আটক প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির মতো গতি চাইলেন ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা
২০২৫ সালের এপ্রিলে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স অভিযোগ করেন, অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নের প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর। অ্যারিজোনার ফিনিক্সে অনুষ্ঠিত বর্ডার সিকিউরিটি এক্সপোতে তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়াটি যেন অ্যামাজনের মতো দ্রুত কাজ করে—”প্রাইম ডেলিভারির মতো, তবে পণ্য নয়, মানুষ নিয়ে”। তার মতে, অভিবাসন আইনের কার্যকর প্রয়োগে আরও দ্রুততা প্রয়োজন।
এই উদ্দেশ্যে আইসিই এখন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিযান জোরদার করেছে। মে মাসে ন্যাশভিল শহরে হাইওয়ে পেট্রোলের সঙ্গে যৌথ অভিযানে এক সপ্তাহেই ১৯৬ জন অভিবাসীকে আটক করা হয়। সান ডিয়েগো, নিউইয়র্কসহ বড় শহরগুলোর আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়া অভিবাসীদেরও হঠাৎ বেশি পরিমাণে আটক করা হচ্ছে।
কিন্তু আটক করার পর সংকট বাড়ছে: স্থান নেই
ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পিত গণবিতাড়ন বাস্তবায়নের জন্য আটক অভিবাসীদের আদালতের শুনানি কিংবা ফ্লাইটের জন্য কোথাও রাখার প্রয়োজন। তবে, চার মাসের মধ্যেই আটক কেন্দ্রগুলো ভর্তি হয়ে গেছে।
আইসিই-এর সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে প্রথমবারের মতো আটক অভিবাসীর সংখ্যা সামান্য হ্রাস পেয়েছে—৪৯,১৮৪ থেকে কমে ৪৮,৮৭০ (৪ মে থেকে ১৮ মে)। এ হ্রাস ইঙ্গিত দেয় যে, সরকারের পরিকল্পনা এখন একটি বড় বাধার মুখে।
কংগ্রেস এ বছর ৪১,৫০০ বেডের অর্থ বরাদ্দ করেছে, যা বর্তমান ধারণক্ষমতার তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। এমন পরিস্থিতিতে মে মাসে সিনেটের বাজেট কমিটি হুঁশিয়ার করেছে যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েমের হাতে অর্থ শেষ হয়ে যেতে পারে বাজেট বছরের শেষের আগেই।
স্টুয়ার্ট আটক কেন্দ্র: অতিরিক্ত ভিড়ে অরাজকতা
জর্জিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্টুয়ার্ট ডিটেনশন সেন্টার, যা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আটক কেন্দ্র, সেখানে একাধিক সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রায় ১,৭৫০ বেডের কেন্দ্রে এপ্রিল মাসজুড়ে গড়ে ২,২০০ অভিবাসী রাখা হয়েছে।
গত বছর ৩০ জন ধারণক্ষমতার একটি কক্ষে এখন ৭০ জনকে রাখা হয়েছে। অনেকে মেঝেতে প্লাস্টিকের শিটে ঘুমাচ্ছেন। নারীদের জন্য টয়লেট পেপার ও ট্যাম্পন সংকটে চুরি পর্যন্ত হচ্ছে।
কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রহরীরা অতিরিক্ত চাপে পড়েছেন। ফলে, আগে যেখানে অপরাধীদের জন্য লাল ইউনিফর্ম এবং অপরাধ না করা ব্যক্তিদের জন্য খাকি ইউনিফর্ম থাকত, সেখানে এখন বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে—ভুল ইউনিফর্ম দেওয়া হচ্ছে।
মাদক পাচার এত বেড়ে গিয়েছে যে, সাম্প্রতিককালে চুলের ব্যান্ড ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত বন্দিদের ওষুধ সময়মতো দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
চিকিৎসা অবহেলায় মৃত্যু এবং অভ্যন্তরীণ সংস্থা বন্ধ
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫২টি মৃত্যুর ৯৫ শতাংশই ঘটেছে চিকিৎসার গাফিলতির কারণে—এমনটি উঠে এসেছে তিনটি মানবাধিকার সংগঠনের একটি গবেষণায়। এরই মধ্যে অভিবাসীদের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ গ্রহণকারী অফিস ‘ইমিগ্রেশন ডিটেনশন ওম্বাডসম্যান’ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বিকল্প কেন্দ্র খোঁজায় তৎপর প্রশাসন
ট্রাম্প প্রশাসন এখন নতুন কেন্দ্র খোঁজার চেষ্টায়। নিউ জার্সিতে বন্ধ থাকা একটি আটক কেন্দ্র মে মাসে দ্বিগুণ ধারণক্ষমতায় আবার চালু হয়েছে। তবে আরও অনেক কেন্দ্র দরকার। সরকার জরুরি ভিত্তিতে নতুন আটক কেন্দ্র নির্মাণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দরপত্র জমা দিতে আহ্বান জানালেও তা চালু হতে সময় লাগবে।
এদিকে, টেক্সাসের এল পাসোর একটি সামরিক ঘাঁটির অংশকে তাঁবুতে আটক অভিবাসীদের রাখার মতো ক্যাম্পে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সান ফ্রান্সিসকোর কাছে এক নারীদের কারাগার, যেটিকে এক সময় যৌন নিপীড়নের জন্য ‘ধর্ষণ ক্লাব’ বলা হতো, তা পুনরায় ব্যবহার করা হতে পারে।
বাজেটে বরাদ্দ, কিন্তু ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিলিজ’ ফিরছে?
হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের নতুন বাজেট বিল অনুযায়ী প্রশাসন ৫৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারবে। প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এতে বেড সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব। কিন্তু ততদিনে হয়তো ট্রাম্প প্রশাসন আবার সেই পুরনো ‘ক্যাচ অ্যান্ড রিলিজ’ কৌশল—অভিবাসীকে ধরে আবার ছেড়ে দেওয়া—ব্যবহার করতে বাধ্য হতে পারে; যেটিকে এক সময় তিনি নিজেই তীব্রভাবে সমালোচনা করেছিলেন।