নতুন পারমাণবিক উত্তেজনার আশঙ্কা
উত্তর-পূর্ব এশিয়া এখন এমন এক বিপজ্জনক পথে এগোচ্ছে, যেখানে পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সংখ্যা পাঁচে পৌঁছাতে পারে। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া, চীন ও রাশিয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানও পারমাণবিক শক্তির পথে হাঁটার ঝুঁকিতে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাডসন ইনস্টিটিউটে এক বক্তব্যে এ সতর্কতা দেন তিনি।
উত্তর কোরিয়ার ‘পারমাণবিক ছাড়’ এখন আর সম্ভাব্য নয়
২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এখন এমন আরেকটি সম্মেলনের মাধ্যমে অগ্রগতি সম্ভব কিনা, সেই প্রশ্নে বালাকৃষ্ণন বলেন, “গত সাত বছরে পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। এখন পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের প্রশ্নটা শুধু উত্তর কোরিয়াকেন্দ্রিক নয়।”
বিশ্বপরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কিম জং উনকে পরমাণু অস্ত্র ত্যাগে রাজি করানো প্রায় অসম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র-সিঙ্গাপুর কৌশলগত সম্পর্ক পুনর্ব্যক্ত
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে ওয়াশিংটনে এক বৈঠকে বালাকৃষ্ণন যুক্তরাষ্ট্র-সিঙ্গাপুর কৌশলগত অংশীদারিত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। উভয় দেশের পক্ষ থেকে একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করা হয়।
ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠকের সম্ভাবনা কম
হাডসনে এক প্রশ্নের জবাবে বালাকৃষ্ণন জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের কেউ এখন পর্যন্ত কিম জং উনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে আরেকটি বৈঠকের বিষয়ে যোগাযোগ করেনি। তবে ২০১৮ সালেও বৈঠকের আগে এমন কোনো আগাম আলোচনা হয়নি বলেও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
“তখন হঠাৎই ফোন এসেছিল, আমরা প্রস্তাব দিইনি,” বলেন বালাকৃষ্ণন। তিনি সিঙ্গাপুরের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং-এর সঙ্গে আলোচনা করে সম্মেলনের আয়োজন করেন। তবে সিঙ্গাপুর শুধু স্বাগতিক ভূমিকা পালন করেছে, মধ্যস্থতাকারী নয় বলেও তিনি পরিষ্কার করেন।
“আমরা শুধু নিশ্চিত করেছিলাম, চায়ের কাপগুলো ভরা আছে,” বলেন তিনি রসিকতা করে।
উত্তর কোরিয়ার মনোভাব: মর্যাদার ভারসাম্য
বালাকৃষ্ণন জানান, কিম জং উনের সফরে উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তারা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন ‘সমমর্যাদার’ বিষয়ে। তারা বারবার খোঁজ নিয়েছিল ট্রাম্পের জন্য কী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং কিম যেন একই রকম মর্যাদা পান।
যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা ছাতার ভবিষ্যৎ ও বিপদের আশঙ্কা
বালাকৃষ্ণন বলেন, গত ৮০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ছাতা উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় স্থিতিশীলতার প্রধান ভিত্তি ছিল। কিন্তু “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র যদি তার বৈশ্বিক উপস্থিতি কমায়, তবে ওই অঞ্চলের নেতাদের ‘অচিন্তনীয় চিন্তাভাবনা’ করার ঝুঁকি বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, পারস্পরিক নিশ্চিহ্নতার (mutual assured destruction) ধারণা যখন দুই পরাশক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল (যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন), তখনও তা বিপজ্জনক ছিল। এখন যদি উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান— এই পাঁচ দেশ পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হয়, তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
এশিয়ার ইতিহাস ইউরোপের মতো নয়
বালাকৃষ্ণন বলেন, এশিয়ার ইতিহাস ইউরোপের চেয়ে অনেক বেশি জটিল। তিনি জার্মানির উদাহরণ দিয়ে বলেন, “জার্মানি তাদের দোষ স্বীকার করেছে, অনুশোচনা করেছে, এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় সেই ধরনের প্রক্রিয়া আজও ঘটেনি।” বিশেষত টোকিও ও তার প্রতিবেশীদের সম্পর্ক নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বাড়ছে পারমাণবিক বিপদের সম্ভাবনা
বালাকৃষ্ণনের মতে, “একটি এমন উত্তর-পূর্ব এশিয়া, যেখানে পাঁচটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ থাকবে— যা দিনে দিনে আরও সম্ভাব্য হয়ে উঠছে— সেটি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থা।” তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানান।