০২:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

পর্ব ৫: ভিসা প্রত্যাখ্যানের বাস্তবতা

ভিসা প্রত্যাখ্যান থেকে অভিবাসন স্বপ্নভঙ্গ

  • ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রায় ৫০% কমে গেছে গত বছরের তুলনায়। কারণ বাজেট ঘাটতি, সরকারি আয়ের সংকট, আর রাজস্ব আদায়ের ধীরগতি।
  • বেসরকারি চাকরির বাজারেও অবস্থা ভালো নয়: বিশেষ করে পোশাক শিল্প, ব্যাংকিং, আর টেলিকম সেক্টরে পদ সংখ্যা কমে গেছে বাজার সঙ্কটের কারণে।
  • অনলাইন পোর্টাল ‘চাকুরিজনক’ জানায়, গত জুন মাসে সরকারি চাকরির জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় লাখ, কিন্তু পদ সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার। আবেদনকারী প্রতি এক পদে প্রায় ৩০ জন প্রতিযোগী।

বিদেশে চাকরির স্বপ্নভিসা প্রত্যাখ্যানের লড়াই

  • ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের H-1B চুক্তিভিত্তিক ভিসার জন্য বাংলাদেশের আবেদন সংখ্যাও হ্রাস পায়। ৫৫% আবেদন প্রত্যাখ্যান হয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে।

বাংলাদেশকে ৫০ লাখ ইউরো দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদস্য দেশগুলোও শিক্ষার্থী ভিসায় কঠোরতা এনেছে। ৫০% আবেদনকারীকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ আর্থিক ও নিরাপত্তা বিষয়েই সন্দেহ দেখায়। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে গেছে, অথবা অনিশ্চিত সময় আটকে আছে যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্য দেশে।
  • উচ্চশিক্ষার ভিসা প্রত্যাখ্যান এবং কর্মভিসা সীমিত হওয়ায় বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে মনোরোগ-উদ্বেগ বেড়েছে। অনেকে এখনই ভার্চুয়াল অথবা রিমোট কাজের দিকে ঝুঁকছে, কিন্তু তারা সারা রাত সুবিধাজনক ইন্টারনেট না থাকায়, বা প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান: টেকসই সমাধান কী?

  • সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি: কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সহমত প্রকাশ করেছে, “শিক্ষার্থীদেরকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, বিদেশি ভাষা শিক্ষা—এসব দক্ষতায় প্রশিক্ষণ দিয়ে রিমোট কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে।” কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে জমকালো ঘোষণা ছাড়া কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
  • বেসরকারি উদ্যোগ: কিছু উদ্যোক্তা তরুণদেরকে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে নজর রাখতে শেখাচ্ছে, বিশেষ করে Upwork, Fiverr প্রভৃতি সাইটে প্রোফাইল তৈরি ও প্রজেক্ট নেওয়া। রাজধানীর কয়েকটি আইটি হাব ভার্চুয়াল টিম গঠন করে: ১০ জন তরুণ শিক্ষার্থীর মাঝে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে অনেকেই পুরোপুরি দক্ষ না হওয়ায় বাজারে স্থায়ীভাবে জায়গা করতে পারছে না।
  • বিদেশি সহায়তা: নজরুল সেন্টার ফর স্টুডেন্ট সার্ভিসেস-এর উদ্যোগে সামান্য ছেঁয়ে পড়ার মতো নয়, বরং “স্টার্টআপ ভিসা” পদ্ধতি চালু করে তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার সহযোগিতায়।

নিয়োগ পরীক্ষার খরচ কেন বেকার চাকরি প্রার্থীদের বহন করতে হবে?

বাস্তবতা ও করণীয়

চাকরির প্রত্যাশা কতটুকু বাস্তবসম্মত?

