০২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩১৭)

সভাতে নদীয়ার ও নাটোরের ব্রাহ্মণরাজকে শ্রেষ্ঠ আসন দেওয়া হইয়াছিলা, তৎপরে বর্দ্ধমান, দিনাজপুর, তাহার পর যশোহরের ও পাটুলীর মহাশয়দিগের আসন স্থাপন করা হয়। গঙ্গা-গোবিন্দ এই শ্রাদ্ধের সময়, অল্পকালস্থায়ী বৃহৎ বৃহৎ অনেক বাটী নির্মাণ করিয়া, নিমন্ত্রিতগণের জন্তী বাসস্থান নির্দেশ করিয়া দেন। শত শত মণ সিধা প্রতিনিয়ত বিতরিত হইত। চাউল প্রভৃতি পর্ব্বতের ন্যায় স্তূপাকারে অবস্থিতি করিত। পুষ্করিণীর ন্যায় চৌবাচ্চা খনন করিয়া তাহাতে তৈল, ঘুতাদি রক্ষিত হইয়াছিল।

নানাবিধ মিষ্টান্নে ব্রাহ্মণ ও ‘ভিক্ষুকদিগকে পরিতৃপ্ত করিয়া, তাহাদিগকে আশাতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়। কথিত আছে যে, পুরীধাম হইতে জগন্নাথদেবের স্যঃ প্রসাদ আনাইয়া এই সময়ে ব্রাহ্মণভোজন করান হইয়াছিল। ফলতঃ এরূপ বিরাট্ শ্রাদ্ধ তৎকালে কেহ সম্পন্ন করিতে পারেন নাই বলিয়া প্রবাদ আছে। এই শ্রাদ্ধের সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পীড়িত ছিলেন; তজ্জন্য তিনি শ্রাদ্ধসভায় উপস্থিত হইতে পারেন নাই।

কৃষ্ণচন্দ্র জ্যেষ্ঠপুত্র শিবচন্দ্রকে গঙ্গাগোবিন্দের, মাতৃশ্রাদ্ধে গমন করিতে বলেন। শিবচন্দ্র প্রথমে স্বীকৃত হন নাই। পরে রাজা, গঙ্গাগোবিন্দের অপরিসীম ক্ষমতার উল্লেখ করিয়া তাঁহাকে উপদেশ দিলে, তিনি অনেক লোকজন লইয়া কান্দীতে উপস্থিত হন। শিবচন্দ্র উপস্থিত হইলে, স্তূপাকার সিধা তাঁহার নিকট প্রেরিত হয়। শিবচন্দ্র দেওয়ানজীর ভাণ্ডারসঞ্চিতদ্রব্যাদির পরীক্ষার জন্য সে সমস্তই ভিক্ষুকদিগের মধ্যে বিতরণ করিয়া দেন।

দেওয়ানজী দ্বিতীয়বার সেইরূপ সিধা পাঠাইলেন, শিবচন্দ্র সেবারও বিতরণ করিয়া নিলেন। তৃতীয়বার যখন গাড়ীগাড়ী দ্রব্য উপস্থিত হইতে লাগিল, তখন শিবচন্দ্র আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়া উঠিলেন। কথিত আছে যে, কেবল ৪ গাড়ী হরিদ্রাই প্রেরিত হইয়াছিল। শিবচন্দ্র বহুজনাকীর্ণ সভামধ্যে দেওয়ান-জীকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছিলেন, দেওয়ানজী, এ যে দেখিতেছি দক্ষযজ্ঞের আয়োজন! দেওয়ানজী উত্তর করিলেন,- ইহা তদপেক্ষাও অধিক; কারণ দক্ষযজ্ঞে শিবের আগমন হয় নাই; এখানে স্বয়ং শিবই উপস্থিত। তাহার পর শিবচন্দ্র নিজেই কোমর বাঁধিয়া দেওয়ান-জীর মাতৃশ্রাদ্ধে কাৰ্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন বলিয়া এতদঞ্চলে প্রবাদ আছে।

