এক শতাব্দী আগেও চাল নিয়ে ক্ষোভে জ্বলেছিল জাপান
১৯১৮ সালের জুলাইয়ে জাপানের তোয়ামা অঞ্চলের জেলেদের স্ত্রীদের আন্দোলন ছিল চাল নিয়ে। চাল রপ্তানির প্রতিবাদে শুরু হওয়া সেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। চালের মূল্যবৃদ্ধিই ছিল মূল কারণ। শেষমেশ ১ লাখ সেনা মোতায়েন করে সরকার আন্দোলন দমন করলেও, সেই সময়কার সরকার গদিচ্যুত হয়।
আজকের জাপান অনেক বেশি স্থিতিশীল, কিন্তু চাল নিয়ে জাতির আবেগ একই আছে।
কৃষিমন্ত্রীর ‘রসিকতা‘ পড়ে গেল হিতে বিপরীত
২০২৫ সালের মে মাসে কৃষিমন্ত্রী এতো তাকু বলেছিলেন, তিনি চালের দাম নিয়ে চিন্তিত নন, কারণ তাঁর সমর্থকেরা তাঁকে চাল কিনে দেন। কিন্তু ২০২৪ সালের শুরু থেকে চালের দাম ইতিমধ্যেই ১০০ শতাংশ বেড়েছে। ফলাফল—বিরূপ প্রতিক্রিয়া, জনরোষ, এবং তাঁর পদত্যাগ।
চাল উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবুও চাপে জাপান
জাপানে চাল উৎপাদনের ওপর সরকারের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। দেশের কৃষক ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, আর বিদেশি কৃষিপণ্যের ওপর রক্ষণশীল নীতি মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক অস্বাভাবিক অবস্থা। জাপান নিজেই তার ৯৯ শতাংশ চাল উৎপাদন করে, তাই ২০২৩ সালের খারাপ ফলনের ধাক্কা এখনও সামলাতে পারছে না বাজার।
সরকারি মজুত শেষের পথে
সরকারি ভাণ্ডারে সাধারণত ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল মজুত থাকে—যা এক-দুই মাসের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট। কিন্তু চলতি বছর লাগাতার বাজারে চাল ছাড়ার ফলে এখন ভাণ্ডারে মাত্র এক লাখ টনের মতো চাল অবশিষ্ট।
এমনকি ভাষায়ও এর প্রতিফলন ঘটেছে—‘কমাই’ (গত বছরের চাল), ‘কোকোমাই’ (দুই বছর আগের), এবং ‘কোকোকোমাই’ (তিন বছরের পুরোনো চাল)—এখন সাধারণ দোকানেও বিক্রি হচ্ছে।
কালোবাজারি ঠেকাতে কঠোর আইন
নতুন কৃষিমন্ত্রী কোইজুমি শিনজিরো চাল নিয়ে কালোবাজারি ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন। ২৩ জুন থেকে কোনো চাল যদি তার আসল বিক্রয়মূল্যের বেশি দামে বিক্রি করা হয়, তাহলে ১ বছর পর্যন্ত জেল বা ১০ লাখ ইয়েন (৬,৯০০ ডলার) জরিমানার বিধান কার্যকর হচ্ছে।
নির্বাচনের আগে চাপের মুখে সরকার
জাপানের গড় বয়স এখন ৫০-এর কাছাকাছি। ফলে ১০০ বছর আগের মতো ব্যাপক জনবিদ্রোহের আশঙ্কা কম। তবে আগামী জুলাইয়ে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরুর সরকারকে ভোটের আগে ‘কোকোকোমাই’ চালের মতোই পুরনো ও অপ্রিয় সমাধান বেছে নিতে হতে পারে।