০২:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

ইরানের হুঁশিয়ারি: ‘পরমাণু হামলার জবাবে সব বিকল্প উন্মুক্ত’

মার্কিন হামলার নতুন ধাপে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চূড়ান্তে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি প্রধান পরমাণু স্থাপনায় রাতভর হামলা চালিয়ে তা “সম্পূর্ণ ধ্বংস” করেছে। এই হামলা ইসরায়েলের চলমান অভিযানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।

টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প এই হামলাকে ‘বিস্ময়কর সামরিক সাফল্য’ আখ্যা দিয়ে ইরানকে হুঁশিয়ারি দেন যে, প্রতিশোধ নেওয়া হলে আরও বিধ্বংসী হামলার মুখোমুখি হতে হবে।

ইরানের প্রতিক্রিয়া: জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন

ইরান এই মার্কিন হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের এবং জাতিসংঘ সনদের গুরুতর লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, “আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ এবং জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় সব বিকল্প উন্মুক্ত রেখেছি।”

তিনি আরও বলেন, ওয়াশিংটন-তেহরান সংলাপ চলার মধ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছে।

পরমাণু কেন্দ্রগুলোর উপর হামলা

ট্রাম্প জানিয়েছেন, মার্কিন হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ, ইসফাহান এবং ফোর্ডো পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্যবস্তু ছিল। এর মধ্যে ফোর্ডো স্থাপনাটি গভীর ভূগর্ভে অবস্থিত, যেখানে বাংকার-বাস্টার বোমা ফেলা হয়েছে এবং নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।

তবে ইরানের এক শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে, ফোর্ডো কেন্দ্রের অধিকাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং কর্মীদের সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়েছে।

ফোর্ডো ধ্বংস হয়নিদাবি ইরানের

ইরানের ক্বোম অঞ্চলের এমপি মোহাম্মদ রাইসি দাবি করেন, ফোর্ডো কেন্দ্র তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ইরানের পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র নীতির কমিটি জানায়, তেহরান চাইলে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার-রোধ চুক্তি (NPT) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আইনি অধিকার রাখে।

ইরানের পরমাণু সংস্থা বলেছে, ‘জাতীয় শিল্প’ ধ্বংস হতে দেবে না।

ইসরায়েলের শহরগুলোতে হামলা: আহত অন্তত ৮৬

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের দিকে ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং আরও বড় ধরনের হামলা সামনে রয়েছে।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্তত ৮৬ জন আহত হয়েছেন।

টেল আভিভ এবং অন্যান্য শহরে ভয়াবহ শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং বিমান হামলার সাইরেনে মানুষ বাঙ্কার ও নিরাপদ কক্ষে ছুটে যান। মধ্য ও উত্তর ইসরায়েলের তিনটি আবাসিক এলাকায় সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ইরানের জনমনে আতঙ্ক

রয়টার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা অনেক ইরানি জানিয়েছেন, তারা বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কায় আতঙ্কে আছেন। কাশানের এক স্কুলশিক্ষিকা ৩৬ বছর বয়সী বিটা বলেন, “আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। যেন আমরা একটি দুঃস্বপ্নের সিনেমায় বাস করছি।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলাকে “অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য সরাসরি হুমকি” বলে মন্তব্য করেছেন।

যুক্তরাজ্য বলেছে, ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সেই লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা এবং জার্মানি ইরানকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে ইরান বলেছে, এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক আলোচনার পথ ‘উড়িয়ে দিয়েছে’।

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পটভূমি

১৩ জুন থেকে ইসরায়েল দাবি করে যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে—এই অভিযোগে হামলা শুরু করে। ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ইরানে ৪৩০ জন নিহত ও ৩৫০০ জন আহত হয়েছেন বলে নূর নিউজ জানিয়েছে।
ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত ও ১২৭২ জন আহত হয়েছেন।

কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ?

যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান দলের কিছু সদস্য বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে পারেন না।

গভীর প্রভাব

মধ্যপ্রাচ্যে এই সংঘাতের বিস্তার অব্যাহত থাকলে তা পুরো অঞ্চল, এমনকি বিশ্ব শান্তির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন। পারমাণবিক উত্তেজনা, আঞ্চলিক প্রতিশোধ এবং শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সরাসরি জড়িয়ে পড়া—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন বারুদের স্তুপে একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ।

ইরানের হুঁশিয়ারি: ‘পরমাণু হামলার জবাবে সব বিকল্প উন্মুক্ত’

০৬:৩০:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

মার্কিন হামলার নতুন ধাপে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চূড়ান্তে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি প্রধান পরমাণু স্থাপনায় রাতভর হামলা চালিয়ে তা “সম্পূর্ণ ধ্বংস” করেছে। এই হামলা ইসরায়েলের চলমান অভিযানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।

টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প এই হামলাকে ‘বিস্ময়কর সামরিক সাফল্য’ আখ্যা দিয়ে ইরানকে হুঁশিয়ারি দেন যে, প্রতিশোধ নেওয়া হলে আরও বিধ্বংসী হামলার মুখোমুখি হতে হবে।

ইরানের প্রতিক্রিয়া: জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন

ইরান এই মার্কিন হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের এবং জাতিসংঘ সনদের গুরুতর লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, “আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ এবং জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় সব বিকল্প উন্মুক্ত রেখেছি।”

তিনি আরও বলেন, ওয়াশিংটন-তেহরান সংলাপ চলার মধ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছে।

পরমাণু কেন্দ্রগুলোর উপর হামলা

ট্রাম্প জানিয়েছেন, মার্কিন হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ, ইসফাহান এবং ফোর্ডো পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্যবস্তু ছিল। এর মধ্যে ফোর্ডো স্থাপনাটি গভীর ভূগর্ভে অবস্থিত, যেখানে বাংকার-বাস্টার বোমা ফেলা হয়েছে এবং নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।

তবে ইরানের এক শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে, ফোর্ডো কেন্দ্রের অধিকাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং কর্মীদের সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়েছে।

ফোর্ডো ধ্বংস হয়নিদাবি ইরানের

ইরানের ক্বোম অঞ্চলের এমপি মোহাম্মদ রাইসি দাবি করেন, ফোর্ডো কেন্দ্র তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ইরানের পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র নীতির কমিটি জানায়, তেহরান চাইলে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার-রোধ চুক্তি (NPT) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আইনি অধিকার রাখে।

ইরানের পরমাণু সংস্থা বলেছে, ‘জাতীয় শিল্প’ ধ্বংস হতে দেবে না।

ইসরায়েলের শহরগুলোতে হামলা: আহত অন্তত ৮৬

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের দিকে ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং আরও বড় ধরনের হামলা সামনে রয়েছে।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্তত ৮৬ জন আহত হয়েছেন।

টেল আভিভ এবং অন্যান্য শহরে ভয়াবহ শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং বিমান হামলার সাইরেনে মানুষ বাঙ্কার ও নিরাপদ কক্ষে ছুটে যান। মধ্য ও উত্তর ইসরায়েলের তিনটি আবাসিক এলাকায় সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ইরানের জনমনে আতঙ্ক

রয়টার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা অনেক ইরানি জানিয়েছেন, তারা বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কায় আতঙ্কে আছেন। কাশানের এক স্কুলশিক্ষিকা ৩৬ বছর বয়সী বিটা বলেন, “আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। যেন আমরা একটি দুঃস্বপ্নের সিনেমায় বাস করছি।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলাকে “অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য সরাসরি হুমকি” বলে মন্তব্য করেছেন।

যুক্তরাজ্য বলেছে, ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সেই লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা এবং জার্মানি ইরানকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে ইরান বলেছে, এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক আলোচনার পথ ‘উড়িয়ে দিয়েছে’।

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পটভূমি

১৩ জুন থেকে ইসরায়েল দাবি করে যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে—এই অভিযোগে হামলা শুরু করে। ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ইরানে ৪৩০ জন নিহত ও ৩৫০০ জন আহত হয়েছেন বলে নূর নিউজ জানিয়েছে।
ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত ও ১২৭২ জন আহত হয়েছেন।

কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ?

যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান দলের কিছু সদস্য বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে পারেন না।

গভীর প্রভাব

মধ্যপ্রাচ্যে এই সংঘাতের বিস্তার অব্যাহত থাকলে তা পুরো অঞ্চল, এমনকি বিশ্ব শান্তির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন। পারমাণবিক উত্তেজনা, আঞ্চলিক প্রতিশোধ এবং শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সরাসরি জড়িয়ে পড়া—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন বারুদের স্তুপে একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ।