ক্যাম্বোডিয়ার সরকার এক প্রতিবেদনে নিজেদের “আঞ্চলিক অনলাইন অপরাধের কেন্দ্র” হিসেবে চিহ্নিত করার অভিযোগকে জোরাল ভাষায় অস্বীকার করেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া সেন্টারের ভিজিটিং ফেলো জেকব সিমসের ৬৮ পৃষ্ঠার ওই গবেষণাটি দাবি করে, চীনা সিন্ডিকেটগুলোর পরিচালনায় প্রায় ৩৫ ০ ০০০ মানুষ জড়িত একটি বিশাল প্রতারণা শিল্প গড়ে উঠেছে, যেখান থেকে বছরে ৫০-৭৫ বিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে।
প্রতিবেদন এবং পরিসংখ্যান
· জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তরের (ইউএনওডিসি) ২০২৩ সালের হিসাবে ক্যাম্বোডিয়ায় স্ক্যাম আয়ের পরিমাণ ছিল ১২.৫ বিলিয়ন ডলার।
· পরের বছর ইউএসএআইডি এ সংখ্যা ১৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে।
· শ্রমশক্তি সম্পর্কে ইউএনওডিসি ১ লাখ এবং ইউএসএআইডি ১.৫ লাখ জনের হিসাব দিয়েছে।
· সিমস দাবি করেন, দেশটির মোট অনলাইন প্রতারণা কর্মী ১.৫ লাখের বেশি এবং শিল্পটি দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে।
সরকারের প্রতিবাদ
ক্যাম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক দুই পৃষ্ঠার বিবৃতিতে প্রতিবেদনের ভাষাকে “অপেশাদার, ভিত্তিহীন ও মানহানিকর” বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা উপ-প্রধানমন্ত্রী সার সক্খাকে অনিয়মে জড়ানোর অভিযোগও অস্বীকার করেছে—জানিয়েছে, তিনি কিংবা তাঁর পরিবার জিনবেল ক্যাসিনোর শেয়ারহোল্ডার নন এবং মুনাফাও পাননি।
নাম ও দায় স্বীকারের বিতর্ক
সিমস বলেছেন, তিনি শুধু ইউএনওডিসি এবং ইউএসএআইডির তথ্যই ব্যবহার করেছেন; নতুন কিছু ‘ভাঙা’ তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। সাক্ষাৎকারদাতা বেশির ভাগ মানুষের নিরাপত্তা-চিন্তা থাকায় নাম গোপন করতে হয়েছে—যা বিশ্লেষণের “রঙ একটু ফিকে” করেছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
সিমসের মতে, ক্যাম্বোডিয়ার জিডিপি-র তুলনায় (বিশ্বব্যাংক: ২০২৩ সালে ৪২.৩৪ বিলিয়ন ডলার) অনলাইন প্রতারণা এখন টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শিল্পের চেয়েও বড় হতে পারে। শিল্প-খাত জিডিপি-র ৪০.৫২ শতাংশ, সেবাখাত ৩৬.১৫ শতাংশ এবং কৃষি ১৭.০৮ শতাংশ অবদান রাখে।
বেসরকারি খাতের নির্যাস
ব্রিটিশ সংস্থা হিউম্যানিটি রিসার্চ কনসালটেন্সি প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২৫-এর বেশি সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে প্রিন্স হোল্ডিং গ্রুপকে “বৈশ্বিক অনলাইন জুয়ার অপরাধচক্র” বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। গ্রুপটি এর প্রমাণহীনতা ও “গোপন উত্স” নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সহযোগিতা
— টোকিওতে ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজিরো ইশিবার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অনলাইন প্রতারণা মোকাবিলায় পুলিশ সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হন।
— এর আগে থাই সীমান্তবর্তী পয়পেটে যৌথ অভিযানে প্রায় ৩০ জন জাপানি সন্দেহভাজনকে আটক করে ফনম পেনহে আনা হয়েছে বলে কিওডো বার্তা সংস্থা জানায়।
বিশাল আয় ও জনশক্তির এই অনলাইন প্রতারণা-শিল্প ক্যাম্বোডিয়ার জন্য জিডিপি-র তুলনায়ও বড় হুমকি হতে পারে। সরকার রিপোর্টটিকে অপবাদ বললেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য, নাগরিক সমাজ এবং সাংবাদিকদের অনুসন্ধান—সব মিলিয়ে বিষয়টির গভীরতা কমছে না। কঠোর তদন্ত ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা ছাড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ক্রমেই বাড়তে পারে।