  • সরকারি চাকরি এখন আর স্বপ্নের পাখির মতো যাদের খোঁজেন, তাদের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু পদ সংখ্যা কম। বিজ্ঞাপনে আবেদন সত্বেও, অনেকে প্রথম ধাপেই অযোগ্য হিসেবে খারিজ হচ্ছে। বেসরকারি খাতেও বড় সেক্টর যেমন—পোশাক, ব্যাংকিং, রফতানিকারী শিল্প—সবই প্রভাবিত হওয়ায়, চাকরির পরীক্ষা প্যানেলগুলোও স্থগিত হয়ে গেছে; অনেকেই কোভিড-পরবর্তী পুনর্গঠন পর্যায়ের চেয়েও খারাপ অবস্থায় ফিরে গেছে।

ভিসা প্রত্যাখ্যানবেকারত্বের বাইরে পাওয়ার একেকটি ভিন্ন ভয়

  • বিদেশে চাকরি কিংবা উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যাচ্ছে। যে শিক্ষার্থী পরিবার ও ঋণের বোঝা নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, তারা এখন দিশাহারা। ইউরোপ-আমেরিকা ছেঁকে দেওয়ার পরিস্থিতি চাকরিতে পরিণত হয়ে নতুন সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

সমাধানের সূচনাদক্ষতার বিকাশ ও উদ্যোগ

  • সরকারের উচিত আইসিটি, ডিজিটাল অর্থনীতি, গ্রিন এনার্জি সেক্টরে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কারিকুলামে সফটওয়্যার, ই-কমার্স, অটোমেশন, জলবায়ু-প্রতিরোধ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা।

De Dónde Viene el Símbolo del Dólar ($)? | N+

  • উদ্যোক্তাদের জন্য ভর্তুকিপূর্ণ ঋণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর মতো আইটি প্রযুক্তি পার্ক প্রতিষ্ঠা করে তরুণদের স্টার্টআপ গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে।
  • আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বিদেশি দাতা সংস্থা ও দাতা সংস্থা দেখছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বরাবরই সমস্যা হয়েছে।

সমাজে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ পুনর্গঠন

  • “আত্মবিকাশ” কিংবা “ঊর্ধ্বগামী” সহায়তার সুযোগ-সুবিধা থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অরাজকতা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি—এসব ক্রিয়াকলাপ থেকে মুক্তি মিলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে সৎ পেশার বিকল্প থাকলে, অশুভ শক্তি অনেকখানি হ্রাস পাবে।
  • প্রয়োজনে শিক্ষা নীতি মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসন মিলে হাইস্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে নিউজ ক্লাব, ড্রাম সার্কেল, স্পোর্টস টুর্নামেন্ট—এগুলো চালু করে সামাজিক সংহতি বাড়াতে হবে।

পর্ব ৫: ভিসা প্রত্যাখ্যানের বাস্তবতা

০২:০০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

ভিসা প্রত্যাখ্যান থেকে অভিবাসন স্বপ্নভঙ্গ

  • ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রায় ৫০% কমে গেছে গত বছরের তুলনায়। কারণ বাজেট ঘাটতি, সরকারি আয়ের সংকট, আর রাজস্ব আদায়ের ধীরগতি।
  • বেসরকারি চাকরির বাজারেও অবস্থা ভালো নয়: বিশেষ করে পোশাক শিল্প, ব্যাংকিং, আর টেলিকম সেক্টরে পদ সংখ্যা কমে গেছে বাজার সঙ্কটের কারণে।
  • অনলাইন পোর্টাল ‘চাকুরিজনক’ জানায়, গত জুন মাসে সরকারি চাকরির জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় লাখ, কিন্তু পদ সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার। আবেদনকারী প্রতি এক পদে প্রায় ৩০ জন প্রতিযোগী।

বিদেশে চাকরির স্বপ্নভিসা প্রত্যাখ্যানের লড়াই

  • ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের H-1B চুক্তিভিত্তিক ভিসার জন্য বাংলাদেশের আবেদন সংখ্যাও হ্রাস পায়। ৫৫% আবেদন প্রত্যাখ্যান হয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে।

বাংলাদেশকে ৫০ লাখ ইউরো দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদস্য দেশগুলোও শিক্ষার্থী ভিসায় কঠোরতা এনেছে। ৫০% আবেদনকারীকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ আর্থিক ও নিরাপত্তা বিষয়েই সন্দেহ দেখায়। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে গেছে, অথবা অনিশ্চিত সময় আটকে আছে যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্য দেশে।
  • উচ্চশিক্ষার ভিসা প্রত্যাখ্যান এবং কর্মভিসা সীমিত হওয়ায় বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে মনোরোগ-উদ্বেগ বেড়েছে। অনেকে এখনই ভার্চুয়াল অথবা রিমোট কাজের দিকে ঝুঁকছে, কিন্তু তারা সারা রাত সুবিধাজনক ইন্টারনেট না থাকায়, বা প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান: টেকসই সমাধান কী?

  • সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি: কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সহমত প্রকাশ করেছে, “শিক্ষার্থীদেরকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, বিদেশি ভাষা শিক্ষা—এসব দক্ষতায় প্রশিক্ষণ দিয়ে রিমোট কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে।” কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে জমকালো ঘোষণা ছাড়া কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
  • বেসরকারি উদ্যোগ: কিছু উদ্যোক্তা তরুণদেরকে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে নজর রাখতে শেখাচ্ছে, বিশেষ করে Upwork, Fiverr প্রভৃতি সাইটে প্রোফাইল তৈরি ও প্রজেক্ট নেওয়া। রাজধানীর কয়েকটি আইটি হাব ভার্চুয়াল টিম গঠন করে: ১০ জন তরুণ শিক্ষার্থীর মাঝে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে অনেকেই পুরোপুরি দক্ষ না হওয়ায় বাজারে স্থায়ীভাবে জায়গা করতে পারছে না।
  • বিদেশি সহায়তা: নজরুল সেন্টার ফর স্টুডেন্ট সার্ভিসেস-এর উদ্যোগে সামান্য ছেঁয়ে পড়ার মতো নয়, বরং “স্টার্টআপ ভিসা” পদ্ধতি চালু করে তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থার সহযোগিতায়।

নিয়োগ পরীক্ষার খরচ কেন বেকার চাকরি প্রার্থীদের বহন করতে হবে?

বাস্তবতা ও করণীয়

চাকরির প্রত্যাশা কতটুকু বাস্তবসম্মত?

  • সরকারি চাকরি এখন আর স্বপ্নের পাখির মতো যাদের খোঁজেন, তাদের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু পদ সংখ্যা কম। বিজ্ঞাপনে আবেদন সত্বেও, অনেকে প্রথম ধাপেই অযোগ্য হিসেবে খারিজ হচ্ছে। বেসরকারি খাতেও বড় সেক্টর যেমন—পোশাক, ব্যাংকিং, রফতানিকারী শিল্প—সবই প্রভাবিত হওয়ায়, চাকরির পরীক্ষা প্যানেলগুলোও স্থগিত হয়ে গেছে; অনেকেই কোভিড-পরবর্তী পুনর্গঠন পর্যায়ের চেয়েও খারাপ অবস্থায় ফিরে গেছে।

ভিসা প্রত্যাখ্যানবেকারত্বের বাইরে পাওয়ার একেকটি ভিন্ন ভয়

  • বিদেশে চাকরি কিংবা উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যাচ্ছে। যে শিক্ষার্থী পরিবার ও ঋণের বোঝা নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, তারা এখন দিশাহারা। ইউরোপ-আমেরিকা ছেঁকে দেওয়ার পরিস্থিতি চাকরিতে পরিণত হয়ে নতুন সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

সমাধানের সূচনাদক্ষতার বিকাশ ও উদ্যোগ

  • সরকারের উচিত আইসিটি, ডিজিটাল অর্থনীতি, গ্রিন এনার্জি সেক্টরে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কারিকুলামে সফটওয়্যার, ই-কমার্স, অটোমেশন, জলবায়ু-প্রতিরোধ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা।

De Dónde Viene el Símbolo del Dólar ($)? | N+

  • উদ্যোক্তাদের জন্য ভর্তুকিপূর্ণ ঋণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর মতো আইটি প্রযুক্তি পার্ক প্রতিষ্ঠা করে তরুণদের স্টার্টআপ গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে।
  • আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বিদেশি দাতা সংস্থা ও দাতা সংস্থা দেখছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বরাবরই সমস্যা হয়েছে।

সমাজে শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ পুনর্গঠন

  • “আত্মবিকাশ” কিংবা “ঊর্ধ্বগামী” সহায়তার সুযোগ-সুবিধা থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অরাজকতা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি—এসব ক্রিয়াকলাপ থেকে মুক্তি মিলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে সৎ পেশার বিকল্প থাকলে, অশুভ শক্তি অনেকখানি হ্রাস পাবে।
  • প্রয়োজনে শিক্ষা নীতি মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসন মিলে হাইস্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে নিউজ ক্লাব, ড্রাম সার্কেল, স্পোর্টস টুর্নামেন্ট—এগুলো চালু করে সামাজিক সংহতি বাড়াতে হবে।