যাহা হউক, হেষ্টিংস দুই এক স্থান ভিন্ন, অধিকাংশ স্থলেই যে গঙ্গাগোবিন্দের দ্বারা উৎকোচ গ্রহণ করিতেন, তাহার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। যে কয়েকজন দেশীয় লোক হেষ্টিংসের উৎকোচ সংগ্রহে নিযুক্ত ছিল, তন্মধ্যে গঙ্গাগোবিন্দ ও কান্ত বাবুই প্রধান। এই সকল লোকেরা ৯ লক্ষ টাকা উৎকোচ লয়। তন্মধ্যে পীড়াপীড়িতে কোম্পানীর কোষাগারে ৫৪০ লক্ষ প্রদান করার কথা জানা যায়; অবশিষ্ট টাকা হেষ্টিংস ও তাঁহার প্রিয় কর্মচারিগণ কর্তৃক যে আত্মসাৎ হইয়াছিল, তদ্বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকিতে পারে না।
দেশীয় জমিদার ও ইজারদারদিগকে উৎকোচের জন্য আলাতন করিয়া, গঙ্গাগোবিন্দ যে হেষ্টিংস সাহেবের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করিয়া-ছিলেন, ইহার যথাযথ বিবরণ আমরা পূর্ব্বে প্রদান করিয়াছি। উৎকোচ গ্রহণ করিয়া, দিন দিন তাঁহার অর্থলালসা আরও বৃদ্ধি পাইতে থাকে। তাহারই বশবর্তী হইয়া, অবশেষে তাঁহাকে কোম্পানীর রাজস্বেও হস্তক্ষেপ করিতে হয়। পূর্ব্বে যে তিন স্থান হইতে উৎকোচ লওয়ার বিবরণ উল্লিখিত হইয়াছে, সেই তিন স্থান অর্থাৎ দিনাজপুর, পাটনা ও নদীয়ার রাজস্বব্যাপারে দেওয়ানজীর নিকট অনেক টাঁকা পাওনা হইয়াছিল।
কেবল নদীয়ার টাকা তিনি ক্রফটস সাহেবের হস্তে প্রদান করিয়াছেন বলিয়া অবগত হওয়া যায়। কিন্তু দিনাজপুরের হিসাবের ১৭, ৬৬৩ টাকা ও পাটনার ২১,৮০১ টাকা তিনি প্রত্যর্পণ করেন নাই। হেষ্টিংস সাহেব ইহার জন্য গঙ্গাগোবিন্দের কৈফিয়ৎ তলব করিয়াছিলেন। দেওয়ানজী তাহার যে উত্তর প্রদান করেন, তাহাতে হেষ্টিংস সাহেব গন্তোষ লাভ করিতে পারেন নাই বলিয়া প্রকাশ করেন।
গঙ্গা-গোবিন্দের নিকট ঐ সমস্ত টাকা পাওনাও রহস্যময়। কারণ হেষ্টিংস সাহেব যখন জানিতে পারিয়াছিলেন যে, কোম্পানীর হিসাবপত্রে বাস্ত-বিকই গঙ্গাগোবিন্দের নামে যথেষ্ট টাকা পাওনা রহিয়াছে, তখন তিনি কেবল তাঁহার কৈফিয়ৎ তলব করিয়াই ক্ষান্ত হইয়াছিলেনএবং নিজেও যে তাঁহার উত্তরে সন্তুষ্ট হন নাই, তাহাও আমরা বলিয়াছি; তথাপি হোষ্টিংস সাহেব সে টাকা আদায়ের জন্য কখনও গঙ্গাগোবিন্দকে পীড়াপীড়ি করেন নাই।