০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

হাইড্রোপাওয়ার বাড়াচ্ছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভারসাম্য রক্ষায় নতুন উদ্যোগ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাম্পড স্টোরেজ হাইড্রোপাওয়ার প্ল্যান্ট বা পাম্পভিত্তিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিস্তার বাড়ছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে জলাধার থেকে জল পাম্প করে উচ্চতর স্থানে তুলে রেখে পরে তা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। এমন বিদ্যুৎকেন্দ্র নবায়নযোগ্য জ্বালানির চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০৩৩ সালের মধ্যে এই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৮ গুণ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

থাইল্যান্ডে ৯ হাজার কোটি বাতের প্রকল্প

থাইল্যান্ডের ইলেকট্রিসিটি জেনারেটিং অথরিটি (EGAT) আগামী ২০৩৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনটি নতুন পাম্পড স্টোরেজ কেন্দ্র গড়ে তুলতে যাচ্ছে। এর জন্য ৯০ বিলিয়ন বাত (২.৮ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

চুলাভর্ণা বাঁধের আশপাশে নতুন জলাধার, খালপথ এবং জেনারেটর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা বর্তমানে সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই কেন্দ্র ২০৩৪ সাল থেকে চালু হওয়ার কথা। এছাড়াও দেশটির পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে আরও দুটি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জরিপ চলছে।

প্রযুক্তি ও কার্যকারিতা

এই কেন্দ্রগুলো দুটি ভিন্ন উচ্চতার বাঁধের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। রাতের সময়, যখন বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে, তখন নিম্ন বাঁধ থেকে জল উপরের বাঁধে পাম্প করা হয়। পরে যখন চাহিদা বাড়ে, তখন সেই জল নিচে নামিয়ে জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়।

যেহেতু সৌর ও বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য উৎসে উৎপাদন সবসময় একরকম থাকে না, তাই এই ধরনের কেন্দ্রকে এক ধরনের “প্রাকৃতিক ব্যাটারি” হিসেবে ধরা হচ্ছে।

EGAT-এর প্রভাব ও লক্ষ্য

EGAT দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বড় পাম্পড স্টোরেজ হাইড্রোপাওয়ার অপারেটর। ২০০৪ সালে প্রথম কেন্দ্র চালু করার পর থেকে তারা তিনটি কেন্দ্র পরিচালনা করছে। নতুন কেন্দ্রগুলো চালু হলে EGAT-এর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৪,০০০ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে, যা বর্তমানের ২.৬ গুণ। এই নতুন কেন্দ্রগুলো একসাথে প্রতি বছর প্রায় ৫,০০০ জাপানি গৃহস্থালির বিদ্যুৎ চাহিদা সরবরাহ করতে পারবে।

ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের পরিকল্পনা

ইন্দোনেশিয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থা PLN ২০২৮ সালে প্রথম পাম্পড স্টোরেজ কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা করছে। এই প্রকল্পে জাপানের নির্মাণ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই অংশ নিচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি প্রকাশিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় PLN শুধুমাত্র জাভা দ্বীপেই আরও তিনটি কেন্দ্র গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।

ভিয়েতনামেও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দক্ষিণাঞ্চলে একটি পাম্পড স্টোরেজ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়লেও, এসব উৎস আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সরবরাহে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। যদি সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য না থাকে, তবে জাতীয় গ্রিডে ফ্রিকোয়েন্সির অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে, যা বড় ধরনের ব্ল্যাকআউট ঘটাতে পারে।

থাইল্যান্ডের খসড়া পাওয়ার প্ল্যান অনুসারে, ২০৩৭ সালের মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের অংশ ২ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (IEA) হিসাব অনুযায়ী, ২০৩৭ সালের মধ্যে থাইল্যান্ডে সৌর ও বায়ুশক্তি মিলিয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ উৎপাদন হয়তো অপচয়ের মুখে পড়তে পারে, যেটা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।

ব্যয় ও প্রযুক্তি উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা

পাম্পড স্টোরেজ কেন্দ্রের অন্যতম সুবিধা হলো কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন। EGAT-এর উপ-গভর্নর তাওয়াচাই সুমরানওয়ানিচ জানিয়েছেন, প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ২ বাত (৬ মার্কিন সেন্ট)। তবে কেন্দ্র নির্মাণে বাঁধ ও অন্যান্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পের কারণে প্রাথমিক খরচ অনেক বেশি। এর পাশাপাশি, পাহাড়ি এলাকায় যেখানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব, সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের অবকাঠামো নেই। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকেই নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে।

রিস্টাড এনার্জির নবায়নযোগ্য শক্তি বিশ্লেষক নেভি কাহিয়া উইনোফা জানিয়েছেন, অনেক সময় খরচ কমাতে পুরোনো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংস্কার করে তা ব্যবহার করে পাম্পড স্টোরেজ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।

বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি

জাপানে ১৯৭০-এর দশকে এই প্রযুক্তির সূচনা হয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময়। এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই প্রযুক্তির বিস্তারে হিটাচি ও তোশিবার মতো জাপানি কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, কারণ তারা ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করেছে।

হাইড্রোপাওয়ার বাড়াচ্ছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম

০৮:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভারসাম্য রক্ষায় নতুন উদ্যোগ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাম্পড স্টোরেজ হাইড্রোপাওয়ার প্ল্যান্ট বা পাম্পভিত্তিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিস্তার বাড়ছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে জলাধার থেকে জল পাম্প করে উচ্চতর স্থানে তুলে রেখে পরে তা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। এমন বিদ্যুৎকেন্দ্র নবায়নযোগ্য জ্বালানির চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০৩৩ সালের মধ্যে এই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৮ গুণ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

থাইল্যান্ডে ৯ হাজার কোটি বাতের প্রকল্প

থাইল্যান্ডের ইলেকট্রিসিটি জেনারেটিং অথরিটি (EGAT) আগামী ২০৩৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনটি নতুন পাম্পড স্টোরেজ কেন্দ্র গড়ে তুলতে যাচ্ছে। এর জন্য ৯০ বিলিয়ন বাত (২.৮ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

চুলাভর্ণা বাঁধের আশপাশে নতুন জলাধার, খালপথ এবং জেনারেটর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা বর্তমানে সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই কেন্দ্র ২০৩৪ সাল থেকে চালু হওয়ার কথা। এছাড়াও দেশটির পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে আরও দুটি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জরিপ চলছে।

প্রযুক্তি ও কার্যকারিতা

এই কেন্দ্রগুলো দুটি ভিন্ন উচ্চতার বাঁধের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। রাতের সময়, যখন বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে, তখন নিম্ন বাঁধ থেকে জল উপরের বাঁধে পাম্প করা হয়। পরে যখন চাহিদা বাড়ে, তখন সেই জল নিচে নামিয়ে জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়।

যেহেতু সৌর ও বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য উৎসে উৎপাদন সবসময় একরকম থাকে না, তাই এই ধরনের কেন্দ্রকে এক ধরনের “প্রাকৃতিক ব্যাটারি” হিসেবে ধরা হচ্ছে।

EGAT-এর প্রভাব ও লক্ষ্য

EGAT দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বড় পাম্পড স্টোরেজ হাইড্রোপাওয়ার অপারেটর। ২০০৪ সালে প্রথম কেন্দ্র চালু করার পর থেকে তারা তিনটি কেন্দ্র পরিচালনা করছে। নতুন কেন্দ্রগুলো চালু হলে EGAT-এর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৪,০০০ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে, যা বর্তমানের ২.৬ গুণ। এই নতুন কেন্দ্রগুলো একসাথে প্রতি বছর প্রায় ৫,০০০ জাপানি গৃহস্থালির বিদ্যুৎ চাহিদা সরবরাহ করতে পারবে।

ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের পরিকল্পনা

ইন্দোনেশিয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থা PLN ২০২৮ সালে প্রথম পাম্পড স্টোরেজ কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা করছে। এই প্রকল্পে জাপানের নির্মাণ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই অংশ নিচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি প্রকাশিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় PLN শুধুমাত্র জাভা দ্বীপেই আরও তিনটি কেন্দ্র গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।

ভিয়েতনামেও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দক্ষিণাঞ্চলে একটি পাম্পড স্টোরেজ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়লেও, এসব উৎস আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সরবরাহে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। যদি সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য না থাকে, তবে জাতীয় গ্রিডে ফ্রিকোয়েন্সির অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে, যা বড় ধরনের ব্ল্যাকআউট ঘটাতে পারে।

থাইল্যান্ডের খসড়া পাওয়ার প্ল্যান অনুসারে, ২০৩৭ সালের মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের অংশ ২ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (IEA) হিসাব অনুযায়ী, ২০৩৭ সালের মধ্যে থাইল্যান্ডে সৌর ও বায়ুশক্তি মিলিয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ উৎপাদন হয়তো অপচয়ের মুখে পড়তে পারে, যেটা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।

ব্যয় ও প্রযুক্তি উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা

পাম্পড স্টোরেজ কেন্দ্রের অন্যতম সুবিধা হলো কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন। EGAT-এর উপ-গভর্নর তাওয়াচাই সুমরানওয়ানিচ জানিয়েছেন, প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ২ বাত (৬ মার্কিন সেন্ট)। তবে কেন্দ্র নির্মাণে বাঁধ ও অন্যান্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পের কারণে প্রাথমিক খরচ অনেক বেশি। এর পাশাপাশি, পাহাড়ি এলাকায় যেখানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব, সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের অবকাঠামো নেই। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকেই নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে।

রিস্টাড এনার্জির নবায়নযোগ্য শক্তি বিশ্লেষক নেভি কাহিয়া উইনোফা জানিয়েছেন, অনেক সময় খরচ কমাতে পুরোনো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংস্কার করে তা ব্যবহার করে পাম্পড স্টোরেজ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।

বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি

জাপানে ১৯৭০-এর দশকে এই প্রযুক্তির সূচনা হয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময়। এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই প্রযুক্তির বিস্তারে হিটাচি ও তোশিবার মতো জাপানি কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, কারণ তারা ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করেছে।