পরিকল্পনার পেছনের কাহিনি
ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল গোপনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ওপর প্রাণঘাতী হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই প্রস্তাবে অনুমোদন দেননি। হোয়াইট হাউস স্পষ্ট করে জানায়, তারা ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে ইসরায়েলকে সীমিত সহায়তা দিতে চায়, কিন্তু বড় পরিসরের আঞ্চলিক যুদ্ধ এড়াতে বদ্ধপরিকর।
হোয়াইট হাউসের সীমা-রেখা
মার্কিন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বললেন, ‘ইরান এখনো কোনো মার্কিন নাগরিক হত্যা করেনি। সে পর্যন্ত কিছু না ঘটলে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে টার্গেট করার কথা উঠছে না।’ অর্থাৎ, হোয়াইট হাউসের চোখে কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোই এখন পর্যন্ত সেরা কৌশল।
জি-৭ সম্মেলনে উত্তাপ
ক্যানাডার কালগারিতে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে—যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত আলোচনার শীর্ষে থাকবে। বড় শক্তিগুলোর লক্ষ্য: সংঘাত সীমিত রেখে পারমাণবিক উত্তেজনা শান্ত করা।
ট্রাম্পের ‘চুক্তি’ ভাবনা
নিজের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল একটি চুক্তি করবে, আর সেটা খুব শিগগিরই। শান্তি আসছে।’ পরে এবিসি নিউজকে জানান, এই প্রক্রিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মধ্যস্থতায় আনতে তিনি কথা বলেছেন। এই ‘ব্যাক-চ্যানেল’ উদ্যোগ রাশিয়ার মাধ্যমেই এগোতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে।
ইসরায়েলে বিপর্যয়কর সকাল
ইরানি পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১৩ জন নিহত ও ৩৭০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন; ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। উত্তর ও মধ্য ইসরায়েলের আবাসিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। বাট ইয়াম-এ একটি আটতলা ভবন ভেঙে পড়ে; সেখানে কমপক্ষে ৩৫ জন নিখোঁজ।
ইসরায়েলের পাল্টা অভিযান
রবিবার ইসরায়েল তার ‘অপারেশনের শুরু থেকে সবচেয়ে দূরের আঘাত’ বলে দাবি করে মাশহাদের বিমানবন্দরে একটি ইরানি রিফুয়েলিং প্লেন ধ্বংস করে। আইডিএফ জানায়, ‘ইরানের আকাশসীমায় সর্বাত্মক আধিপত্য’ প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য।
তেহরানে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ
ইরানের রাজধানীতে পাঁচটি গাড়িবোমা একযোগে বিস্ফোরিত হয়। সরকারপক্ষ ইসরায়েলকে দায়ী করে—ঘটনার কোডনেম দেয় ‘বিপার্স ২.০’। এর আগে আলবর্জ প্রদেশে দুই মোসাদ এজেন্ট গ্রেপ্তারের দাবি করেছিল পুলিশ, যদিও ইসরায়েল জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে।
ইয়েমেন ও অন্যান্য ফ্রন্ট
ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদেরও ইসরায়েল নিশানা করে; সেখানে শীর্ষ এক নেতাকে হত্যার দাবি করেছে, যদিও সফলতার সত্যতা নিশ্চিত হয়নি। একই সঙ্গে সিরিয়া ও লেবাননের সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
নিহত শীর্ষ কমান্ডারদের দাবি-প্রতিদাবি
ইসরায়েলি সূত্র জানায়, তেহরানে আঘাতে আইআরজিসি গোয়েন্দাপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি ও তাঁর উপপ্রধান ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন। আরও দাবি করা হয়, ইরানের বিমানবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদ বাহেদিসহ কয়েকজন সম্ভাব্য উত্তরসূরিও নিহত। তেহরান আনুষ্ঠানিকভাবে এসব দাবি স্বীকার করেনি, কিন্তু অন্তত ১২৮ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে।
মানবিক ও অবকাঠামো সংকট
পর্যবেক্ষকরা জানান, তেহরানের রাস্তায় ভাঙা পাইপলাইন দিয়ে বৃষ্টির মতো ময়লা পানি ছড়াচ্ছে; নাগরিকেরা গাড়ি নিয়ে শহর ছেড়ে পালাতে গিয়ে যানজটে আটকা পড়েছেন। ইসরায়েলের উত্তর বন্দরনগরী হাইফায় সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগারে হামলায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রভাব ফেলতে পারে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও নিরাপত্তা পদক্ষেপ
রাশিয়া পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় তেহরানে নিজ দেশের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। ব্রিটিশ কূটনীতিকদের পরিবারও দেরিতে হলেও ইরান ত্যাগ করেছে; যদিও দূতাবাস এখনো খোলা। ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যুক্তরাজ্য সরাসরি ইসরায়েলকে সহায়তা করলে তারা ব্রিটেনে হামলা করতে কুণ্ঠাবোধ করবে না।
সমাপনী কথা
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত তৃতীয় দিনে গিয়ে বহু মানুষের প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ভাঙচুর ডেকে এনেছে। ট্রাম্পের ভেটো ইঙ্গিত দেয়, ওয়াশিংটন এখনো আঞ্চলিক যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। কিন্তু পাল্টাপাল্টি হামলা রোখার সুনির্দিষ্ট কূটনৈতিক সমাধান এখনো অধরা—যা বিশ্ব নেতাদের গার্ডারভিলে এক নতুন পরীক্ষার মুখে দাঁড় করিয়েছে।