“আমরা সকল কাজেই পরের প্রত্যাশা করি, অথচ পরের ক্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে থাকি; পরের অনুকরণ আমাদের গর্ব, পরের অনুগ্রহ আমাদের সম্মান; পরের চক্ষে ধূলি নিক্ষেপ করিয়া আমাদের পলিটিকস, এবং নিজের বাকচাতুর্যে নিজের প্রতি বিহ্বল হইয়া ওঠাই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। এই দুর্বল, ক্ষুদ্র, হৃদয়হীন, কর্মহীন, দাম্ভিক, তার্কিক জাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের এক সুগভীর ধিক্কার ছিল। কারণ, তিনি সর্ব বিষয়ে ইহার বিপরীত ছিলেন। বৃহৎ বনস্পতি যেমন ক্ষুদ্র বনজঙ্গলের পরিবেষ্টন হইতে ক্রমেই শূন্য আকাশে মস্তক তুলিয়া উঠে, বিদ্যাসাগর সেইরূপ বয়োবৃদ্ধি-সহকারে বঙ্গসমাজের সমস্ত অস্বস্তিকর ক্ষুদ্রতার জাল হইতে ক্রমশই শব্দহীন সুদূর নির্জনে উত্থান করিয়াছিলেন; সেখান হইতে তাপিতকে ছায়া এবং ক্ষুধিতকে ফল দান করিতেন।”
বাঙালির মতো শঠ, পরশ্রীকাতর, অন্তঃসারশূন্য জাতির মধ্যে শুধু বিদ্যাসাগর নয়— এমন অনেক বনস্পতি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। একটা সময় তাঁদেরও একটি প্রবল বন্যা বয়েছিল। কিন্তু সেই বন্যাস্রোতের মধ্যে না গিয়েও একেবারে কূলে দাঁড়িয়ে যে বিরাট বনস্পতিদের দেখা যায়: তাঁরা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এই দীর্ঘকায়, বিশাল আকৃতির বনস্পতিদের নিচে শঠ, খর্বাকৃত, লোভী, প্রতারক বাঙালি জাতি নিতান্তই আগাছা মাত্র। বিদ্যাসাগর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকেই এ লেখার শুরুতে উল্লেখ করেছি। এর পরে বেশ কয়েকজনকে ডিঙিয়ে দু-এক কথা বলতে চাই কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কে। যাঁরা কাজী নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন— শৈলজানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, অচিন্ত কুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন মিত্রের স্মৃতিতে কাজী নজরুল ইসলামকে জেনেছেন— তাঁরা সকলেই যদি নিজেকে সাগরের কূলে বসা আত্মস্বার্থত্যাগী মানুষের মন নিয়ে চিন্তা করেন, একবাক্যে বলবেন: বাঙালির মধ্যে সর্বোচ্চ অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি কাজী নজরুল ইসলাম। আর যে যত বেশি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক, সে তত দীর্ঘ মানবসন্তান। নজরুলের সেই দৈর্ঘ্য মাপার ক্ষমতা এই খর্বাকৃত, আকণ্ঠ স্বার্থে ভরপুর ও ধর্মব্যবসায়ী বাঙালির অতীতেও ছিল না, বর্তমানেও নেই। সে কারণেই, বাঙালির বৃহৎ বনস্পতিদের মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলামই সবচেয়ে নিঃসঙ্গ ও অবহেলিত। সত্য অর্থে হাতে গোনা কয়েকজন আধুনিক বাঙালি মুসলিম ও আধুনিক বাঙালি হিন্দু ছাড়া কেউই তাঁকে আপন করে, বা প্রকৃত নজরুলকে গ্রহণ করেননি।
নজরুলের পরে তাঁরই সমসাময়িক সুভাষ চন্দ্র বসু। বলা যেতে পারে, রাজনীতির কলুষতার বাইরে সত্য অর্থে দেশপ্রেমিক যে বীর মাঝে মাঝে কোনো জাতিতে জন্মায়, সুভাষ বসু সেই বীর— দীর্ঘ দেহ নিয়ে খর্বাকৃত বাঙালি জাতির মধ্যে জন্মেছিলেন। রাজনীতির কুটিলতায় তিনি একজন পরাজিত পুরুষ; কিন্তু সাধারণত খুব কম জাতিতে বীর জন্মে— যে বীর কোনো গোপন ষড়যন্ত্র নয়, যুদ্ধ করে নিজের দেশকে শত্রুমুক্ত করতে চায় এবং তার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ও বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত অতি সহজে নেয়। সুভাষ চন্দ্র বসু বাঙালির সেই বীর, যদিও তিনি নিজেকে সর্বভারতীয় বলেই জানতেন। আর এও সত্য, বাঙালি এককভাবে তাঁকে কখনও গ্রহণ করেনি। বরং বাঙালি তার নিচ স্বভাব অনুযায়ী যতটা নোংরামি করা যায় সুভাষ বসুকে নিয়ে, তার প্রায় সবটুকু করেছিল। তারপরেও ইতিহাসে তিনি ইকারাসের ডানা বা আলবাট্রসের ডানা নিয়ে আগুন ও ঝড়ের মাঝে বিজয়ের চূড়ায় পৌঁছাতে রূপকথার নায়ককেও হার মানিয়েছিলেন।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন সুভাষের গুরুই শুধু নয়, বাঙালি ও ভারতবর্ষের সবচেয়ে ধীর-স্থির ও বাস্তববাদী রাজনীতিবিদ। তিনিও সকল বাঙালির নিরঙ্কুশ সমর্থন পাননি। তারপরেও তিনি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর এক ধরনের আত্মকেন্দ্রিক ও ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিকে কোণঠাসা করে স্বরাজ পার্টির মাধ্যমে একটি আধুনিক রাজনীতির জন্ম দিতে শুরু করেছিলেন, যেখানে শঠতাকে তিনি দূরে রাখার জন্য শত হাতে চেষ্টা করেছিলেন। স্বার্থান্বেষীদের চাপে ও নিজের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার কারণে স্বল্পদৈর্ঘ্য জীবনের পরিসমাপ্তির মধ্য দিয়ে ভারতের ও বাঙালির একটি স্বচ্ছ রাজনীতির অধ্যায় শেষ হয়ে যায়।
বাঙালির স্বল্পায়ু জীবনের তিন রাজনীতিক ও বীর— দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান— সম্পর্কে আরও কয়েকটি লাইন লেখার চেষ্টার আগে বাঙালি জাতির মনন ও মানবিক সত্তা, সর্বোপরি তার চিন্তার রাজ্যকে অনাদিকালের দিগন্তরেখায় পৌঁছে দেওয়া রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এমন ক্ষুদ্র পরিসরে বলার চেষ্টা করা উচিত নয়। তবে শুধু এতটুকু বলা যায়, ভারতের কমপক্ষে বিশ থেকে পঁচিশ হাজার বছরের সভ্যতার নির্যাস, চায়না, মধ্যপ্রাচ্য ও গ্রিসের অন্তত পাঁচ থেকে সাত হাজার বছরের সভ্যতার নির্যাস— সর্বোপরি আধুনিক পশ্চিমকে পরিপূর্ণ রূপে গ্রহণ করে বাঙালির ঘরে যে আধুনিক বিশ্বচিন্তার আলোটি জ্বলেছিল, সে আলো আকাশের রবির মতোই মাটির রবীন্দ্রনাথ জ্বালিয়েছিলেন। তিনি যা রেখে গেছেন, এই স্বার্থপর, পরশ্রীকাতর, লোভী, নিষ্ঠুর বাঙালি যদি কোনো দিন মানুষ হয়— তাহলে রবীন্দ্রনাথে ভর করে তার ওপর দাঁড়িয়ে বর্তমানকে গ্রহণ করে বাঙালি বিশ্বসভায় দাঁড়াতে পারবে। আর এ কারণেই অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বিবিসি জরিপের বিপরীতে জ্ঞানের পাথরের ওপর শক্ত পা রেখে বলেছিলেন, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি রবীন্দ্রনাথ।’
আর এই রবীন্দ্রনাথই রামমোহন রায় সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘রামমোহন রায়, আহা, আজ যদি তুমি বাঁচিয়া থাকিতে! তোমাকে বঙ্গদেশে বড়ই আবশ্যক হইয়াছে। আমরা বাকপটু লোক, আমাদিগকে তুমি কাজ করিতে শিখাও। আমরা আত্মম্ভরী, আমাদেরকে আত্মবিসর্জন দিতে শিখাও। আমরা লঘু প্রকৃতি, বিপ্লবের স্রোতে চরিত্রগৌরবের প্রভাবে আমাদিগকে অটল থাকিতে শিখাও। আমরা বাহিরের আলোতে অন্ধ, হৃদয়ের অভ্যন্তরস্থ চিরোজ্জ্বল আলোকের সাহায্যে ভালোমন্দ নির্বাচন করিতে ও স্বদেশের পক্ষে যাহা স্থায়ী ও যথার্থ মঙ্গল তাহাই অবলম্বন করিতে শিক্ষা দাও।’
রবীন্দ্রনাথ রামমোহনের প্রয়োজনীয়তা অনেকটা কায়মনোবাক্যে চেয়েছিলেন আজ থেকে ১৪১ বছর আগে। অথচ বাঙালির একটি অংশ, বিশেষ করে পূর্ববাংলার বাঙালির বিপ্লবের স্রোতে চরিত্রগৌরবের প্রভাবে অটল থাকার প্রয়োজন ছিল আজ থেকে ৫৪ বছর আগে— ১৯৭১-এ, যখন মুক্তিসংগ্রামকে বিপ্লবে রূপান্তরিত করে বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি বিপ্লবোত্তর স্বাধীন দেশ গঠন করেছিল- সেই সময়ে। বাঙালি তার চরিত্রের সেই গৌরবের প্রভাবে অটল থাকা তো দূরের কথা, নিজের চরিত্রকেই তখন ধরে রাখতে পারেনি। যার মূল্য দিতে হয়েছিল বিপ্লবের নেতা বঙ্গবন্ধুকে— ৫৫ বছর বয়সে পা দিতেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জীবন দিয়ে। আর এখানেই বাঙালির এক অদ্ভুত যোগ: বাঙালির তিনজন রাজনীতি থেকে আসা বীর— দেশবন্ধু, নেতাজি ও বঙ্গবন্ধু— কেউই দীর্ঘ জীবন পাননি; আর এই দীর্ঘ জীবন না পাওয়ার পেছনে বাঙালির চরিত্রের দায়টি বড় ভূমিকা রাখে।
শুধু তাই নয়, দেশবন্ধুকে এই বাঙালির কাছে গান্ধী-বিরোধী হিসেবে গালি শুনতে হয়েছে। নব্বইয়ের দশক অবধি সুভাষ বসুকে সাধারণ বাঙালি নয়, জ্যোতি বসুও উচ্চ কণ্ঠে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেছেন। ঠিক তেমনি অনেক বাঙালি হিন্দু এখনও বিশ্বাস করে, বঙ্গবন্ধু কলকাতার দাঙ্গায় জড়িত ছিলেন তাঁর নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে। অথচ ‘চরমপত্র’-এর পাঠক ও লেখক এম. আর. আখতার মুকুলের ভাষায় বলতে হয়, ওই সব বাঙালি লেজ তুলে দেখে না আসলে এটা খাসি না মেয়ে ছাগল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কোনো দুধওয়ালা, বেণে বা হাপরটানা কর্মকার বা নাম-গোত্রহীন কোনো পরিবার থেকে আসেননি; তাঁদের কয়েক পুরুষের নাম লেখা আছে কলকাতার সুপ্রিম কোর্ট থেকে গার্ডিয়ান, টাইমস এবং তৎকালীন বিখ্যাত ল্যঁমদ পত্রিকায়। তাই সেই পরিবারে একজন সাম্প্রদায়িক মানুষ জন্ম নেবে— এমনটি ভাবা কতটা নিচুতা, তা না বলাই ভালো। আর সোহরাওয়ার্দীর যে অর্থের প্রতি আসক্তি কত কম ছিল, তা তাঁর ছেলের কয়েকটি চিঠি পড়লেই বাঙালি জানতে পারবে। বরং বাস্তবতা হলো, ‘ক্যালকাটা কিলিং’-এর সময়ে পুলিশ তো ছিল ব্রিটিশের অধীনে— অর্থাৎ ব্রিটিশ গভর্নরের অধীনে; ফলে সাম্প্রদায়িক মবের কারণে সেদিন যুক্তবঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে পারেননি। আর এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাই যে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটিকে ধীরে ধীরে অসার করে তুলেছিল, তা তাঁর রাজনীতির প্রতিটি পদক্ষেপ প্রমাণ করে। কিন্তু তারপরেও বঙ্গবন্ধু একটি শ্রেণির কাছে এখন ১৯৪৬-এর কালো তালিকায়, আর ঠিক তার বিপরীতে আরেকটি শ্রেণির কাছে পাকিস্তান ভাঙার অপরাধের শীর্ষ অপরাধী; যে কারণে তাঁর মর্মর মূর্তিও তাদের ক্ষোভ থেকে রক্ষা পায় না।
রবীন্দ্রনাথ কবি মিল্টনের কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, ‘যে জাতির মধ্যে মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, কিন্তু তথাপিও যে জাতি কল্পনার জড়তা, হৃদয়ের পক্ষাঘাত-বশত তাহার মহত্ত্ব কোনওমতে অনুভব করিতে পারে না, তাহার কী দুর্ভাগ্য!’
কবিরা সত্য দেখেন; তাঁরা ত্রিকালদর্শী। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ বেশি দূর সামনে দেখতে পাইনে কখনও। তাই ১৯৯১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা দিবসে জাতীয় শোক দিবস ও ছুটি দাবি করার পরেও সে সময়ের সরকার সেটা মেনে নেয়নি। তাই আজকের আপাত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সেদিন ছুটির দাবিতে হরতাল ডেকেছিল। স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল হয় সেদিন। কেন এই স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল হয়, এ নিয়ে ‘ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর’-এর একজন সাংবাদিক আমার মন্তব্য জানতে চেয়েছিলেন— সেদিন বলেছিলাম, সারাদিন রাস্তায় দেখেছি, তরুণ প্রজন্ম এই হরতাল পালন করেছে। ‘ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর’-এর সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, তরুণরা কেন এটা চেয়েছে? উত্তরে বলেছিলাম, যে-কোনো দেশের তরুণ প্রজন্ম তার জাতিতে একজন হিরো চায়। বাঙালি হিন্দুর অনেক হিরো আছে; বাঙালি মুসলিমের সত্য অর্থে হিরো বলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই দল-মত নির্বিশেষে সকলেই তাদের হিরোর সম্মান চায়। আমার এ উত্তরের পেছনেও কাজ করেছিল রবীন্দ্রনাথের চিন্তা— রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘যে জাতির মধ্যে স্বদেশীয় মহাপুরুষ জন্মান নাই, সে জাতি কাহার মুখ চাহিবে— তাহার কী দুর্দশা!’ আর এর বিপরীতে বাঙালি মুসলিমের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো মহাপুরুষ আছে, তাই তরুণ প্রজন্ম কেন দুর্দশাগ্রস্ত হবে?
অথচ মনে পড়েনি, তার মাত্র কয়েক মাস আগেই ‘সচিত্র সন্ধানী’-তে কবি বন্ধু ত্রিদিব দস্তিদারের কবিতা ছেপেছিলাম, যার লাইনগুলো এমনই ছিল, ‘তোমাকে বিশ্বাস করা যায় না বাংলাদেশ/ তোমার শরীরে পিতৃহন্তার রক্ত।’
লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক; সম্পাদক, ‘সারাক্ষণ’ ও ‘The Present World’