কোম্পানীর ক্ষতি করিয়া যে গঙ্গাগোবিন্দ রাজস্বের অর্থও আত্মসাৎ করিয়াছিলেন, সেই গঙ্গাগোবিন্দের নিকট হইতে স্বয়ং গভর্ণর জেনারেল তাহা আদায়ের চেষ্টা করেন নাই কেন? সুতরাং সে বিষয়েও যে গঙ্গাগোবিন্দের সহিত তাঁহার বিশেষরূপ সম্বন্ধ ছিল, এ কথা বলা নিতান্ত অযৌক্তিক বলিয়া বোধ হয় না। এইরূপে যখন সকল দিক্ হইতেই তাঁহার অর্থলালসা পরিতৃপ্তির চেষ্টা হইতে লাগিল, তখন দিন দিন গঙ্গাগোবিন্দ সাধারণের চক্ষে অত্যন্ত হেয় হইয়া উঠিলেন। যেমন উৎকোচগ্রহণ ব্যাপারে দেশীয় জমিদার ও প্রজাগণ তাঁহাকে ভীতির চক্ষে দেখিত, তেমনি ইউয়োপীয়-গণ তাঁহাকে আন্তরিক ঘৃণা করিতেন। বিশেষতঃ কোম্পানীর রাজস্ববিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় গঙ্গাগোবিন্দের প্রতি তাঁহাদের ঘৃণা বদ্ধমূল হয়।
রাজস্বসমিতির সভ্যেরা সাহস করিয়া তাঁহার ‘বিরুদ্ধে কোন কথা বলিতে পারিতেন না। কারণ গবর্ণর জেনারেলকে ভয় করিয়া সকলকেই চলিতে হইত এবং গবর্ণর জেনারেলের সাহসেই গঙ্গাগোবিন্দ এই সমস্ত গুরুতর কার্য্য অনায়াসে সম্পন্ন করিতেন। গঙ্গাগোবিন্দের এই সমস্ত অত্যাচারের কথা হেষ্টিংসের বিচারসময়ে সেই বিশাল ওয়েস্টমিনিষ্টার হলে সমবেত ব্রিটিশ জাতির সমক্ষে কোম্পানীর কর্মচারিগণ অবিচলিত-চিত্তে সাক্ষ্য প্রদান করিয়া-ছিলেন। তাঁহাদের সাক্ষ্যে অবিশ্বাস করিবার কোন কারণ নাই।
গঙ্গা-গোবিন্দের অত্যাচার কিরূপ ভাবে বিস্তৃত হইয়াছিল, সেই সমক্ত সাক্ষ্য হইতে তাহা বেশ বুঝা যায়। ইয়ং মুর প্রভৃতি স্পষ্টাক্ষরে গঙ্গাগোবিন্দের অত্যাচারের উল্লেখ করিয়া সমস্ত ব্রিটিশ জাতির প্রতিনিধির সমক্ষে তাঁহার চরিত্রের কালিমাময় চিত্র পূর্ণভাবে প্রদান করিয়াছেন, যদিও গঙ্গাগোবিন্দের অত্যাচারে লোকে অত্যন্ত উৎপীড়িত হইয়া-ছিল, তথাপি হেষ্টিংস সাহেব তাঁহার সমস্ত দোষ আচ্ছাদন করিয়া রাখায় এবং তাঁহার সমস্ত কার্য্যের সমর্থন করায়, কেহ তাঁহার বিরুদ্ধে বাঙনিষ্পত্তি করিতে পারিত না।
যেখানে তাঁহাকে লইয়া পীড়াপীড়ি উপস্থিত হইত, সেইখানে হেষ্টিংস সাহেব স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া সমস্ত গোলযোগ মিটাইয়া দিতেন। গবর্ণর জেনারেলের জন্য তাঁহার অত্যাচার জনসাধারণের গোচরীভূত হইত না। কেবল যাহারা সেই অত্যাচার ভোগ করিত, তাহারাই তাঁহাকে বিশেষরূপে চিনিত। পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, অত্যাচারের জন্য গঙ্গাগোবিন্দ একবার পদচ্যুত হইয়াছিলেন। এই পদচ্যুতি ঘটিবার পূর্ব্বে তাঁহার উৎকোচ গ্রহণব্যাপার লইয়া এক গোলযোগ উপস্থিত হয়। কিন্তু হেষ্টিংস সাহেবের মধ্যস্থতায় তিনি সে যাত্রা নিষ্কৃতি পান।