১১:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিনে ইরান- ইসরায়েলে যুদ্ধ নিয়ে ড্যানিয়েল বি. শাপিরো’র সাক্ষাত্‌কার

  • Sarakhon Report
  • ১০:৫৮:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
  • 60

১২ জুন সন্ধ্যায় ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে একাধিক বড় আঘাত হানে। লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্রঘাঁটি এবং সামরিক-রাজনৈতিক শীর্ষ নেতৃত্ব। টেলিভিশনে ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অভিযানকে সফল ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, ইরানি নেতারা কঠোর প্রতিশোধের হুমকি দেন। গোটা অঞ্চলে অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দেয়।

এ পরিস্থিতি বোঝার জন্য ফরেন অ্যাফেয়ার্স-এর সিনিয়র সম্পাদক ড্যানিয়েল ব্লক কথা বলেছেন ড্যানিয়েল বি. শাপিরোর সঙ্গে। জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপসহকারী সচিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি আটলান্টিক কাউন্সিলে ডিস্টিংগুইশড ফেলো। ২০১১-১৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল দূত এবং এর আগে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কথোপকথনটি সংক্ষিপ্ততা ও স্পষ্টতার স্বার্থে সম্পাদিত।

DOD Announces $250M to Ukraine - U.S. Embassy in Ukraine

হামলাগুলোর গুরুত্ব কতটা?

প্রশ্ন (ড্যানিয়েল ব্লক)
এই হামলাগুলো কতটা বড় ঘটনা? গত বছরের এপ্রিল ও অক্টোবরে ইসরায়েল যে হামলা করেছিল, তার তুলনায় কতটা গুরুতর?

উত্তর (ড্যানিয়েল বি. শাপিরো):
পুরো আক্রমণের মাত্রা এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবে এটি আগের দুবারের তুলনায় বহুগুণ বড়। এখনই স্পষ্ট যে নাতাঞ্জ সমৃদ্ধিকরণকেন্দ্রসহ পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা এবং উচ্চপদস্থ নেতাদের ওপর হামলা হয়েছে। এত গভীর অনুপ্রবেশ কেউই কল্পনা করেনি। এতে ইরানি শাসকগোষ্ঠী হেয়প্রতিপন্ন হবে, প্রতিশোধ চাইবে, কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে সুসংগঠিত জবাব দিতে পারবে না। অসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে ইরান বেসামরিক প্রাণহানির পাল্টা চেষ্টা করবেই।

যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক দূরত্ব

প্রশ্ন:
ট্রাম্প প্রশাসন কেন এই হামলা থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে?

উত্তর:
ট্রাম্প আরও সময় চেয়েছিলেন যেন ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা এগোয়; নেতানিয়াহু তা মানেননি। তাই ট্রাম্প ইরানের দৃষ্টি সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার টার্গেট হওয়া থেকে বিরত রাখতে চান। তিনি আলোচনার আশা বাঁচিয়ে রাখতে চান, যদিও এখন তা প্রায় অসম্ভব। ইরান হয়তো দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ঝুঁকবে, আর তখন ট্রাম্পের সামনে সামরিক পদক্ষেপের কঠিন সিদ্ধান্ত দাঁড়াবে।

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও

রুবিওর বিবৃতির অর্থ কী?

প্রশ্ন:
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, তিনি শুধু মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন, ইসরায়েলের কথা উল্লেখ করেননি—এটি কী বার্তা দেয়?

উত্তর:
রুবিও বোঝাতে চেয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় জড়িত নয় এবং ইসরায়েল এককভাবে কাজ করেছে। ইসরায়েলের নাম না নেওয়া সেই বার্তাকে আরও জোরালো করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় সহায়তা দেবে—এ বিষয়টি বদলায় না।

ইসরায়েল এখনই হামলা চালাল কেন?

প্রশ্ন:
ট্রাম্পের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইসরায়েল কেন এখনই আঘাত হানল?