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩১৭)

১১:০০:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

সভাতে নদীয়ার ও নাটোরের ব্রাহ্মণরাজকে শ্রেষ্ঠ আসন দেওয়া হইয়াছিলা, তৎপরে বর্দ্ধমান, দিনাজপুর, তাহার পর যশোহরের ও পাটুলীর মহাশয়দিগের আসন স্থাপন করা হয়। গঙ্গা-গোবিন্দ এই শ্রাদ্ধের সময়, অল্পকালস্থায়ী বৃহৎ বৃহৎ অনেক বাটী নির্মাণ করিয়া, নিমন্ত্রিতগণের জন্তী বাসস্থান নির্দেশ করিয়া দেন। শত শত মণ সিধা প্রতিনিয়ত বিতরিত হইত। চাউল প্রভৃতি পর্ব্বতের ন্যায় স্তূপাকারে অবস্থিতি করিত। পুষ্করিণীর ন্যায় চৌবাচ্চা খনন করিয়া তাহাতে তৈল, ঘুতাদি রক্ষিত হইয়াছিল।

নানাবিধ মিষ্টান্নে ব্রাহ্মণ ও ‘ভিক্ষুকদিগকে পরিতৃপ্ত করিয়া, তাহাদিগকে আশাতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়। কথিত আছে যে, পুরীধাম হইতে জগন্নাথদেবের স্যঃ প্রসাদ আনাইয়া এই সময়ে ব্রাহ্মণভোজন করান হইয়াছিল। ফলতঃ এরূপ বিরাট্ শ্রাদ্ধ তৎকালে কেহ সম্পন্ন করিতে পারেন নাই বলিয়া প্রবাদ আছে। এই শ্রাদ্ধের সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র পীড়িত ছিলেন; তজ্জন্য তিনি শ্রাদ্ধসভায় উপস্থিত হইতে পারেন নাই।

কৃষ্ণচন্দ্র জ্যেষ্ঠপুত্র শিবচন্দ্রকে গঙ্গাগোবিন্দের, মাতৃশ্রাদ্ধে গমন করিতে বলেন। শিবচন্দ্র প্রথমে স্বীকৃত হন নাই। পরে রাজা, গঙ্গাগোবিন্দের অপরিসীম ক্ষমতার উল্লেখ করিয়া তাঁহাকে উপদেশ দিলে, তিনি অনেক লোকজন লইয়া কান্দীতে উপস্থিত হন। শিবচন্দ্র উপস্থিত হইলে, স্তূপাকার সিধা তাঁহার নিকট প্রেরিত হয়। শিবচন্দ্র দেওয়ানজীর ভাণ্ডারসঞ্চিতদ্রব্যাদির পরীক্ষার জন্য সে সমস্তই ভিক্ষুকদিগের মধ্যে বিতরণ করিয়া দেন।

দেওয়ানজী দ্বিতীয়বার সেইরূপ সিধা পাঠাইলেন, শিবচন্দ্র সেবারও বিতরণ করিয়া নিলেন। তৃতীয়বার যখন গাড়ীগাড়ী দ্রব্য উপস্থিত হইতে লাগিল, তখন শিবচন্দ্র আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়া উঠিলেন। কথিত আছে যে, কেবল ৪ গাড়ী হরিদ্রাই প্রেরিত হইয়াছিল। শিবচন্দ্র বহুজনাকীর্ণ সভামধ্যে দেওয়ান-জীকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছিলেন, দেওয়ানজী, এ যে দেখিতেছি দক্ষযজ্ঞের আয়োজন! দেওয়ানজী উত্তর করিলেন,- ইহা তদপেক্ষাও অধিক; কারণ দক্ষযজ্ঞে শিবের আগমন হয় নাই; এখানে স্বয়ং শিবই উপস্থিত। তাহার পর শিবচন্দ্র নিজেই কোমর বাঁধিয়া দেওয়ান-জীর মাতৃশ্রাদ্ধে কাৰ্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন বলিয়া এতদঞ্চলে প্রবাদ আছে।