০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিরতির নিঃশব্দ মৃত্যু

হোয়াইট হাউসের এক সিদ্ধান্তে নড়েচড়ে বসল ট্রাম্প প্রশাসন

গত সোমবার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নতুন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে কাজ করা হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ট্রেজারি ও স্টেট ডিপার্টমেন্টকে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এতে অসন্তুষ্ট হন। পরদিনই জানা যায়এই নিষেধাজ্ঞা বিরতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শুক্রবার হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করে যে২১ মের পর প্রথমবারের মতো আবারও ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিষেধাজ্ঞায় ইরানচীনহংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১০ ব্যক্তি ও ২৭টি প্রতিষ্ঠানের ওপর অভিযোগ আনা হয়েছেযারা ইরানি সরকারের জন্য বিলিয়ন ডলারের ছায়া ব্যাংকিং চক্র পরিচালনা করছিল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) দিকেও কঠোর ব্যবস্থা

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চারজন বিচারককে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছেযারা আদালতের সীমা অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেনঅথচ এই দুটি দেশই আদালতের সদস্য নয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণযদিও সীমিতপদক্ষেপ। তবে কেবল বিচারকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয়যদি পুরো আদালত বা এর পেশাদার কর্মীদের ওপর চাপ না আসেতাহলে তারা আগের মতোই ট্রাম্পের সময়কাল পার করে দেবে।

চাপ ফিরিয়ে আনা এবং এর তাৎপর্য

নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারণে ইরানের ওপর আবারও চাপ তৈরি হয়েছে। এতে ইতোমধ্যেই চীনে ইরানি তেলের ক্রেতাদের জন্য ছাড় বাড়াতে বাধ্য হয়েছে ইরান। ভোরটেক্সা নামের একটি কার্গো-ট্র্যাকিং কোম্পানির প্রাথমিক তথ্যানুযায়ীমে মাসে ইরানের তেল রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কমে দিনে ১১ লাখ ব্যারেলের নিচে নেমে এসেছে ইরানের চীনমুখী তেল রপ্তানি।

পারমাণবিক আলোচনা সামনেসময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই মাসের মধ্যে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকার কোনো যুক্তি নেই। ইরানকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবেসময়ক্ষেপণের সুযোগ তাদের নেই। বিশেষ করে যখন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এখনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শর্তঅর্থাৎ ঘরোয়াভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পথ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেনযা একপ্রকার পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দিকেই ইঙ্গিত করে।

International Atomic Energy Agency | United Nations

IAEA রিপোর্টে ইরানের মিথ্যাচার উন্মোচিত

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) ইরানের বিপক্ষে দুটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছেইরান আরও বেশি মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে এবং দীর্ঘদিন ধরে পরিদর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করে গোপনে পরমাণু কার্যক্রম পরিচালনা করছেএমনকি ধরা পড়ার পর সেগুলো আড়াল করতেও তৎপর ছিল।

এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো আসন্ন IAEA বোর্ড সভার জন্য একটি কঠোর প্রস্তাব তৈরির কাজ শুরু করেছে।

শব্দ নয়প্রয়োজন কঠিন পদক্ষেপ

কেবল কথাবার্তা যথেষ্ট নয়। এখনই স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞাযা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অংশ ছিলচালু করা উচিত। অক্টোবরের মধ্যেই পশ্চিমা দেশগুলোর সেই সুযোগ রয়েছেতবে তার আগে পদক্ষেপ না নিলে দেরি হয়ে যেতে পারে। ইরানকে এখনই অর্থনৈতিক চাপে ফেলতে হবেনইলে তারা মনে করতে পারে যেকেবল আলোচনায় অংশ নিয়েই তারা পারমাণবিক কর্মসূচি ও অর্থনীতিকে রক্ষা করতে পারবে।

ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিরতির নিঃশব্দ মৃত্যু

১২:৪৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫

হোয়াইট হাউসের এক সিদ্ধান্তে নড়েচড়ে বসল ট্রাম্প প্রশাসন

গত সোমবার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নতুন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে কাজ করা হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ট্রেজারি ও স্টেট ডিপার্টমেন্টকে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এতে অসন্তুষ্ট হন। পরদিনই জানা যায়এই নিষেধাজ্ঞা বিরতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শুক্রবার হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করে যে২১ মের পর প্রথমবারের মতো আবারও ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিষেধাজ্ঞায় ইরানচীনহংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১০ ব্যক্তি ও ২৭টি প্রতিষ্ঠানের ওপর অভিযোগ আনা হয়েছেযারা ইরানি সরকারের জন্য বিলিয়ন ডলারের ছায়া ব্যাংকিং চক্র পরিচালনা করছিল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) দিকেও কঠোর ব্যবস্থা

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চারজন বিচারককে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছেযারা আদালতের সীমা অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেনঅথচ এই দুটি দেশই আদালতের সদস্য নয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণযদিও সীমিতপদক্ষেপ। তবে কেবল বিচারকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয়যদি পুরো আদালত বা এর পেশাদার কর্মীদের ওপর চাপ না আসেতাহলে তারা আগের মতোই ট্রাম্পের সময়কাল পার করে দেবে।

চাপ ফিরিয়ে আনা এবং এর তাৎপর্য

নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারণে ইরানের ওপর আবারও চাপ তৈরি হয়েছে। এতে ইতোমধ্যেই চীনে ইরানি তেলের ক্রেতাদের জন্য ছাড় বাড়াতে বাধ্য হয়েছে ইরান। ভোরটেক্সা নামের একটি কার্গো-ট্র্যাকিং কোম্পানির প্রাথমিক তথ্যানুযায়ীমে মাসে ইরানের তেল রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কমে দিনে ১১ লাখ ব্যারেলের নিচে নেমে এসেছে ইরানের চীনমুখী তেল রপ্তানি।

পারমাণবিক আলোচনা সামনেসময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই মাসের মধ্যে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকার কোনো যুক্তি নেই। ইরানকে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবেসময়ক্ষেপণের সুযোগ তাদের নেই। বিশেষ করে যখন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এখনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শর্তঅর্থাৎ ঘরোয়াভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পথ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেনযা একপ্রকার পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দিকেই ইঙ্গিত করে।

International Atomic Energy Agency | United Nations

IAEA রিপোর্টে ইরানের মিথ্যাচার উন্মোচিত

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) ইরানের বিপক্ষে দুটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছেইরান আরও বেশি মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে এবং দীর্ঘদিন ধরে পরিদর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করে গোপনে পরমাণু কার্যক্রম পরিচালনা করছেএমনকি ধরা পড়ার পর সেগুলো আড়াল করতেও তৎপর ছিল।

এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো আসন্ন IAEA বোর্ড সভার জন্য একটি কঠোর প্রস্তাব তৈরির কাজ শুরু করেছে।

শব্দ নয়প্রয়োজন কঠিন পদক্ষেপ

কেবল কথাবার্তা যথেষ্ট নয়। এখনই স্ন্যাপব্যাক’ নিষেধাজ্ঞাযা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অংশ ছিলচালু করা উচিত। অক্টোবরের মধ্যেই পশ্চিমা দেশগুলোর সেই সুযোগ রয়েছেতবে তার আগে পদক্ষেপ না নিলে দেরি হয়ে যেতে পারে। ইরানকে এখনই অর্থনৈতিক চাপে ফেলতে হবেনইলে তারা মনে করতে পারে যেকেবল আলোচনায় অংশ নিয়েই তারা পারমাণবিক কর্মসূচি ও অর্থনীতিকে রক্ষা করতে পারবে।