০৩:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
শিবসা নদী: শতবর্ষী এক প্রাণপ্রবাহ ও তার সুন্দরবনের প্রভাব ইরান যুদ্ধ ও ‘ট্রাম্প নীতি’ চীনের বহুমুখী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে আসিয়ান এখন আর কেবল বৈশ্বিক পুঁজির নীরব গ্রাহক নয় প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৯) আমদানি-রফতানি বিঘ্নিত হওয়ায় উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব: উপনিবেশিক ঢাকা থেকে আধুনিক ফুটবলের সাক্ষী মধ্যপ্রাচ্য জয়োল্লাসের বিপদ: ইরান, ইসরায়েল ও ইতিহাসের ভূতের ছায়া পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ২০) শিক্ষকতা বদলে দিচ্ছে চ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সরঞ্জাম মালতির মিষ্টি ‘সেট’ অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

রাজনৈতিক বিভাজনে ওই বুদ্ধিজীবিরা ভুলপাশে ছিলেন

ষাটের দশকের আন্দোলন থেকে আজকের নাটকীয়তা

১৯৬০-এর দশকে আমেরিকায় ইয়িপি নামের একদল বিপ্লবী চিন্তাবিদ একটি তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, আমেরিকার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ পচে গেছে, আর সেটা দেখানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টেলিভিশনের জন্য নাটকীয় দৃশ্য তৈরি করা। তারা নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ডলার ছড়িয়ে দিয়েছিল, পেন্টাগনকে ‘ভাসানোর’ চেষ্টাও করেছিল। তারা ভাবত, যদি পুলিশ বা সেনারা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করে, তবে সাধারণ মানুষ বুঝবে তারা এক ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে বাস করছে।

কিন্তু উল্টোটা হয়েছিল। ‘নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ’ এসব কাণ্ড দেখে রিচার্ড নিকসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। ইয়িপিদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল— কে শৃঙ্খলার পক্ষে দাঁড়াবে, সেই মৌলিক রাজনৈতিক বিভাজনে তারা ভুল পাশে ছিল।

লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা মোতায়েন: ট্রাম্পের নতুন কৌশল

বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা মোতায়েন করে দেখাতে চাইছেন, তিনিই শৃঙ্খলার পক্ষে। অন্যদিকে তার বিরোধীরা, যেমন লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম বলছেন, ট্রাম্প ইচ্ছে করেই বিশৃঙ্খলা উসকে দিচ্ছেন।

Explainer: What are US troops doing in Los Angeles? | Reuters

এই লড়াইয়ে কে জয়ী হবে তা শুধু লস অ্যাঞ্জেলেস নয়, গোটা আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প এখন এমন একটি সংঘাতের সূত্র তৈরি করেছেন, যা তার জন্য কার্যকর হলে তিনি আবারও প্রয়োগ করবেন। কারণ, আমেরিকার সব বড় শহরেই বহু অবৈধ অভিবাসী রয়েছে এবং প্রায় সব শহরই ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে। ট্রাম্পের ধারণা, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, সহিংসতা আর দমন-পীড়নের এই চক্র শেষ পর্যন্ত তারই উপকারে আসবে এবং তার বিরোধীদের উগ্র দেখাবে।

বিভাজিত আমেরিকা: শত্রু ও সমর্থকদের অবস্থান

আমেরিকায় রাজনৈতিক বিভাজন নতুন কিছু নয়। অনেক সময় অনলাইনে একে অপরকে ঘৃণা করলেও বাস্তবে অনেকেই একসঙ্গে থাকতে পারে। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসের এই ঘটনা আলাদা, কারণ এখানে প্রকৃত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। যেই পক্ষই সহিংসতা শুরু করুক না কেন, পরিস্থিতি বড় আকার নিতে পারে।

ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে এই বড় শহরগুলো হলো শত্রুদের আস্তানা, যেখানে ‘বিদেশি পতাকা’ ওড়ানো হয়। তাদের মতে, ডেমোক্রেট নেতারা এসব অপরাধী অভিবাসীদের আশ্রয় দেন, আইনের লঙ্ঘনকারীদের পুরস্কৃত করেন। তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ও তার সমর্থকদের প্রতি অবমাননা করা হচ্ছে, সেনা-পুলিশের সম্মান রক্ষা হচ্ছে না। তাই তারা চায় শিকাগো ও নিউইয়র্কেও একইভাবে সেনা মোতায়েন হোক।

অন্যদিকে ট্রাম্পের সমালোচকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের সরকার যে আগে নাগরিক অধিকার রক্ষায় ন্যাশনাল গার্ড পাঠাত, এখন তারাই সেনা পাঠিয়ে নাগরিক অধিকার দমন করছে ও অভিবাসীদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা মনে করেন, যারা গুরুতর অপরাধ করেছে, শুধু তাদেরই বহিষ্কার করা উচিত। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন পরিশ্রমী, সৎ অভিবাসীদেরও টার্গেট করছে।

একনায়কতন্ত্রের ঝুঁকি: সেনা ব্যবহারকে সাধারণ করে তুলছেন ট্রাম্প

ট্রাম্পের সমালোচকদের মতে, প্রেসিডেন্ট এখন একনায়কতন্ত্রে ঝুঁকছেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তার নামে হওয়া সহিংস প্রতিবাদকেও তিনি উৎসাহিত করেছিলেন। সেনা মোতায়েনের মধ্য দিয়ে তিনি আমেরিকার রাস্তায় সামরিক উপস্থিতি সাধারণ ঘটনা বানিয়ে তুলতে চান। তার জন্মদিন ১৪ জুনে তিনি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছেন।

ষাটের দশক বনাম বর্তমান: কীভাবে ভিন্নতা আছে

এই পরিস্থিতি অনেকটাই ষাটের দশকের মতো। ১৯৬৫ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়াটস এলাকায় দাঙ্গায় ৩৪ জন নিহত হয়েছিল, হাজারজন গ্রেপ্তার হয়েছিল। তবে এবারের বিক্ষোভ অনেকটাই শান্ত ছিল। কিছু গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, পুলিশকে লক্ষ্য করে আতশবাজি ছোঁড়া হয়েছে, কিন্তু প্রাণহানি হয়নি। মেয়র কারেন ব্যাস কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি সামলেছেন।

সেনাদের ভূমিকাও ভিন্ন। ষাটের দশকে সেনারা যুদ্ধ ফেরত, অনেক বিক্ষোভকারী শত্রুপক্ষের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। ১৯৭০ সালে ওহাইওতে কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ন্যাশনাল গার্ড চার শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করেছিল। কিন্তু ২০২৫ সালে সেনাবাহিনী রাজনীতিতে জড়াতে চায় না। নিউইয়র্কে সাবওয়েতে সেনা মোতায়েন হলেও সেটাকে কেউ ফ্যাসিবাদের লক্ষণ মনে করেনি।

ট্রাম্পের লক্ষ্য: নাটক তৈরি করা

লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা পাঠানোর পেছনে আসলে ‘অর্ডার রক্ষার’ প্রয়োজনীয়তা তেমন ছিল না। বরং এটা এক ধরনের রাজনৈতিক নাটক। ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে ট্রাম্প এমন নিয়ম করেছে, যাতে তারা কেবল ফেডারেল সম্পত্তি রক্ষা করবে, বিক্ষোভ দমনে বা অভিবাসন অভিযানে যুক্ত হবে না।

ট্রাম্পের কাছে মূল আকর্ষণ হলো এই ঘোষণার নাটকীয়তা: “মেরিন পাঠাও!” এর মাধ্যমে তিনি তার পছন্দের কাজগুলো করতে পারেন: উদারপন্থীদের ভয় দেখানো, শক্ত প্রতিচবি দেখানো এবং সংবাদ শিরোনাম দখল করা। ফলে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় সেনাদের সামনে মেক্সিকান পতাকায় মোড়া বিক্ষোভকারী, পেছনে আগুন ও ধোঁয়া।

বিপজ্জনক মোড়ের আশঙ্কা

ট্রাম্প সম্প্রতি ফোর্ট ব্র্যাগে সেনাদের সামনে এক বিশাল সমাবেশ করেছেন, যেখানে সেনাদের মধ্যেও ‘মেগা’ (MAGA: Make America Great Again) উন্মাদনা ছড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে এ সপ্তাহান্তে লস অ্যাঞ্জেলেসসহ অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ চলাকালে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

আশাবাদের বার্তা

এ এক বিপজ্জনক সময় আমেরিকার জন্য। তবে গভর্নর নিউসাম সঠিক সুরে বক্তব্য রেখেছেন: “নাটক নয়, নিরাপত্তা চাই। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হোক, কিন্তু অপরাধ সহ্য করা হবে না।”

সবচেয়ে শক্তিশালী বার্তাটি এসেছে সেই বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে, যারা ন্যাশনাল গার্ডের সামনে ফুল রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের এ প্রচেষ্টায় হয়তো এখনো সেই আমেরিকার ছবিটি ফুটে উঠছে, যেখানে উভয় পক্ষই একদিন আবার বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে।

শিবসা নদী: শতবর্ষী এক প্রাণপ্রবাহ ও তার সুন্দরবনের প্রভাব

রাজনৈতিক বিভাজনে ওই বুদ্ধিজীবিরা ভুলপাশে ছিলেন

১১:০০:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

ষাটের দশকের আন্দোলন থেকে আজকের নাটকীয়তা

১৯৬০-এর দশকে আমেরিকায় ইয়িপি নামের একদল বিপ্লবী চিন্তাবিদ একটি তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, আমেরিকার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ পচে গেছে, আর সেটা দেখানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টেলিভিশনের জন্য নাটকীয় দৃশ্য তৈরি করা। তারা নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ডলার ছড়িয়ে দিয়েছিল, পেন্টাগনকে ‘ভাসানোর’ চেষ্টাও করেছিল। তারা ভাবত, যদি পুলিশ বা সেনারা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করে, তবে সাধারণ মানুষ বুঝবে তারা এক ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে বাস করছে।

কিন্তু উল্টোটা হয়েছিল। ‘নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ’ এসব কাণ্ড দেখে রিচার্ড নিকসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। ইয়িপিদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল— কে শৃঙ্খলার পক্ষে দাঁড়াবে, সেই মৌলিক রাজনৈতিক বিভাজনে তারা ভুল পাশে ছিল।

লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা মোতায়েন: ট্রাম্পের নতুন কৌশল

বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা মোতায়েন করে দেখাতে চাইছেন, তিনিই শৃঙ্খলার পক্ষে। অন্যদিকে তার বিরোধীরা, যেমন লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাস এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম বলছেন, ট্রাম্প ইচ্ছে করেই বিশৃঙ্খলা উসকে দিচ্ছেন।

Explainer: What are US troops doing in Los Angeles? | Reuters

এই লড়াইয়ে কে জয়ী হবে তা শুধু লস অ্যাঞ্জেলেস নয়, গোটা আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প এখন এমন একটি সংঘাতের সূত্র তৈরি করেছেন, যা তার জন্য কার্যকর হলে তিনি আবারও প্রয়োগ করবেন। কারণ, আমেরিকার সব বড় শহরেই বহু অবৈধ অভিবাসী রয়েছে এবং প্রায় সব শহরই ডেমোক্রেটদের নিয়ন্ত্রণে। ট্রাম্পের ধারণা, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, সহিংসতা আর দমন-পীড়নের এই চক্র শেষ পর্যন্ত তারই উপকারে আসবে এবং তার বিরোধীদের উগ্র দেখাবে।

বিভাজিত আমেরিকা: শত্রু ও সমর্থকদের অবস্থান

আমেরিকায় রাজনৈতিক বিভাজন নতুন কিছু নয়। অনেক সময় অনলাইনে একে অপরকে ঘৃণা করলেও বাস্তবে অনেকেই একসঙ্গে থাকতে পারে। কিন্তু লস অ্যাঞ্জেলেসের এই ঘটনা আলাদা, কারণ এখানে প্রকৃত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। যেই পক্ষই সহিংসতা শুরু করুক না কেন, পরিস্থিতি বড় আকার নিতে পারে।

ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে এই বড় শহরগুলো হলো শত্রুদের আস্তানা, যেখানে ‘বিদেশি পতাকা’ ওড়ানো হয়। তাদের মতে, ডেমোক্রেট নেতারা এসব অপরাধী অভিবাসীদের আশ্রয় দেন, আইনের লঙ্ঘনকারীদের পুরস্কৃত করেন। তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ও তার সমর্থকদের প্রতি অবমাননা করা হচ্ছে, সেনা-পুলিশের সম্মান রক্ষা হচ্ছে না। তাই তারা চায় শিকাগো ও নিউইয়র্কেও একইভাবে সেনা মোতায়েন হোক।

অন্যদিকে ট্রাম্পের সমালোচকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের সরকার যে আগে নাগরিক অধিকার রক্ষায় ন্যাশনাল গার্ড পাঠাত, এখন তারাই সেনা পাঠিয়ে নাগরিক অধিকার দমন করছে ও অভিবাসীদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা মনে করেন, যারা গুরুতর অপরাধ করেছে, শুধু তাদেরই বহিষ্কার করা উচিত। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন পরিশ্রমী, সৎ অভিবাসীদেরও টার্গেট করছে।

একনায়কতন্ত্রের ঝুঁকি: সেনা ব্যবহারকে সাধারণ করে তুলছেন ট্রাম্প

ট্রাম্পের সমালোচকদের মতে, প্রেসিডেন্ট এখন একনায়কতন্ত্রে ঝুঁকছেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি তার নামে হওয়া সহিংস প্রতিবাদকেও তিনি উৎসাহিত করেছিলেন। সেনা মোতায়েনের মধ্য দিয়ে তিনি আমেরিকার রাস্তায় সামরিক উপস্থিতি সাধারণ ঘটনা বানিয়ে তুলতে চান। তার জন্মদিন ১৪ জুনে তিনি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছেন।

ষাটের দশক বনাম বর্তমান: কীভাবে ভিন্নতা আছে

এই পরিস্থিতি অনেকটাই ষাটের দশকের মতো। ১৯৬৫ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়াটস এলাকায় দাঙ্গায় ৩৪ জন নিহত হয়েছিল, হাজারজন গ্রেপ্তার হয়েছিল। তবে এবারের বিক্ষোভ অনেকটাই শান্ত ছিল। কিছু গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, পুলিশকে লক্ষ্য করে আতশবাজি ছোঁড়া হয়েছে, কিন্তু প্রাণহানি হয়নি। মেয়র কারেন ব্যাস কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি সামলেছেন।

সেনাদের ভূমিকাও ভিন্ন। ষাটের দশকে সেনারা যুদ্ধ ফেরত, অনেক বিক্ষোভকারী শত্রুপক্ষের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। ১৯৭০ সালে ওহাইওতে কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ন্যাশনাল গার্ড চার শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করেছিল। কিন্তু ২০২৫ সালে সেনাবাহিনী রাজনীতিতে জড়াতে চায় না। নিউইয়র্কে সাবওয়েতে সেনা মোতায়েন হলেও সেটাকে কেউ ফ্যাসিবাদের লক্ষণ মনে করেনি।

ট্রাম্পের লক্ষ্য: নাটক তৈরি করা

লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা পাঠানোর পেছনে আসলে ‘অর্ডার রক্ষার’ প্রয়োজনীয়তা তেমন ছিল না। বরং এটা এক ধরনের রাজনৈতিক নাটক। ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে ট্রাম্প এমন নিয়ম করেছে, যাতে তারা কেবল ফেডারেল সম্পত্তি রক্ষা করবে, বিক্ষোভ দমনে বা অভিবাসন অভিযানে যুক্ত হবে না।

ট্রাম্পের কাছে মূল আকর্ষণ হলো এই ঘোষণার নাটকীয়তা: “মেরিন পাঠাও!” এর মাধ্যমে তিনি তার পছন্দের কাজগুলো করতে পারেন: উদারপন্থীদের ভয় দেখানো, শক্ত প্রতিচবি দেখানো এবং সংবাদ শিরোনাম দখল করা। ফলে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় সেনাদের সামনে মেক্সিকান পতাকায় মোড়া বিক্ষোভকারী, পেছনে আগুন ও ধোঁয়া।

বিপজ্জনক মোড়ের আশঙ্কা

ট্রাম্প সম্প্রতি ফোর্ট ব্র্যাগে সেনাদের সামনে এক বিশাল সমাবেশ করেছেন, যেখানে সেনাদের মধ্যেও ‘মেগা’ (MAGA: Make America Great Again) উন্মাদনা ছড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে এ সপ্তাহান্তে লস অ্যাঞ্জেলেসসহ অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ চলাকালে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

আশাবাদের বার্তা

এ এক বিপজ্জনক সময় আমেরিকার জন্য। তবে গভর্নর নিউসাম সঠিক সুরে বক্তব্য রেখেছেন: “নাটক নয়, নিরাপত্তা চাই। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হোক, কিন্তু অপরাধ সহ্য করা হবে না।”

সবচেয়ে শক্তিশালী বার্তাটি এসেছে সেই বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে, যারা ন্যাশনাল গার্ডের সামনে ফুল রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের এ প্রচেষ্টায় হয়তো এখনো সেই আমেরিকার ছবিটি ফুটে উঠছে, যেখানে উভয় পক্ষই একদিন আবার বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে।