বহুমাত্রিক পারিবারিক কাহিনি থেকে ভবিষ্যৎ কল্পকাহিনি—২০২৫ সালের প্রথমার্ধে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মগুলোর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা।
চিমামান্ডা এনগোজি আদিচির ‘ড্রিম কাউন্ট’
‘আমেরিকানা’ উপন্যাসের এক দশক পর আদিচির নতুন উপন্যাস ‘ড্রিম কাউন্ট’ পাঠকদের জন্য এক সাহিত্যিক আনন্দঘন মুহূর্ত। তিন নাইজেরিয়ান নারীর বন্ধুত্ব এবং জীবনের ব্যর্থতার গল্প এই উপন্যাসে। বর্তমানের সঙ্গে অতীতের শৈশব ও যৌবনের স্মৃতিমিশ্রণে লেখা এ কাহিনি চারটি ভিন্ন উপন্যাসের মতোই সমৃদ্ধ। উপন্যাসটি পুরুষতন্ত্র, বর্ণবাদ, উপনিবেশবাদ ও ক্ষমতার মতো বড়ো থিমকে কেন্দ্র করে আবর্তিত।
হান কাং-এর ‘উই ডু নট পার্ট’
২০২১ সালে কোরিয়াতে প্রকাশিত হলেও ২০২৫ সালের শুরুতে এর ইংরেজি অনুবাদ বাজারে আসে। হান কাং এই বইয়ের জন্য ২০২৪ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। দুই নারী কিয়ুংহা ও ইনসনের সম্পর্ক এবং কোরিয়ার এক ভুলে যাওয়া সহিংস অধ্যায় উঠে এসেছে এতে। ‘দ্য ভেজেটেরিয়ান’-এর মতোই স্বপ্ন ও বাস্তবতার মিশ্রণে লেখা এই উপন্যাসটিকে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস বলেছে ‘অসাধারণ ও গভীরভাবে অস্বস্তিকর’।
টোরি পিটার্সের ‘স্ট্যাগ ডান্স’
‘ডি-ট্রানজিশন, বেবি’র পর এই ছোটগল্প সংকলন বিভিন্ন ঘরানায় বিস্তৃত—রোমান্টিক, ভবিষ্যৎ কল্পকাহিনি থেকে ঐতিহাসিক। একটি গল্পে লাস ভেগাসের পার্টিতে দুই গাইডের মধ্যে পছন্দের দ্বিধা, আরেকটিতে বোর্ডিং স্কুলের প্রেম এবং আরেকটিতে ১৯ শতকের কাঠুরেদের নারী বেশে নৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ উঠে এসেছে। দ্য গার্ডিয়ান এটিকে বলেছে ‘অপেরা সমাপ্তির মতো নিখুঁতভাবে গাঁথা’।
আবদুলরাজাক গুরনাহ’র ‘থেফট’
২০২১ সালের সাহিত্যে নোবেলজয়ী গুরনাহ’র একাদশ উপন্যাস। পোস্ট-কলোনিয়াল পূর্ব আফ্রিকার পটভূমিতে তিন কিশোর-কিশোরীর বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা ও আত্মজাগরণ নিয়ে লেখা উপন্যাসটি। দ্য ইকোনমিস্ট এটিকে বলেছে ‘বন্ধুত্ব ও বিশ্বাসঘাতকতার একটি নিখুঁত বিশ্লেষণ’।
নাতাশা ব্রাউনের ‘ইউনিভার্সালিটি’
তার স্বল্প দৈর্ঘ্যের প্রথম উপন্যাস ‘অ্যাসেম্বলি’র পর এই উপন্যাসটি পরিচিত রাজনীতির ছলচাতুরী, মিডিয়ার ও প্রকাশনার জগৎকে ব্যঙ্গ করে রচিত। এক রহস্যময় খবর থেকে শুরু হয়ে ঘটনাপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে সম্পর্ক, অপরাধ ও প্রতারণার জগতে। নিউ স্টেটসম্যান বলেছে, এটি ‘খুবই হাস্যরসাত্মক’ এবং ব্রাউন ‘রাজনৈতিক বাস্তবতা ধরতে অত্যন্ত পারদর্শী’।
ফ্লোরেন্স ন্যাপের ‘দ্য নেমস’
১৯৮৭ সালে এক মায়ের শিশুর জন্য তিনটি নাম বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু। প্রতিটি নাম একটি সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ তৈরি করে এবং গল্পটি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়, সাত বছর পরপর চরিত্রদের দেখা মেলে। দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, এটি ‘গভীরভাবে সহানুভূতিশীল’ এবং ‘রোমাঞ্চ উপন্যাসের গতিতে এগিয়ে চলে’।
ওশেন ভুয়ং-এর ‘দ্য এম্পারর অব গ্ল্যাডনেস’
ওবামা আমলের গ্রামীণ আমেরিকায় পালিয়ে আসা এক সমকামী তরুণ হাই এবং ডিমেনশিয়াগ্রস্ত এক বৃদ্ধা লিথুয়ানিয়ান নারীর বন্ধুত্বের গল্প। এটি এক সামাজিক চিত্রপট, যেখানে চরিত্ররা নানা প্রতিকূলতায় বন্ধন গড়ে তোলে। আর্ট রিভিউ বলেছে, এটি হয়তো ‘প্রথম সহস্রাব্দের গ্রেট আমেরিকান নভেল’।
ওইসিন ফ্যাগানের ‘এডেন‘s শোর’
১৮ শতকের এক দাস ব্যবসায়ীর ইউটোপিয়া গড়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টার কাহিনি। দাসবাণিজ্যের ভয়াবহতা এবং সামুদ্রিক জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে কালো কৌতুক ও পরীক্ষামূলক কাহিনিকাঠামোর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ফিনান্সিয়াল টাইমস একে বলেছে, ‘সহিংসতা, দর্শন ও ইউটোপিয়ার এক বিস্তৃত প্রতিফলন’।
এরিক পুচনারের ‘ড্রিম স্টেট’
২০০৪ সালে শুরু হওয়া পাঁচ দশকব্যাপী এক পারিবারিক কাহিনি। মন্টানার ফ্ল্যাটহেড উপত্যকার কাল্পনিক উষ্ণ আবহে গড়ে ওঠা এক পরিবারের প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রজন্মগত পার্থক্য নিয়ে নির্মিত পারিবারিক ইতিহাস। অপরা উইনফ্রে একে বলেছেন ‘মানব সম্পর্কের বিশ্লেষণে এক অনন্য সাহিত্যকর্ম’।
লাইলা লালামির ‘দ্য ড্রিম হোটেল’
২০২৫ সালের উইমেন’স প্রাইজ ফর ফিকশনের জন্য তালিকাভুক্ত। স্বপ্ন বিশ্লেষণ করে অপরাধের পূর্বাভাস দেওয়া এক ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির ভীতিকর কাহিনি। নায়িকা সারা বিমানবন্দরে আটক হন স্বামীকে হত্যার সম্ভাবনার অভিযোগে। ২১ দিনের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে আটক থাকা অবস্থায় নিজের জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকেন। দ্য ইকোনমিস্ট একে বলেছে ‘গোপনীয়তা বিসর্জনের ঝুঁকি নিয়ে এক টানটান কাহিনি’।
ক্যাথরিন এয়ারির ‘কনফেশনস’
নতুন সাহিত্যিক কণ্ঠ এয়ারির প্রথম উপন্যাসে তিন প্রজন্মের নারীর জীবনের জটিলতা তুলে ধরা হয়েছে। ২০০১ সালের ৯/১১-তে এতিম হওয়া কোরাকে তার আত্মীয় আমন্ত্রণ জানায় নতুন করে জীবন শুরু করতে আয়ারল্যান্ডে। দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, এটি ‘নারী জীবনের যন্ত্রণা ও মুক্তির সাহসী কাহিনি’।
ডেভিড সালয়ের ‘ফ্লেশ’
২০১৬ সালের বুকার প্রাইজের জন্য মনোনীত ‘অল দ্যাট ম্যান ইজ’-এর লেখক সালয়ের নতুন উপন্যাস ‘ফ্লেশ’ এক কিশোরের কৈশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার যাত্রা। ভাষার পরিমিতভাবে ব্যবহার এবং জীবনের মৌলিক অথচ অবর্ণনীয় দিকগুলোকে স্পর্শ করেছে এই উপন্যাস। দ্য গার্ডিয়ান এটিকে বলেছে ‘ভাষার নাগালের বাইরে থাকা জীবনের সত্যগুলোর অনুপম চিত্রায়ন’।