যুক্তরাষ্ট্রের ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়া
এপি নিউজ,
যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েল-ইরান চলমান সংঘাতে যুক্ত হয়েছে, ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা—ফোর্ডো, নাটাঞ্জ ও ইসফাহানে—বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ও টমাহক মিসাইল দিয়ে আঘাত হানে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, এসব স্থাপনা “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” করা হয়েছে এবং তিনি ইরানকে পাল্টা আক্রমণ না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অন্যদিকে, ইরান এই হামলাকে অবৈধ ঘোষণা করে জরুরি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, এই হামলার “চিরস্থায়ী পরিণতি” থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই বলছে, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করা অপরিহার্য ছিল, যদিও ক্ষয়ক্ষতির স্বতন্ত্র কোনো মূল্যায়ন এখনো পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) নিশ্চিত করেছে, আক্রমণের পর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তেজস্ক্রিয়তা বাড়েনি। ইরানের পারমাণবিক সংস্থা জানিয়েছে, তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। এই হামলার ফলে সংঘাতের মাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে এবং জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়লে বৈশ্বিক পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনায় তেলের বাজারে অস্থিরতা
রয়টার্স,
যুক্তরাষ্ট্রের ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর বৈশ্বিক বাজারে উদ্বেগ বেড়েছে; বিনিয়োগকারীরা ইরানের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছেন। উপসাগরীয় দেশগুলোর শেয়ারবাজারে প্রাথমিকভাবে শান্তভাব থাকলেও তেলের দামে বড় ধরনের উর্ধ্বগতির আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিশেষত ইরান যদি উপসাগরীয় তেল পরিকাঠামো বা হরমুজ প্রণালীতে হামলা চালায়। বিশ্লেষকদের মতে, সংঘাত আরও বাড়লে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি ও ভোক্তা আস্থা কমিয়ে দিতে পারে। মার্কিন ডলার সাময়িকভাবে শক্তিশালী হতে পারে, তবে বাজারে চরম অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে এবং এটি শান্তিচুক্তির জন্য চাপ তৈরি করবে, তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, দীর্ঘমেয়াদী দামের ঝাঁকুনি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হতে পারে। অতীতে দেখা গেছে, সংঘাতের পর বাজারে তাৎক্ষণিক পতন এলেও কিছু মাস পরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। আপাতত, অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকিপূর্ণ মানসিকতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রধান।
চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিকল্প বাজারে ঝুঁকছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে চাপে
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস,
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে চীনা কারখানাগুলো তাদের নির্ভরতা কমাতে দ্রুত বিকল্প বাজার খুঁজছে। এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন শুল্ক আরোপের পর মে মাসে চীনের রপ্তানি তথ্য বলছে—ইউরোপে রপ্তানি ১২%, জার্মানিতে ২২% ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৫% বেড়েছে, ফলে যুক্তরাষ্ট্রগামী রপ্তানির ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিচ্ছে। ঝেজিয়াং প্রদেশের নির্মাতারা বিকল্প বাজারে ঝুঁকছেন, সরকার ট্রেড ফেয়ার ও ই-কমার্সে সহায়তা দিচ্ছে। অনেক কারখানা মালিক যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি কমলেও ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় নতুন ক্রেতা পাচ্ছেন। তবে ইউরোপে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, ফলে লাভের মার্জিন কমে যাচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনও চীনা পণ্যের প্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। চীনা সরকার রপ্তানি স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে দেশের আর্থিক চ্যালেঞ্জ কিছুটা মোকাবিলা করা যায়।
যুদ্ধকেন্দ্রিক নীতিতে রাশিয়ার অর্থনীতির উদ্বেগ
বিবিসি নিউজ,
সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অর্থনীতি নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ কম দেখালেও শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটি “মন্দার দ্বারপ্রান্তে”। ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর থেকে রাশিয়ার অর্থনৈতিক নীতি মূলত সামরিক ব্যয়ে কেন্দ্রীভূত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনা বলেছেন, যুদ্ধ-পরবর্তী প্রবৃদ্ধির সুবিধা এখন প্রায় শেষ। অর্থনৈতিক উন্নয়নমন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেতনিকভ স্বীকার করেছেন, স্থবিরতার ঝুঁকি বাড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে মার্কিন বিনিয়োগ ফেরার আশাবাদ থাকলেও পশ্চিমা কোম্পানিগুলো ইউক্রেন যুদ্ধ ও অব্যাহত নিষেধাজ্ঞার কারণে ফিরতে অনাগ্রহী। মার্কিন ব্যবসায়ী নেতারাও স্বীকার করেন, কার্যকর বিনিয়োগ ফেরাতে যুদ্ধের অবসান অপরিহার্য। রুশ কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদের হারসহ অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করছেন—যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার সম্মিলিত প্রভাব স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনাকে আরও দুর্বল করে তুলছে।
আঞ্চলিক অস্থিরতার মধ্যে ইরানের খামেনির উত্তরসূরি প্রস্তুতি
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট,
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ার মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ডের আশঙ্কায় তিনজন সম্ভাব্য উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেছেন বলে জানা গেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস সূত্রে জানা গেছে, ইরানের সংবিধান অনুযায়ী এক্সপার্ট কাউন্সিল (৮৮ জন ইসলামিক ধর্মীয় ও বিচারক) খামেনির মৃত্যুর পর উত্তরসূরি নির্বাচনের ক্ষমতা রাখে। এই কাউন্সিল রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করতে এবং ঐকমত্য নিশ্চিত করতে গঠিত। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে খামেনিকে টার্গেট করার ইঙ্গিত দেওয়ায় বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেয়েছে। ইরানি নেতৃত্ব বিদেশি চাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অঙ্গীকার জানিয়েছে। উত্তরসূরি নির্বাচন এখনও রাষ্ট্রের গোপনীয় বিষয়, তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।