক করা হয়। সরকারের আবেদনেই সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি এক্স (সাবেক টুইটার) প্রায় এক কোটি অনুসারীর ইমামোগলুর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়।

বিরোধী শিবিরের হুঁশিয়ারি

সিএইচপির নেতা ওজগুর ওজেল ৪ মে এক কুর্দিশ রাজনীতিকের জানাজায় হামলার শিকার হয়ে বলেন, “এটাই যদি আমাদের ঘরে আটকে রাখার বার্তা হয়—তবে দেখে নিন, আমরাই রাস্তায় থাকব।” বিরোধী শিবির আশাবাদী যে, প্রয়োজনে তারা পুনরায় বিশাল জনসমাগম ঘটাতে পারবে, যদিও গ্রেপ্তার-হয়রানির ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।

সামনে কী?

জেন জেড-এর ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও সামাজিক মিডিয়ার সংগঠিত শক্তি—এ সবই এরদোয়ানের দীর্ঘদিনের ক্ষমতাকে এখন প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বড় সমাবেশে বাধা থাকলেও ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র প্রতিবাদে তরুণেরা দেখিয়ে দিচ্ছে, কণ্ঠরোধ আর সহজ নয়। আসন্ন নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই তরুণ ভোটাররা তুরস্কের রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে—যে সমীকরণ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অটল ছিল।

তুরস্কের জেন জেড এরদোয়ানের বিপরীতে যাচ্ছে

১০:০১:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

২০০৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের শাসনকালে জন্ম-নেয়া কিংবা বড় হওয়া তুর্কি তরুণ-তরুণীরা এখন তাঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের ১৯ মার্চ প্রধান বিরোধী নেতা একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তার ঘিরে লক্ষাধিক স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে। এরপর থেকে বহু শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার, কারাবাস ও গৃহবন্দি অবস্থার মুখোমুখি।

ইমামোগলুর গ্রেপ্তার: তরুণদের জাগরণ

গ্রেপ্তারের দিন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এখনও প্রায় ৩০ জন বিচারকের রায়ের অপেক্ষায় কারাগারে, আর ১২ জন গৃহবন্দি। বড় সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও শহরের রাস্তাঘাট ও ক্যাম্পাসে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অবস্থান কর্মসূচি, বয়কট কিংবা ক্ষুদ্র প্রতিবাদ চলেছে। ১৩ মে মাত্র ছয় শিক্ষার্থী একটি বিতর্কিত ধর্মীয় বক্তার সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই গ্রেপ্তার হন।

ধর্মভীরু প্রজন্ম গড়ার স্বপ্ন ভেস্তে যাচ্ছে

এরদোয়ান বরাবরই “ধার্মিক তরুণ” তৈরি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আজকের জেন জেড (১৮-২৯ বছর) আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম ধর্মীয় অনুশাসনে বিশ্বাসী এবং ক্ষমতাসীন একে পার্টির প্রতি নিরুৎসাহ। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, এই বয়সী ভোটারদের মাত্র ১১ শতাংশ একে পার্টিকে সমর্থন করার কথা বলেছেন। শিক্ষাগ্রহণ, আয়-রোজগার কিংবা ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন আনার সুযোগ—সবকিছুর পথ সরকার দখল করে রেখেছে বলে তরুণদের অভিযোগ। রাজনৈতিক সমাবেশে তারা দলবেঁধে চলে যায়, বক্তাদের ‘চুপ’ করিয়ে দেয়।

 

ভোটের হিসাব ও রাস্তায় প্রতিরোধ

মোট ভোটারদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই এখন জেন জেড। তাদের সোচ্চার উপস্থিতি বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)-কে আরও সাহসী করে তুলেছে। ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর পুলিশের ব্যারিকেড ভেদ করে তরুণদের প্রবল মিছিলে ভয়ের “সীমারেখা ভেঙে” গেছে—এমন মত বিশ্লেষকদের। সপ্তাহজুড়ে গণজমায়েত নিষিদ্ধ থাকলেও দেশের গত এক দশকে দেখা সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ গড়ে ওঠে, যা সরকারের ওপর চাপ বাড়ায় এবং ইমামোগলুর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনতে সরকার পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

দমনপীড়নের নতুন ঢেউ

তবু দমন-পীড়ন থামেনি। ২৬ মে দুর্নীতির অভিযোগে সিএইচপির কয়েকজন পৌর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মে দিবসের কর্মসূচিতে প্রায় ৪০০ জনকে আটক করা হয়। সরকারের আবেদনেই সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি এক্স (সাবেক টুইটার) প্রায় এক কোটি অনুসারীর ইমামোগলুর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়।

বিরোধী শিবিরের হুঁশিয়ারি

সিএইচপির নেতা ওজগুর ওজেল ৪ মে এক কুর্দিশ রাজনীতিকের জানাজায় হামলার শিকার হয়ে বলেন, “এটাই যদি আমাদের ঘরে আটকে রাখার বার্তা হয়—তবে দেখে নিন, আমরাই রাস্তায় থাকব।” বিরোধী শিবির আশাবাদী যে, প্রয়োজনে তারা পুনরায় বিশাল জনসমাগম ঘটাতে পারবে, যদিও গ্রেপ্তার-হয়রানির ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।

সামনে কী?

জেন জেড-এর ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও সামাজিক মিডিয়ার সংগঠিত শক্তি—এ সবই এরদোয়ানের দীর্ঘদিনের ক্ষমতাকে এখন প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বড় সমাবেশে বাধা থাকলেও ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র প্রতিবাদে তরুণেরা দেখিয়ে দিচ্ছে, কণ্ঠরোধ আর সহজ নয়। আসন্ন নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই তরুণ ভোটাররা তুরস্কের রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে—যে সমীকরণ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অটল ছিল।