উত্তর:
নেতানিয়াহু বহুদিন ধরেই বলেছেন, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র পেতে দেবেন না—এটি তার রাজনৈতিক জীবনের মূল অঙ্গীকার। সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ইসরায়েল হিজবুল্লাহকে বিধ্বস্ত করে এবং অক্টোবরে ইরানের এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ধ্বংস করে। সিরিয়ার আসাদ সরকারও পতনের পথে। ফলে ইরানের প্রতিরক্ষাকৌশল দুর্বল হয়েছে—নেতানিয়াহু মনে করেন, আঘাত হানার এমন সুযোগ আর নাও মিলতে পারে।

ইরানের পাল্টা জবাব কেমন হতে পারে?

প্রশ্ন:
ইরান কীভাবে জবাব দেবে? ইসরায়েল কীভাবে রক্ষা পেতে পারে?

উত্তর:
ইরান কয়েকশ’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে পারে, যেমন তারা আগেও করেছে। এপ্রিল ২০২৪-এ তারা ১০০-এর বেশি মাঝারি-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে; অক্টোবরে তার দ্বিগুণ। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জোট এবং ইসরায়েলের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা সফল হয়। এবারও তেমন রক্ষা কৌশল চলবে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ইসরায়েলে দুইটি থাড ব্যাটারি মোতায়েন করেছে, যা ইসরায়েলের অ্যারো প্রতিরক্ষা ও মার্কিন নৌবাহিনীর সক্ষমতাকে সম্পূরক করবে।

হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেন থেকে, আর দুর্বল হলেও হিজবুল্লাহ লেবানন থেকে হামলার চেষ্টা করতে পারে। তবে তাদের সক্ষমতা সীমিত।

ইসরায়েলের সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ

প্রশ্ন:
ইরানের পাল্টা হামলার পর ইসরায়েল কি আরও আঘাত করবে?

উত্তর:
নেতানিয়াহু বলেছেন, পরমাণু হুমকি দূর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে—অর্থাৎ এটি একবারের হামলা নয়, একটি সামরিক প্রচার অভিযান। ইরানের ক্ষতি-সাধন সীমিত থাকলে উত্তেজনা কমতে পারে; গুরুতর প্রাণহানি হলে ইসরায়েল আবার আঘাত হানবে।

গত অক্টোবরে ইসরায়েল হামলার আগে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমন্বয় করেছিল, এবার তেমনটি হয়নি। এতে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে। এমনকি ইরান দ্রুত সরে গেলেও ইসরায়েলকে সাইবার হামলা ও সন্ত্রাসী তৎপরতার মতো অসমমুখী আক্রমণ মোকাবিলা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রকেও কি টার্গেট করা হবে?

প্রশ্ন:
ইরান কি যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীকে আক্রমণ করতে পারে?

উত্তর:
যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—ওয়াশিংটন হামলায় নেই এবং ইরান যেন মার্কিন বাহিনীকে নিশানা না করে। ইরান বুঝলে যে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়ালে আরও ভয়াবহ পাল্টা আঘাত পেতে পারে, তারা হয়তো শুধু ইসরায়েলকেই লক্ষ্য করবে। তাদের আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার সহযোগিতা কমিয়ে আবার গোপনে স্থাপনাগুলো মজবুত করার চেষ্টা দেখা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে কী হবে?

প্রশ্ন:
ধরা যাক ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করল, অথবা যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প ঠেকাতে সরাসরি হামলা চালাল—কী হতে পারে?

উত্তর:
মার্কিন নৌবহর ইউএসএস কার্ল ভিনসন এলাকায় আছে; প্রয়োজনে আরেকটি ক্যারিয়ার বাহিনী পাঠানো হবে। বাড়তি যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্কার ও উদ্ধার-হেলিকপ্টার মোতায়েন হবে। পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ক্ষমতা আছে—বিশেষ করে ফোর্ডোতে।

ইরান চুপ করে থাকবে না; হাজারো স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা মার্কিন ঘাঁটিতে ছোড়া হতে পারে, যেমন ২০২০-তে কাসেম সোলাইমানি হত্যার পর করেছিল। ইরাক-সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়ারাও যুক্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাক সরকারকে চাপ দিতে হবে যেন তারা মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং হামলাকারীদের ওপর পাল্টা আঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। হুথিদেরও লোহিত সাগরে হামলা থেকে নিবৃত্ত করতে হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নিজ ভূখণ্ডেও অসামরিক হামলা এড়াতে সজাগ থাকতে হবে।

আরব রাষ্ট্রগুলোর ঝুঁকি

প্রশ্ন:
ইরান কি উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোকে আক্রমণ করতে পারে?

উত্তর:
গালফ রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলি হামলাকে প্রকাশ্যে নিন্দা করতে পারে, যাতে ইরান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র না ছোড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি লড়াইয়ে জড়ালে ইরান বেসামরিক এলাকা বা জ্বালানি স্থাপনায় আঘাত হানতে পারে। ইরান সম্ভবত হরমুজ প্রণালী বন্ধেরও চেষ্টা করবে—নৌঘাঁটি, সমুদ্র-মাইন বা ফাস্ট বোট থেকে লিম্পেট মাইন দিয়ে। সৌদি আরব ও আমিরাতের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা থাকলেও ঝুঁকি থাকবে।

ইরানের পারমাণবিক ভবিষ্যৎ কী?

প্রশ্ন:
এই যুদ্ধ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?

উত্তর:
ইসরায়েল একাধারে কয়েক মাস, আর যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে এক বছরের মতো ইরানের কর্মসূচি পিছিয়ে দিতে পারে—যদি ইরান সঙ্গে সঙ্গেই পুনর্গঠন শুরু করে। তবে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক কারণেও দেরি হতে পারে, আবার ইরান প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে ও পুনরায় আঘাতের ঝুঁকি থাকলে কাজ স্থগিত করতে পারে। তবুও এখন সবচেয়ে সম্ভাব্য দৃশ্যপট হলো—ইরান মরিয়া হয়ে পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে ঝাঁপাবে। তখন ট্রাম্পের সামনে সিদ্ধান্ত থাকবে, তিনি কি শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠেকাবেন, নাকি আরও একটি মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন।

ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিনে ইরান- ইসরায়েলে যুদ্ধ নিয়ে ড্যানিয়েল বি. শাপিরো’র সাক্ষাত্‌কার

১০:৫৮:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

১২ জুন সন্ধ্যায় ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে একাধিক বড় আঘাত হানে। লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্রঘাঁটি এবং সামরিক-রাজনৈতিক শীর্ষ নেতৃত্ব। টেলিভিশনে ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অভিযানকে সফল ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, ইরানি নেতারা কঠোর প্রতিশোধের হুমকি দেন। গোটা অঞ্চলে অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দেয়।

এ পরিস্থিতি বোঝার জন্য ফরেন অ্যাফেয়ার্স-এর সিনিয়র সম্পাদক ড্যানিয়েল ব্লক কথা বলেছেন ড্যানিয়েল বি. শাপিরোর সঙ্গে। জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপসহকারী সচিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি আটলান্টিক কাউন্সিলে ডিস্টিংগুইশড ফেলো। ২০১১-১৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল দূত এবং এর আগে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কথোপকথনটি সংক্ষিপ্ততা ও স্পষ্টতার স্বার্থে সম্পাদিত।

DOD Announces $250M to Ukraine - U.S. Embassy in Ukraine

হামলাগুলোর গুরুত্ব কতটা?

প্রশ্ন (ড্যানিয়েল ব্লক)
এই হামলাগুলো কতটা বড় ঘটনা? গত বছরের এপ্রিল ও অক্টোবরে ইসরায়েল যে হামলা করেছিল, তার তুলনায় কতটা গুরুতর?

উত্তর (ড্যানিয়েল বি. শাপিরো):
পুরো আক্রমণের মাত্রা এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবে এটি আগের দুবারের তুলনায় বহুগুণ বড়। এখনই স্পষ্ট যে নাতাঞ্জ সমৃদ্ধিকরণকেন্দ্রসহ পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা এবং উচ্চপদস্থ নেতাদের ওপর হামলা হয়েছে। এত গভীর অনুপ্রবেশ কেউই কল্পনা করেনি। এতে ইরানি শাসকগোষ্ঠী হেয়প্রতিপন্ন হবে, প্রতিশোধ চাইবে, কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে সুসংগঠিত জবাব দিতে পারবে না। অসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে ইরান বেসামরিক প্রাণহানির পাল্টা চেষ্টা করবেই।

যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক দূরত্ব

প্রশ্ন:
ট্রাম্প প্রশাসন কেন এই হামলা থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে?

উত্তর:
ট্রাম্প আরও সময় চেয়েছিলেন যেন ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা এগোয়; নেতানিয়াহু তা মানেননি। তাই ট্রাম্প ইরানের দৃষ্টি সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার টার্গেট হওয়া থেকে বিরত রাখতে চান। তিনি আলোচনার আশা বাঁচিয়ে রাখতে চান, যদিও এখন তা প্রায় অসম্ভব। ইরান হয়তো দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ঝুঁকবে, আর তখন ট্রাম্পের সামনে সামরিক পদক্ষেপের কঠিন সিদ্ধান্ত দাঁড়াবে।

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও

রুবিওর বিবৃতির অর্থ কী?

প্রশ্ন:
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, তিনি শুধু মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন, ইসরায়েলের কথা উল্লেখ করেননি—এটি কী বার্তা দেয়?

উত্তর:
রুবিও বোঝাতে চেয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় জড়িত নয় এবং ইসরায়েল এককভাবে কাজ করেছে। ইসরায়েলের নাম না নেওয়া সেই বার্তাকে আরও জোরালো করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় সহায়তা দেবে—এ বিষয়টি বদলায় না।

ইসরায়েল এখনই হামলা চালাল কেন?

প্রশ্ন:
ট্রাম্পের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইসরায়েল কেন এখনই আঘাত হানল?

উত্তর:
নেতানিয়াহু বহুদিন ধরেই বলেছেন, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র পেতে দেবেন না—এটি তার রাজনৈতিক জীবনের মূল অঙ্গীকার। সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ইসরায়েল হিজবুল্লাহকে বিধ্বস্ত করে এবং অক্টোবরে ইরানের এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ধ্বংস করে। সিরিয়ার আসাদ সরকারও পতনের পথে। ফলে ইরানের প্রতিরক্ষাকৌশল দুর্বল হয়েছে—নেতানিয়াহু মনে করেন, আঘাত হানার এমন সুযোগ আর নাও মিলতে পারে।

ইরানের পাল্টা জবাব কেমন হতে পারে?

প্রশ্ন:
ইরান কীভাবে জবাব দেবে? ইসরায়েল কীভাবে রক্ষা পেতে পারে?

উত্তর:
ইরান কয়েকশ’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে পারে, যেমন তারা আগেও করেছে। এপ্রিল ২০২৪-এ তারা ১০০-এর বেশি মাঝারি-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে; অক্টোবরে তার দ্বিগুণ। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জোট এবং ইসরায়েলের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষা সফল হয়। এবারও তেমন রক্ষা কৌশল চলবে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ইসরায়েলে দুইটি থাড ব্যাটারি মোতায়েন করেছে, যা ইসরায়েলের অ্যারো প্রতিরক্ষা ও মার্কিন নৌবাহিনীর সক্ষমতাকে সম্পূরক করবে।

হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেন থেকে, আর দুর্বল হলেও হিজবুল্লাহ লেবানন থেকে হামলার চেষ্টা করতে পারে। তবে তাদের সক্ষমতা সীমিত।

ইসরায়েলের সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ

প্রশ্ন:
ইরানের পাল্টা হামলার পর ইসরায়েল কি আরও আঘাত করবে?

উত্তর:
নেতানিয়াহু বলেছেন, পরমাণু হুমকি দূর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে—অর্থাৎ এটি একবারের হামলা নয়, একটি সামরিক প্রচার অভিযান। ইরানের ক্ষতি-সাধন সীমিত থাকলে উত্তেজনা কমতে পারে; গুরুতর প্রাণহানি হলে ইসরায়েল আবার আঘাত হানবে।

গত অক্টোবরে ইসরায়েল হামলার আগে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমন্বয় করেছিল, এবার তেমনটি হয়নি। এতে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে। এমনকি ইরান দ্রুত সরে গেলেও ইসরায়েলকে সাইবার হামলা ও সন্ত্রাসী তৎপরতার মতো অসমমুখী আক্রমণ মোকাবিলা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রকেও কি টার্গেট করা হবে?

প্রশ্ন:
ইরান কি যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীকে আক্রমণ করতে পারে?

উত্তর:
যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—ওয়াশিংটন হামলায় নেই এবং ইরান যেন মার্কিন বাহিনীকে নিশানা না করে। ইরান বুঝলে যে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়ালে আরও ভয়াবহ পাল্টা আঘাত পেতে পারে, তারা হয়তো শুধু ইসরায়েলকেই লক্ষ্য করবে। তাদের আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার সহযোগিতা কমিয়ে আবার গোপনে স্থাপনাগুলো মজবুত করার চেষ্টা দেখা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে কী হবে?

প্রশ্ন:
ধরা যাক ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করল, অথবা যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প ঠেকাতে সরাসরি হামলা চালাল—কী হতে পারে?

উত্তর:
মার্কিন নৌবহর ইউএসএস কার্ল ভিনসন এলাকায় আছে; প্রয়োজনে আরেকটি ক্যারিয়ার বাহিনী পাঠানো হবে। বাড়তি যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্কার ও উদ্ধার-হেলিকপ্টার মোতায়েন হবে। পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ক্ষমতা আছে—বিশেষ করে ফোর্ডোতে।

ইরান চুপ করে থাকবে না; হাজারো স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা মার্কিন ঘাঁটিতে ছোড়া হতে পারে, যেমন ২০২০-তে কাসেম সোলাইমানি হত্যার পর করেছিল। ইরাক-সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়ারাও যুক্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাক সরকারকে চাপ দিতে হবে যেন তারা মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং হামলাকারীদের ওপর পাল্টা আঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। হুথিদেরও লোহিত সাগরে হামলা থেকে নিবৃত্ত করতে হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নিজ ভূখণ্ডেও অসামরিক হামলা এড়াতে সজাগ থাকতে হবে।

আরব রাষ্ট্রগুলোর ঝুঁকি

প্রশ্ন:
ইরান কি উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোকে আক্রমণ করতে পারে?

উত্তর:
গালফ রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলি হামলাকে প্রকাশ্যে নিন্দা করতে পারে, যাতে ইরান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র না ছোড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি লড়াইয়ে জড়ালে ইরান বেসামরিক এলাকা বা জ্বালানি স্থাপনায় আঘাত হানতে পারে। ইরান সম্ভবত হরমুজ প্রণালী বন্ধেরও চেষ্টা করবে—নৌঘাঁটি, সমুদ্র-মাইন বা ফাস্ট বোট থেকে লিম্পেট মাইন দিয়ে। সৌদি আরব ও আমিরাতের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা থাকলেও ঝুঁকি থাকবে।

ইরানের পারমাণবিক ভবিষ্যৎ কী?

প্রশ্ন:
এই যুদ্ধ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?

উত্তর:
ইসরায়েল একাধারে কয়েক মাস, আর যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে এক বছরের মতো ইরানের কর্মসূচি পিছিয়ে দিতে পারে—যদি ইরান সঙ্গে সঙ্গেই পুনর্গঠন শুরু করে। তবে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক কারণেও দেরি হতে পারে, আবার ইরান প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে ও পুনরায় আঘাতের ঝুঁকি থাকলে কাজ স্থগিত করতে পারে। তবুও এখন সবচেয়ে সম্ভাব্য দৃশ্যপট হলো—ইরান মরিয়া হয়ে পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে ঝাঁপাবে। তখন ট্রাম্পের সামনে সিদ্ধান্ত থাকবে, তিনি কি শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠেকাবেন, নাকি আরও একটি মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন।