১১:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

জিকা ভাইরাসের ছায়া: বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে?

১৯ জুন ২০২৫-এ সিঙ্গাপুরের উডল্যান্ডস স্ট্রিট ১১ ও ৩২-এ দুই জনের শরীরে জিকা শনাক্ত হওয়ার খবর নতুন করে অঞ্চলজুড়ে সতর্কতা জাগিয়েছে। সিঙ্গাপুরের জাতীয় পরিবেশ সংস্থা (NEA) জানিয়েছে, এলোকেশনে মশা ও বর্জ্যজলে জিকা–সংক্রান্ত ‘পারসিস্টেন্ট সিগন্যাল’ মিলেছে, যা স্থানীয় সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করে। প্রশ্ন উঠেছে—সামাজিক, ভৌগোলিক ও আবহাওয়াগত মিল থাকার কারণে বাংলাদেশও কি অনুরূপ ঝুঁকির মুখোমুখি?

জিকা ভাইরাস: সংক্রমণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

জিকা মূলত এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ে ছড়ায়, তবে গর্ভকালীন মা-শিশু সংক্রমণ, যৌন সম্পর্ক ও রক্তসঞ্চালনের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। অধিকাংশ সংক্রমণে উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে, কিন্তু গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে অপরিণত মস্তিষ্ক ও ছোট মাথা (মাইক্রোসেফালি)-সহ একাধিক জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৬-তে এটিকে ‘পাবলিক হেলথ এমার্জেন্সি’ ঘোষণা করেছিল।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চিত্র: ডেডিকেটেড ক্লাস্টার থেকে আলোড়ন

icddr,b Lab Services : Molecular and Landscape Epidemiology

  • ২০২৩-এ ঢাকার মহাখালী এলাকায় গরমজ্বর ও ব্যথার উপসর্গ নিয়েicddr,b-এর ল্যাবে আসা ১৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকেরা পাঁচ জনের দেহে জিকার অস্তিত্ব পান। পাঁচ জনই এক কিলোমিটারের ভেতর বাস করতেন এবং তাঁদের কারও সাম্প্রতিক বিদেশভ্রমণের ইতিহাস ছিল না—যা স্থানীয় সংক্রমণের স্পষ্ট প্রমাণ।
    • ঢাকায় মাত্র ছয় মাস আগেও আরও আটটি জিকা রোগীর উপস্থিতি ধরা পড়ে, যাদের বেশির ভাগই পুরনো রাজধানী এলাকার অধিবাসী।
    • গবেষকেরা সতর্ক করছেন, উপসর্গ মিলের কারণে জিকা প্রায়ই ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে গুলিয়ে যায়, ফলে প্রকৃত বোঝাপড়া ও সংখ্যা এখনও অধরা।

ঝুঁকি বাড়ানোর সহায়ক বাস্তবতা

এডিস মশার আধিপত্য ও আবহাওয়া

দীর্ঘ মনসুন, উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু এবং অপর্যাপ্ত নগর স্বাস্থ্যব্যবস্থার মিলিত প্রভাবে এডিস মশা সারাবছর ছড়িয়ে থাকে। ২০২৩-এর ঐতিহাসিক ডেঙ্গু বিপর্যয়ে ৩,২১,১৭৯ সংক্রমণ ও ১,৭০৫ মৃত্যুই তার প্রমাণ।

শহুরে ঘনত্ব ও জনচলাচল

ঢাকার প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনঘনত্ব ৪৪ হাজারের বেশি; একই সঙ্গে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ জিকা–প্রবণ দেশে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়মিত যাতায়াত বাংলাদেশকে সংক্রমণের ‘গেটওয়ে’ করে তুলছে।

 পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা

জিকা শনাক্তে দরকার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মতো নির্দিষ্ট ল্যাব সুবিধা, যা বর্তমানে IEDCR, icddr,b এবং হাতে-গোনা কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে সীমাবদ্ধ। ফলে নীরব সংক্রমণ ধরা পড়ার সুযোগ কম।

এখন পর্যন্ত সরকারি প্রস্তুতি

  • জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (DGHS)এডিস নিয়ন্ত্রণে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনকে সপ্তাহভিত্তিক উন্মুক্ত জলাশয় পরিষ্কার, মশানিধন স্প্রে ও ডোমেস্টিক ভেক্টর কন্ট্রোল টিম গঠনের নির্দেশ দিয়েছে।
    • IEDCR-এর আওতায় সীমিত আকারে জিকা নজরদারি চালু রয়েছে; গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন খোলা হয়েছে।
    • স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে জিকা সচেতনতা সপ্তাহ পালন এবং এডিস প্রজননস্থল ‘সোর্স রিডাকশন’ কর্মসূচি চালু করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৮৪ কর্মচারীকে বদলি

যেসব পদক্ষেপ জরুরি

 সমন্বিত আর্বো ভাইরাস টাস্ক-ফোর্স

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকার সমন্বিত রোগতত্ত্ব ল্যাব নেটওয়ার্ক গড়ে এলাকাভিত্তিক সর্বশেষ আইসোলেট দ্রুত শনাক্ত করতে হবে। একীভূত তথ্যব্যাংক থাকলে হটস্পট চিহ্নিত ও অগ্রিম সতর্কতা সহজ হবে।

পরীক্ষা-সুবিধা জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে জেলা হাসপাতালে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার সক্ষমতা ৩০ শতাংশের নিচে। এটিকে ৮০ শতাংশে তুলতে উদ্ভাবনী ‘মোবাইল ল্যাব’ বা ‘পুলড স্যাম্পল’ কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের সুরক্ষা প্রোটোকল

প্রতি আট সপ্তাহে আল্ট্রাসনোগ্রাম, প্রয়োজনে অ্যাম্নিওসেন্টেসিস, এবং স্বামী-স্ত্রীর যৌন সতর্কতার নির্দেশ (কনডম ব্যবহার বা পর্যাপ্ত বিরতি) মানতে প্রচার-প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। CDC-র ভ্রমণ ক্যাটেগরিতে বাংলাদেশ ‘পূর্ব সংক্রমণ আছে, তবে চলতি প্রাদুর্ভাব নেই’ তালিকায় থাকলেও গর্ভবতী বা গর্ভধারণ-প্রত্যাশী নারীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।

‘ওয়ালবাখিয়া’-ভিত্তিক জেনেটিক কন্ট্রোল ওডেল

যথাযথ মাঠ-সমীক্ষা সাপেক্ষে সিঙ্গাপুরের মতো এডিস-এ অবন্ধ্য ‘ওয়ালবাখিয়া-ইনফেক্টেড’ পুরুষ মশা ছেড়ে মশার সংখ্যা কমানোর প্রকল্প চালু করা যায়।

সীমান্ত ও বিমানবন্দরে তাপমাত্রা-স্ক্রিনার প্লাস ‘ভেক্টর ম্যানেজড ট্র্যাভেল করিডর’

বিশেষ করে জিকা-সচল দেশ থেকে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে স্মার্ট ডিক্ল্যারেশন-ফরম, উপসর্গ ও ভ্রমণক্ষেত্র যাচাই এবং প্রয়োজনে ৭-দিন ‘হোম কেয়ার’ পর্যবেক্ষণ গর্ভবতী নারী ও নবজাতকের সুরক্ষায় সহায়ক হবে।

ব্যক্তিগত সতর্কতার কৌশল

  • দাঁড়িবিহীন পানিপাত্রে জমে থাকা জল প্রতিদিন পরিষ্কার,ফুলদানির জল প্রতি ৩ দিনে বদল, ফানেল-ঢেঁকে রাখুন।
    • ভোর ও সন্ধ্যা—এডিসের কামড়ের উপযুক্ত সময়—লম্বা হাতা-পাজামা ও ডিইইটি/আইকারিডিন-যুক্ত রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন।
    • ঘুমের সময় মশারি বা উইন্ডো স্ক্রিন ব্যবহার করুন।
    • যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঙ্গী সম্প্রতি ভ্রমণ করে থাকলে অন্তত ৩ মাস কনডম ব্যবহার করুন।

 বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস এখনও মহামারির রূপ নেয়নি, তবে মহাখালীর সাম্প্রতিক ক্লাস্টার ও সিঙ্গাপুরের নতুন সংক্রমণ আমাদের প্রস্তুতির ফাঁকফোকর দেখিয়ে দিয়েছে। এইচআইভি-বিরোধী আন্দোলনের ভাষায় বলতে হয়—‘নিরুপদ্রব’-এর চেয়ে ‘নিরূপদ্রব থাকার কৌশল’ অনেক বেশি কার্যকর। টেকসই শহরপরিকল্পনা, বিজ্ঞানভিত্তিক মশা-ব্যবস্থাপনা এবং উন্মুক্ত তথ্যভিত্তিক সচেতনতা অভিযান এখনই জোরদার করতে না পারলে জিকা-সহ এডিস-বাহিত ভাইরাসগুলোর সম্মিলিত ঝাঁপটা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। দেশের স্বাস্থ্যখাত ও নাগরিক সমাজ মিলেই সেই ঝুঁকি প্রতিরোধের সেরা প্রতিরক্ষা-পলা গড়ে তুলতে হবে—এখনই।

জিকা ভাইরাসের ছায়া: বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে?

০৯:০০:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

১৯ জুন ২০২৫-এ সিঙ্গাপুরের উডল্যান্ডস স্ট্রিট ১১ ও ৩২-এ দুই জনের শরীরে জিকা শনাক্ত হওয়ার খবর নতুন করে অঞ্চলজুড়ে সতর্কতা জাগিয়েছে। সিঙ্গাপুরের জাতীয় পরিবেশ সংস্থা (NEA) জানিয়েছে, এলোকেশনে মশা ও বর্জ্যজলে জিকা–সংক্রান্ত ‘পারসিস্টেন্ট সিগন্যাল’ মিলেছে, যা স্থানীয় সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করে। প্রশ্ন উঠেছে—সামাজিক, ভৌগোলিক ও আবহাওয়াগত মিল থাকার কারণে বাংলাদেশও কি অনুরূপ ঝুঁকির মুখোমুখি?

জিকা ভাইরাস: সংক্রমণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

জিকা মূলত এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ে ছড়ায়, তবে গর্ভকালীন মা-শিশু সংক্রমণ, যৌন সম্পর্ক ও রক্তসঞ্চালনের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। অধিকাংশ সংক্রমণে উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে, কিন্তু গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে অপরিণত মস্তিষ্ক ও ছোট মাথা (মাইক্রোসেফালি)-সহ একাধিক জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৬-তে এটিকে ‘পাবলিক হেলথ এমার্জেন্সি’ ঘোষণা করেছিল।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চিত্র: ডেডিকেটেড ক্লাস্টার থেকে আলোড়ন

icddr,b Lab Services : Molecular and Landscape Epidemiology

  • ২০২৩-এ ঢাকার মহাখালী এলাকায় গরমজ্বর ও ব্যথার উপসর্গ নিয়েicddr,b-এর ল্যাবে আসা ১৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকেরা পাঁচ জনের দেহে জিকার অস্তিত্ব পান। পাঁচ জনই এক কিলোমিটারের ভেতর বাস করতেন এবং তাঁদের কারও সাম্প্রতিক বিদেশভ্রমণের ইতিহাস ছিল না—যা স্থানীয় সংক্রমণের স্পষ্ট প্রমাণ।
    • ঢাকায় মাত্র ছয় মাস আগেও আরও আটটি জিকা রোগীর উপস্থিতি ধরা পড়ে, যাদের বেশির ভাগই পুরনো রাজধানী এলাকার অধিবাসী।
    • গবেষকেরা সতর্ক করছেন, উপসর্গ মিলের কারণে জিকা প্রায়ই ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে গুলিয়ে যায়, ফলে প্রকৃত বোঝাপড়া ও সংখ্যা এখনও অধরা।

ঝুঁকি বাড়ানোর সহায়ক বাস্তবতা

এডিস মশার আধিপত্য ও আবহাওয়া

দীর্ঘ মনসুন, উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু এবং অপর্যাপ্ত নগর স্বাস্থ্যব্যবস্থার মিলিত প্রভাবে এডিস মশা সারাবছর ছড়িয়ে থাকে। ২০২৩-এর ঐতিহাসিক ডেঙ্গু বিপর্যয়ে ৩,২১,১৭৯ সংক্রমণ ও ১,৭০৫ মৃত্যুই তার প্রমাণ।

শহুরে ঘনত্ব ও জনচলাচল

ঢাকার প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনঘনত্ব ৪৪ হাজারের বেশি; একই সঙ্গে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ জিকা–প্রবণ দেশে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়মিত যাতায়াত বাংলাদেশকে সংক্রমণের ‘গেটওয়ে’ করে তুলছে।

 পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা

জিকা শনাক্তে দরকার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মতো নির্দিষ্ট ল্যাব সুবিধা, যা বর্তমানে IEDCR, icddr,b এবং হাতে-গোনা কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে সীমাবদ্ধ। ফলে নীরব সংক্রমণ ধরা পড়ার সুযোগ কম।

এখন পর্যন্ত সরকারি প্রস্তুতি

  • জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (DGHS)এডিস নিয়ন্ত্রণে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনকে সপ্তাহভিত্তিক উন্মুক্ত জলাশয় পরিষ্কার, মশানিধন স্প্রে ও ডোমেস্টিক ভেক্টর কন্ট্রোল টিম গঠনের নির্দেশ দিয়েছে।
    • IEDCR-এর আওতায় সীমিত আকারে জিকা নজরদারি চালু রয়েছে; গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন খোলা হয়েছে।
    • স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে জিকা সচেতনতা সপ্তাহ পালন এবং এডিস প্রজননস্থল ‘সোর্স রিডাকশন’ কর্মসূচি চালু করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৮৪ কর্মচারীকে বদলি

যেসব পদক্ষেপ জরুরি

 সমন্বিত আর্বো ভাইরাস টাস্ক-ফোর্স

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকার সমন্বিত রোগতত্ত্ব ল্যাব নেটওয়ার্ক গড়ে এলাকাভিত্তিক সর্বশেষ আইসোলেট দ্রুত শনাক্ত করতে হবে। একীভূত তথ্যব্যাংক থাকলে হটস্পট চিহ্নিত ও অগ্রিম সতর্কতা সহজ হবে।

পরীক্ষা-সুবিধা জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে জেলা হাসপাতালে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার সক্ষমতা ৩০ শতাংশের নিচে। এটিকে ৮০ শতাংশে তুলতে উদ্ভাবনী ‘মোবাইল ল্যাব’ বা ‘পুলড স্যাম্পল’ কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের সুরক্ষা প্রোটোকল

প্রতি আট সপ্তাহে আল্ট্রাসনোগ্রাম, প্রয়োজনে অ্যাম্নিওসেন্টেসিস, এবং স্বামী-স্ত্রীর যৌন সতর্কতার নির্দেশ (কনডম ব্যবহার বা পর্যাপ্ত বিরতি) মানতে প্রচার-প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। CDC-র ভ্রমণ ক্যাটেগরিতে বাংলাদেশ ‘পূর্ব সংক্রমণ আছে, তবে চলতি প্রাদুর্ভাব নেই’ তালিকায় থাকলেও গর্ভবতী বা গর্ভধারণ-প্রত্যাশী নারীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।

‘ওয়ালবাখিয়া’-ভিত্তিক জেনেটিক কন্ট্রোল ওডেল

যথাযথ মাঠ-সমীক্ষা সাপেক্ষে সিঙ্গাপুরের মতো এডিস-এ অবন্ধ্য ‘ওয়ালবাখিয়া-ইনফেক্টেড’ পুরুষ মশা ছেড়ে মশার সংখ্যা কমানোর প্রকল্প চালু করা যায়।

সীমান্ত ও বিমানবন্দরে তাপমাত্রা-স্ক্রিনার প্লাস ‘ভেক্টর ম্যানেজড ট্র্যাভেল করিডর’

বিশেষ করে জিকা-সচল দেশ থেকে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে স্মার্ট ডিক্ল্যারেশন-ফরম, উপসর্গ ও ভ্রমণক্ষেত্র যাচাই এবং প্রয়োজনে ৭-দিন ‘হোম কেয়ার’ পর্যবেক্ষণ গর্ভবতী নারী ও নবজাতকের সুরক্ষায় সহায়ক হবে।

ব্যক্তিগত সতর্কতার কৌশল

  • দাঁড়িবিহীন পানিপাত্রে জমে থাকা জল প্রতিদিন পরিষ্কার,ফুলদানির জল প্রতি ৩ দিনে বদল, ফানেল-ঢেঁকে রাখুন।
    • ভোর ও সন্ধ্যা—এডিসের কামড়ের উপযুক্ত সময়—লম্বা হাতা-পাজামা ও ডিইইটি/আইকারিডিন-যুক্ত রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন।
    • ঘুমের সময় মশারি বা উইন্ডো স্ক্রিন ব্যবহার করুন।
    • যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঙ্গী সম্প্রতি ভ্রমণ করে থাকলে অন্তত ৩ মাস কনডম ব্যবহার করুন।

 বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস এখনও মহামারির রূপ নেয়নি, তবে মহাখালীর সাম্প্রতিক ক্লাস্টার ও সিঙ্গাপুরের নতুন সংক্রমণ আমাদের প্রস্তুতির ফাঁকফোকর দেখিয়ে দিয়েছে। এইচআইভি-বিরোধী আন্দোলনের ভাষায় বলতে হয়—‘নিরুপদ্রব’-এর চেয়ে ‘নিরূপদ্রব থাকার কৌশল’ অনেক বেশি কার্যকর। টেকসই শহরপরিকল্পনা, বিজ্ঞানভিত্তিক মশা-ব্যবস্থাপনা এবং উন্মুক্ত তথ্যভিত্তিক সচেতনতা অভিযান এখনই জোরদার করতে না পারলে জিকা-সহ এডিস-বাহিত ভাইরাসগুলোর সম্মিলিত ঝাঁপটা বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। দেশের স্বাস্থ্যখাত ও নাগরিক সমাজ মিলেই সেই ঝুঁকি প্রতিরোধের সেরা প্রতিরক্ষা-পলা গড়ে তুলতে হবে—এখনই।