১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

কেমব্রিজ শহরের গরুদের ঘোরাফেরায় এখন সহায়ক জিপিএস প্রযুক্তি

কেমব্রিজ শহরের মিডসামার কমনে চরে বেড়ানো গরুদের গলায় এখন জিপিএস কলার। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত, কেমব্রিজের সবুজ জায়গাগুলোতে গরু ছেড়ে দেন স্থানীয় গবাদি পশু পালনকারীরা।

বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় কেমব্রিজের এই শহর শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য এবং খোলা মাঠে ঘুরে বেড়ানো গরুর জন্য সুপরিচিত। তবে মধ্যযুগ থেকে চলে আসা এই রীতি এবার বাজেট সংকটে পড়ে প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। সে সংকটের সমাধান এসেছে ২১ শতকের প্রযুক্তিতে—জিপিএস-নিয়ন্ত্রিত কলারে।

গবাদিপশু পালনকারীরা কেমব্রিজের সরকারি জমিতে গরু চড়াতে পারেন শত শত বছর ধরে। প্রতি বসন্ত ও গ্রীষ্মে প্রায় ১০০টি গরু শহরের মধ্যযুগীয় কমন, ফেন ও সবুজ মাঠে চরে বেড়ায়—যার মধ্যে চার্লস ডারউইনের পোকামাকড় সংগ্রহের স্থান শিপস গ্রিনও আছে। পর্যটক, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাশাপাশি পথ চলা এসব গরু হয়ে উঠেছে শহরের এক আকর্ষণ।

তবে এদের অনেক সময় ঘোরাফেরায় দিক হারিয়ে নদীতে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। কেমব্রিজ শহরের মধ্যে বয়ে চলা রিভার ক্যামে প্রতিবছর প্রায় চারটি গরু পড়ে যায়। কখনও ফসকে যায়, কখনও একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়, আবার কখনও ভয় পেয়ে ছুটে পড়ে।

যদিও ক্যাম নদী অগভীর এবং গরুরা সাঁতার জানে, তবু একবার পড়ে গেলে কাদামাখা তীর বেয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় উদ্ধারের অপেক্ষায়। উদ্ধার করতে লাগে পিন্ডার নামের বিশেষ প্রশিক্ষিত কর্মী এবং প্রায়ই দমকল বাহিনীকেও ডাকা হয়।

এই কাজে প্রতি বছর শহর কর্তৃপক্ষের খরচ পড়ে ১০ হাজার পাউন্ড (১৮,৬০০ ডলার)। এর বাইরে গেট, গ্রিড ও বেষ্টনী রক্ষণাবেক্ষণে আরও ২৮ হাজার পাউন্ড লাগে। অথচ গবাদিপশু পালনকারীদের কাছ থেকে শহর যে গ্রেজিং ফি পায়, তা মাত্র ৪ হাজার পাউন্ড।

গত নভেম্বরে শহর কাউন্সিল ৭১ মিলিয়ন পাউন্ডের বাজেট থেকে ৬ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। সেই কাটছাঁটের অংশ হিসেবে ২৪ ঘণ্টার পিন্ডার সেবাটি বাতিল করে গরু মালিকদের উপর দায়িত্ব চাপানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এই প্রস্তাবে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গবাদিপশু পালনকারীরা বলেন, এতে মাঠে গরু চড়ানো অর্থনৈতিকভাবে সম্ভব হবে না এবং তারা গরু সরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।

চাপে পড়ে শহর কর্তৃপক্ষ বিকল্প চিন্তা শুরু করে।

তারা সিদ্ধান্ত নেয় গরুদের গলায় সৌরশক্তিচালিত জিপিএস কলার পরানো হবে, যা ভার্চুয়াল বেড়ার কাছে এলেই উচ্চ শব্দ করে। গরু যদি অগ্রসর হতে থাকে, তাহলে হালকা বৈদ্যুতিক স্পন্দন দিয়ে পিছু হটানো হয়। অ্যাপের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল সীমা পরিবর্তন করা যায় এবং গরুর অবস্থানও নজরে রাখা সম্ভব।

এই প্রযুক্তি তৈরি করেছে নরওয়ের কোম্পানি ‘নোফেন্স’ এবং এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। এর খরচ পিন্ডার সেবার তুলনায় অনেক কম।

এই নতুন পদ্ধতি প্রসঙ্গে ৩০টি হেয়ারফোর্ড জাতের গরু কমনের মাঠে পালনকারী মার্ক ড্রু বলেন, “যে কাজটা করার দরকার, সেটা বেশ ভালোভাবেই করছে। আমরা জমির মালিক নই, ভাড়াটে কৃষক। তাই ঘাস পাওয়ার জন্য যেকোনো জায়গা দরকার। কেমব্রিজে গরু চড়াতে পারাটা আমাদের জন্য ইতিবাচক এবং খরচও বেশি নয়।”

তিনি জানান, শহরের কাছ থেকে প্রতি গরুর জন্য বছরে প্রায় ৫০ পাউন্ড করে দেন। তার গরুগুলো সাধারণত শান্ত প্রকৃতির হওয়ায় জনসাধারণের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যায়।

মার্ক ড্রু আরও বলেন, এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, শহর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে ভার্চুয়াল বেড়া সহজেই বদলে দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “যখন নতুন ফুল গাছ লাগানো হয়, তখন গরুকে দূরে রাখতে বেড়া বাড়িয়ে দেওয়া যায়। আর ফুল ফুটে গেলে বেড়া সরিয়ে দেওয়া হয়।”

তিনি জানান, বহুবার তাকে গভীর রাতে গরু উদ্ধারে যেতে হয়েছে। কয়েক বছর আগে ডারউইন কলেজের কাছে তার একটি গরু ক্যামে পড়ে গিয়ে একটি ছোট দ্বীপে উঠে যায়।

“সেখানে থেকে আবার মূল মাঠে আসা সম্ভব হয়নি, কারণ পাড় ছিল খাড়া। শেষে দমকল বাহিনীর সহায়তায় গরুটিকে নদী পাড়ি দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে,” বলেন তিনি।

সেই গরুটি উদ্ধার করতে সারা দিন লেগে যায়। “এই কলারগুলো ব্যবহার করে যদি গরুগুলোকে নদীর ধারে যেতেই না দেওয়া যায়, তাহলে এই ঝামেলা এড়ানো সম্ভব,” বলেন ড্রু।

স্থানীয় পশু চিকিৎসক অ্যাঞ্জেলিকা ফন হেইমেনডাল, যিনি তার ৫০টি গরুর মধ্যে ১০টি কমনের মাঠে রাখেন, বলেন—এই কলারগুলো ঠিক কতগুলো গরুকে নদীতে পড়া থেকে রক্ষা করেছে, তা নিশ্চিত নয়।

“আমরা শতভাগ নিশ্চিত নই, আসলে কুকুর তাড়া করে ফেলছে কিনা, না নিজেরাই পড়ে যাচ্ছে। যদি কুকুর হয়, তাহলে এই কলার খুব একটা সহায়ক নয়।”

তবে এখন পর্যন্ত এই কলার কাজ করছে বলেই মনে হচ্ছে এবং কেমব্রিজের মানুষ ও গরুরা একসঙ্গে সহাবস্থান করছে।

তিনি বলেন, মানুষ তাকে বরং বেশি উদ্বিগ্ন করে তোলে।

“গরুদের জাবর কাটতে হয়, বসে বিশ্রাম নিতে হয়—এটা ওদের স্বাভাবিক জীবনচক্র। কিন্তু মানুষ কখনো কখনো এতটাই কাছে চলে আসে বা গায়ে হাত দিতে চেষ্টা করে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।”

 

কেমব্রিজ শহরের গরুদের ঘোরাফেরায় এখন সহায়ক জিপিএস প্রযুক্তি

১০:০০:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫

কেমব্রিজ শহরের মিডসামার কমনে চরে বেড়ানো গরুদের গলায় এখন জিপিএস কলার। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত, কেমব্রিজের সবুজ জায়গাগুলোতে গরু ছেড়ে দেন স্থানীয় গবাদি পশু পালনকারীরা।

বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় কেমব্রিজের এই শহর শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য এবং খোলা মাঠে ঘুরে বেড়ানো গরুর জন্য সুপরিচিত। তবে মধ্যযুগ থেকে চলে আসা এই রীতি এবার বাজেট সংকটে পড়ে প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। সে সংকটের সমাধান এসেছে ২১ শতকের প্রযুক্তিতে—জিপিএস-নিয়ন্ত্রিত কলারে।

গবাদিপশু পালনকারীরা কেমব্রিজের সরকারি জমিতে গরু চড়াতে পারেন শত শত বছর ধরে। প্রতি বসন্ত ও গ্রীষ্মে প্রায় ১০০টি গরু শহরের মধ্যযুগীয় কমন, ফেন ও সবুজ মাঠে চরে বেড়ায়—যার মধ্যে চার্লস ডারউইনের পোকামাকড় সংগ্রহের স্থান শিপস গ্রিনও আছে। পর্যটক, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাশাপাশি পথ চলা এসব গরু হয়ে উঠেছে শহরের এক আকর্ষণ।

তবে এদের অনেক সময় ঘোরাফেরায় দিক হারিয়ে নদীতে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। কেমব্রিজ শহরের মধ্যে বয়ে চলা রিভার ক্যামে প্রতিবছর প্রায় চারটি গরু পড়ে যায়। কখনও ফসকে যায়, কখনও একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়, আবার কখনও ভয় পেয়ে ছুটে পড়ে।

যদিও ক্যাম নদী অগভীর এবং গরুরা সাঁতার জানে, তবু একবার পড়ে গেলে কাদামাখা তীর বেয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় উদ্ধারের অপেক্ষায়। উদ্ধার করতে লাগে পিন্ডার নামের বিশেষ প্রশিক্ষিত কর্মী এবং প্রায়ই দমকল বাহিনীকেও ডাকা হয়।

এই কাজে প্রতি বছর শহর কর্তৃপক্ষের খরচ পড়ে ১০ হাজার পাউন্ড (১৮,৬০০ ডলার)। এর বাইরে গেট, গ্রিড ও বেষ্টনী রক্ষণাবেক্ষণে আরও ২৮ হাজার পাউন্ড লাগে। অথচ গবাদিপশু পালনকারীদের কাছ থেকে শহর যে গ্রেজিং ফি পায়, তা মাত্র ৪ হাজার পাউন্ড।

গত নভেম্বরে শহর কাউন্সিল ৭১ মিলিয়ন পাউন্ডের বাজেট থেকে ৬ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। সেই কাটছাঁটের অংশ হিসেবে ২৪ ঘণ্টার পিন্ডার সেবাটি বাতিল করে গরু মালিকদের উপর দায়িত্ব চাপানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এই প্রস্তাবে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গবাদিপশু পালনকারীরা বলেন, এতে মাঠে গরু চড়ানো অর্থনৈতিকভাবে সম্ভব হবে না এবং তারা গরু সরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।

চাপে পড়ে শহর কর্তৃপক্ষ বিকল্প চিন্তা শুরু করে।

তারা সিদ্ধান্ত নেয় গরুদের গলায় সৌরশক্তিচালিত জিপিএস কলার পরানো হবে, যা ভার্চুয়াল বেড়ার কাছে এলেই উচ্চ শব্দ করে। গরু যদি অগ্রসর হতে থাকে, তাহলে হালকা বৈদ্যুতিক স্পন্দন দিয়ে পিছু হটানো হয়। অ্যাপের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল সীমা পরিবর্তন করা যায় এবং গরুর অবস্থানও নজরে রাখা সম্ভব।

এই প্রযুক্তি তৈরি করেছে নরওয়ের কোম্পানি ‘নোফেন্স’ এবং এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। এর খরচ পিন্ডার সেবার তুলনায় অনেক কম।

এই নতুন পদ্ধতি প্রসঙ্গে ৩০টি হেয়ারফোর্ড জাতের গরু কমনের মাঠে পালনকারী মার্ক ড্রু বলেন, “যে কাজটা করার দরকার, সেটা বেশ ভালোভাবেই করছে। আমরা জমির মালিক নই, ভাড়াটে কৃষক। তাই ঘাস পাওয়ার জন্য যেকোনো জায়গা দরকার। কেমব্রিজে গরু চড়াতে পারাটা আমাদের জন্য ইতিবাচক এবং খরচও বেশি নয়।”

তিনি জানান, শহরের কাছ থেকে প্রতি গরুর জন্য বছরে প্রায় ৫০ পাউন্ড করে দেন। তার গরুগুলো সাধারণত শান্ত প্রকৃতির হওয়ায় জনসাধারণের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যায়।

মার্ক ড্রু আরও বলেন, এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, শহর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে ভার্চুয়াল বেড়া সহজেই বদলে দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “যখন নতুন ফুল গাছ লাগানো হয়, তখন গরুকে দূরে রাখতে বেড়া বাড়িয়ে দেওয়া যায়। আর ফুল ফুটে গেলে বেড়া সরিয়ে দেওয়া হয়।”

তিনি জানান, বহুবার তাকে গভীর রাতে গরু উদ্ধারে যেতে হয়েছে। কয়েক বছর আগে ডারউইন কলেজের কাছে তার একটি গরু ক্যামে পড়ে গিয়ে একটি ছোট দ্বীপে উঠে যায়।

“সেখানে থেকে আবার মূল মাঠে আসা সম্ভব হয়নি, কারণ পাড় ছিল খাড়া। শেষে দমকল বাহিনীর সহায়তায় গরুটিকে নদী পাড়ি দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে,” বলেন তিনি।

সেই গরুটি উদ্ধার করতে সারা দিন লেগে যায়। “এই কলারগুলো ব্যবহার করে যদি গরুগুলোকে নদীর ধারে যেতেই না দেওয়া যায়, তাহলে এই ঝামেলা এড়ানো সম্ভব,” বলেন ড্রু।

স্থানীয় পশু চিকিৎসক অ্যাঞ্জেলিকা ফন হেইমেনডাল, যিনি তার ৫০টি গরুর মধ্যে ১০টি কমনের মাঠে রাখেন, বলেন—এই কলারগুলো ঠিক কতগুলো গরুকে নদীতে পড়া থেকে রক্ষা করেছে, তা নিশ্চিত নয়।

“আমরা শতভাগ নিশ্চিত নই, আসলে কুকুর তাড়া করে ফেলছে কিনা, না নিজেরাই পড়ে যাচ্ছে। যদি কুকুর হয়, তাহলে এই কলার খুব একটা সহায়ক নয়।”

তবে এখন পর্যন্ত এই কলার কাজ করছে বলেই মনে হচ্ছে এবং কেমব্রিজের মানুষ ও গরুরা একসঙ্গে সহাবস্থান করছে।

তিনি বলেন, মানুষ তাকে বরং বেশি উদ্বিগ্ন করে তোলে।

“গরুদের জাবর কাটতে হয়, বসে বিশ্রাম নিতে হয়—এটা ওদের স্বাভাবিক জীবনচক্র। কিন্তু মানুষ কখনো কখনো এতটাই কাছে চলে আসে বা গায়ে হাত দিতে চেষ্টা করে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।”