মার্কিন-ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি
রবিবার ভোরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি ইরানি পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অভিযানকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, “ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা নিক্ষেপের পর আমাদের সব বিমান নিরাপদে ফিরে এসেছে।” এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধাভিযানে যোগ দিল।
ইরানের প্রতিক্রিয়া: ‘যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতিকে উড়িয়ে দিয়েছে’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এক বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল মিলে কূটনীতির পথকে উড়িয়ে দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, ইরান কখনো আলোচনার টেবিল ছেড়ে যায়নি, তাহলে আবার কিভাবে ফিরবে?
হামলার পর উত্তপ্ত গোটা অঞ্চল
ইরানের পাল্টা হামলা
ইরান জানায়, তারা বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরসহ ইসরায়েলের একাধিক স্থাপনায় পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই হামলার অংশ হিসেবে বায়োলজিক্যাল গবেষণা কেন্দ্র ও কন্ট্রোল ঘাঁটিতেও আঘাত হানা হয়েছে।
ইসরায়েলে ক্ষয়ক্ষতি
পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে ২৩ জন আহত হয়েছেন। একটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ইসরায়েলের পাল্টা অভিযান
ইসরায়েল আবারও ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে নতুন করে হামলা শুরু করে। তারা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র, সেনা ও রকেট লঞ্চার ধ্বংস করার দাবি করেছে।
আকাশসীমা বন্ধ ও সীমিত কার্যক্রম
ইসরায়েল তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং জরুরি কার্যক্রম ছাড়া সব কিছু স্থগিত করে। তবে পরবর্তীতে “অপারেশন সেফ রিটার্ন”-এর অংশ হিসেবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিমান অবতরণের অনুমতি দেয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
কাতার
কাতার সতর্ক করে বলেছে, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে তা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ওমান
পরমাণু আলোচনার মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে মারাত্মক উত্তেজনা বৃদ্ধির পথ বলে উল্লেখ করেছে।
সৌদি আরব
সৌদি আরব হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
বাহরাইন
বাহরাইন তাদের সরকারি কর্মীদের ৭০ শতাংশকে বাসা থেকে কাজ করতে বলেছে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে।
ইরাক
ইরাকের মতে, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সরাসরি হুমকি।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলাকে “বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি” বলে আখ্যা দেন এবং কূটনৈতিক পথেই সমাধান খোঁজার আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA) ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি
IAEA জানায়, এখন পর্যন্ত ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর আশেপাশে তেজস্ক্রিয়তার বিপজ্জনক কোনো মাত্রা পাওয়া যায়নি। সংস্থাটির প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সোমবার জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন।
ইরানের প্রতিশ্রুতি: পরমাণু কর্মসূচি চলবে
ইরানের পরমাণু সংস্থা জানায়, “আমাদের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পরমাণু প্রযুক্তির উন্নয়ন থামানো যাবে না।” তারা এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের “বর্বরোচিত হামলা” বলেও আখ্যা দেয়।
হামাস ও হুথিদের প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এই হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও শান্তির বিরুদ্ধে হুমকি” বলে উল্লেখ করেছে। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার ইরানে হামলা চালায়, তাহলে তারা রেড সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ আক্রমণ করবে।
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের মন্তব্য
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো ধ্বংস করব—আজ সেটি বাস্তব হয়েছে।” ট্রাম্প বলেন, “যদি শান্তি না আসে, তাহলে আরও লক্ষ্যবস্তু থাকবে।”
বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের আশঙ্কা
এই সংঘাতে পুরো অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ও আশঙ্কার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সৌদি আরব জানিয়েছে, উপসাগরীয় এলাকায় এখনো তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব নেই। ইরানের জাতীয় পরমাণু নিরাপত্তা কেন্দ্রও জানায়, সাধারণ জনগণের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই।
এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে নজর রয়েছে এই যুদ্ধের পরবর্তী ধাপে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার ঘূর্ণাবর্তে টালমাটাল গোটা মধ্যপ্রাচ্য, আর নতুন করে শুরু হতে পারে একটি ভয়াবহ যুদ্ধের অধ্যায়।