১১:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

ভারতে আবারও আইপিও জোয়ার আসছে তবে বিনিয়োগকারীরা এখনো সতর্ক

শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতিবাড়ছে আইপিওর সম্ভাবনা

বেঙ্গালুরু থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড়সড় সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে এনেছে। এই পদক্ষেপের ফলে ২০২৫ সালে শ্লথ হয়ে পড়া প্রাথমিক শেয়ার ইস্যু (আইপিও) বাজারে নতুন করে প্রাণ ফিরে আসার আশা করা হচ্ছে।

চলতি বছরের ১৪ জুন পর্যন্ত ভারতের দুই প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ—বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ—এ মাত্র ১৭টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এতে মোট ৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ হয়েছে, যেখানে ২০২৪ সালে ৯১টি আইপিওর মাধ্যমে ১৯ বিলিয়ন ডলার উত্তোলন করা হয়েছিল।

অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও বাজার চাঙ্গা হচ্ছে

বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্লথ অর্থনীতি, দুর্বল কোম্পানির আয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাজার এখন ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মার্চ মাসে বছরের সর্বনিম্ন পয়েন্ট থেকে বিএসই সেনসেক্স প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতিতে নমনীয়তা এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি (জানুয়ারি-মার্চে ৭.৪%) বড় ভূমিকা রেখেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ ও সুদ কমানো

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির ভোক্তা নির্ভর প্রবণতা বিবেচনায় রেখে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) সুদের হার তিন দফায় মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগে “বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আগে থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” এতে করে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ঋণ নেওয়ার আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

অ্যাভেনডাস ক্যাপিটালের ইক্যুইটি ক্যাপিটাল মার্কেট প্রধান গৌরব সুদ বলেন, “আরবিআই ভোক্তা ব্যয় বাড়াতে চাইছে। এর ইতিবাচক প্রভাব বাজার ও আইপিওতেও পড়বে।”

৭৪টি অনুমোদিত আইপিও এখনও বাজারে আসেনি

ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতোমধ্যে ৭৪টি আইপিওর অনুমোদন দিয়েছে, যার সম্মিলিত পরিমাণ প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি ইলেকট্রনিক্সের ভারতীয় শাখার ৩.২ বিলিয়ন ডলারের আইপিও এবং জেএসডব্লিউ সিমেন্টের ৪৬০ মিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রি অন্তর্ভুক্ত।

এই অনুকূল বাজার পরিস্থিতিতে কিছু স্টার্টআপও আইপিওর পরিকল্পনা করছে। ফিনটেক প্রতিষ্ঠান Groww এবং অনলাইন শিক্ষাপ্ল্যাটফর্ম PhysicsWallah গোপনীয় রুটে বাজার নিয়ন্ত্রকের কাছে আইপিও প্রস্তাব জমা দিয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১ বিলিয়ন ও ৫০০ মিলিয়ন ডলার। লেন্সকার্ট এবং দ্রুত পণ্য সরবরাহকারী জেপ্টোও ১ বিলিয়ন ডলার করে তুলতে চাচ্ছে।

Can Emerging Markets survive Trade War II? | J.P. Morgan Private Bank Asia

গোপনীয় রুট কী?

গোপনীয় রুটের মাধ্যমে আইপিও দাখিল করলে কোম্পানিগুলো প্রথমে পাবলিকভাবে তথ্য প্রকাশ না করেই নিয়ন্ত্রকের যাচাইয়ের সুযোগ পায়। এতে করে আর্থিক ও ব্যবসায়িক তথ্য গোপন রেখে বাজারের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা যায়।

মূল্যায়ন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা

তবে বিনিয়োগকারীরা সাম্প্রতিক কিছু বড় আইপিওর দুর্বল পারফরম্যান্স দেখে এখন অনেক বেশি সতর্ক। যেমন, হিউন্ডাই মোটর ইন্ডিয়ার ৩.২ বিলিয়ন ডলারের আইপিওর পর এর শেয়ার মূল্যের পতন হয়েছে। সুইগি ৭ শতাংশ নিচে, ওলা ইলেকট্রিক প্রায় ৩৯ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে।

অ্যাভেনডাস ক্যাপিটালের গৌরব সুদ বলেন, “বিনিয়োগকারীরা এখন ব্যবসা ও মূল্যায়ন নিয়ে বেশি সময় নিচ্ছেন এবং নিরাপত্তার মার্জিন বাড়াচ্ছেন।”

বিদেশি বিনিয়োগ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব

ইনক্রেড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ফান্ড ম্যানেজার আদিত্য সুদ জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন উদীয়মান বাজারের দিকে ঝুঁকছেন, এবং ভারত এতে উপকৃত হচ্ছে।

“প্রথমে টাকা ইউরোপে গিয়েছিল, এখন পালা ভারতের,”—তিনি বলেন।

প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি বাজারে গতি

জুনের প্রথম ১৬ দিনে কোম্পানিগুলো কিউআইপি (যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বরাদ্দ) মাধ্যমে ৪৬৩ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে, যা আগের দুই মাসের তুলনায় তিনগুণ। একই সময়ে ব্লক ডিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩.৯ বিলিয়ন ডলার, যা জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বেশি।

এই ব্লক ডিলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ১.১ বিলিয়ন ডলারের এশিয়ান পেইন্টস শেয়ার বিক্রি এবং আজিম প্রেমজির উইপ্রো শেয়ার বিক্রি।

ঋণ ও বিনিয়োগ প্রবণতা: এখনো দ্বিধাগ্রস্ত কর্পোরেট ও ভোক্তা খাত

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, যদিও সুদ কমানো হয়েছে, তবুও তাৎক্ষণিকভাবে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে পারবে না। এএনজেড ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ধীরাজ নিম বলেন, “এই বছর সুদ কমানোর প্রভাবে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে না।”

২০২৪ সালের মার্চে আরবিআই সুদ কমানোর পর মার্চে ব্যক্তিগত ঋণ ১.২৪ শতাংশ বেড়ে ৬৮৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ালেও এপ্রিল মাসে এই প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ০.৫ শতাংশে।

আরবিআই জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুনে ভারতের ঘরোয়া ঋণ জিডিপির ৪২.৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে আগের বছরের মার্চে ছিল ৩৭.৬ শতাংশ।

কর্পোরেট বিনিয়োগ ও অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতা

হিন্দুস্তান জিঙ্ক সম্প্রতি তিন বছরে ১.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এবং জেএসডব্লিউ গ্রুপ পশ্চিম ভারতে নতুন একটি স্টিল প্লান্ট স্থাপনে ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করার পরিকল্পনা করছে।

তবে সরকারিভাবে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে মূলধনী ব্যয় (Capex) ৫৬.৪ বিলিয়ন ডলার হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম।

ফিচ রেটিংসের ঊর্ধ্বতন পরিচালক সস্বতা গুহ বলেন, “সাধারণত কর্পোরেটরা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় যখন উৎপাদন ক্ষমতা ৮৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত তা ৭৫ শতাংশ অতিক্রম করেনি। এই কারণেই প্রত্যাশিত হারে কর্পোরেট বিনিয়োগ বাড়েনি।”

ভারতের আইপিও বাজারে আশার আলো দেখা যাচ্ছে বটে, তবে ভোক্তা ঋণ ও কর্পোরেট বিনিয়োগে বাস্তব প্রবাহ দেখা না গেলে বাজারের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন অনেক বেশি সতর্ক এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে আইপিও বাজারে ব্যস্ততা বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও এর পূর্ণ জোয়ার আসতে সময় লাগতে পারে।

ভারতে আবারও আইপিও জোয়ার আসছে তবে বিনিয়োগকারীরা এখনো সতর্ক

০৫:২৯:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতিবাড়ছে আইপিওর সম্ভাবনা

বেঙ্গালুরু থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড়সড় সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে এনেছে। এই পদক্ষেপের ফলে ২০২৫ সালে শ্লথ হয়ে পড়া প্রাথমিক শেয়ার ইস্যু (আইপিও) বাজারে নতুন করে প্রাণ ফিরে আসার আশা করা হচ্ছে।

চলতি বছরের ১৪ জুন পর্যন্ত ভারতের দুই প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ—বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ ও ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ—এ মাত্র ১৭টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এতে মোট ৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ হয়েছে, যেখানে ২০২৪ সালে ৯১টি আইপিওর মাধ্যমে ১৯ বিলিয়ন ডলার উত্তোলন করা হয়েছিল।

অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও বাজার চাঙ্গা হচ্ছে

বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্লথ অর্থনীতি, দুর্বল কোম্পানির আয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বাজার এখন ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মার্চ মাসে বছরের সর্বনিম্ন পয়েন্ট থেকে বিএসই সেনসেক্স প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতিতে নমনীয়তা এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি (জানুয়ারি-মার্চে ৭.৪%) বড় ভূমিকা রেখেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ ও সুদ কমানো

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির ভোক্তা নির্ভর প্রবণতা বিবেচনায় রেখে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) সুদের হার তিন দফায় মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগে “বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আগে থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” এতে করে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ঋণ নেওয়ার আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

অ্যাভেনডাস ক্যাপিটালের ইক্যুইটি ক্যাপিটাল মার্কেট প্রধান গৌরব সুদ বলেন, “আরবিআই ভোক্তা ব্যয় বাড়াতে চাইছে। এর ইতিবাচক প্রভাব বাজার ও আইপিওতেও পড়বে।”

৭৪টি অনুমোদিত আইপিও এখনও বাজারে আসেনি

ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতোমধ্যে ৭৪টি আইপিওর অনুমোদন দিয়েছে, যার সম্মিলিত পরিমাণ প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি ইলেকট্রনিক্সের ভারতীয় শাখার ৩.২ বিলিয়ন ডলারের আইপিও এবং জেএসডব্লিউ সিমেন্টের ৪৬০ মিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রি অন্তর্ভুক্ত।

এই অনুকূল বাজার পরিস্থিতিতে কিছু স্টার্টআপও আইপিওর পরিকল্পনা করছে। ফিনটেক প্রতিষ্ঠান Groww এবং অনলাইন শিক্ষাপ্ল্যাটফর্ম PhysicsWallah গোপনীয় রুটে বাজার নিয়ন্ত্রকের কাছে আইপিও প্রস্তাব জমা দিয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১ বিলিয়ন ও ৫০০ মিলিয়ন ডলার। লেন্সকার্ট এবং দ্রুত পণ্য সরবরাহকারী জেপ্টোও ১ বিলিয়ন ডলার করে তুলতে চাচ্ছে।

Can Emerging Markets survive Trade War II? | J.P. Morgan Private Bank Asia

গোপনীয় রুট কী?

গোপনীয় রুটের মাধ্যমে আইপিও দাখিল করলে কোম্পানিগুলো প্রথমে পাবলিকভাবে তথ্য প্রকাশ না করেই নিয়ন্ত্রকের যাচাইয়ের সুযোগ পায়। এতে করে আর্থিক ও ব্যবসায়িক তথ্য গোপন রেখে বাজারের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা যায়।

মূল্যায়ন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা

তবে বিনিয়োগকারীরা সাম্প্রতিক কিছু বড় আইপিওর দুর্বল পারফরম্যান্স দেখে এখন অনেক বেশি সতর্ক। যেমন, হিউন্ডাই মোটর ইন্ডিয়ার ৩.২ বিলিয়ন ডলারের আইপিওর পর এর শেয়ার মূল্যের পতন হয়েছে। সুইগি ৭ শতাংশ নিচে, ওলা ইলেকট্রিক প্রায় ৩৯ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে।

অ্যাভেনডাস ক্যাপিটালের গৌরব সুদ বলেন, “বিনিয়োগকারীরা এখন ব্যবসা ও মূল্যায়ন নিয়ে বেশি সময় নিচ্ছেন এবং নিরাপত্তার মার্জিন বাড়াচ্ছেন।”

বিদেশি বিনিয়োগ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব

ইনক্রেড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ফান্ড ম্যানেজার আদিত্য সুদ জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন উদীয়মান বাজারের দিকে ঝুঁকছেন, এবং ভারত এতে উপকৃত হচ্ছে।

“প্রথমে টাকা ইউরোপে গিয়েছিল, এখন পালা ভারতের,”—তিনি বলেন।

প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি বাজারে গতি

জুনের প্রথম ১৬ দিনে কোম্পানিগুলো কিউআইপি (যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বরাদ্দ) মাধ্যমে ৪৬৩ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে, যা আগের দুই মাসের তুলনায় তিনগুণ। একই সময়ে ব্লক ডিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩.৯ বিলিয়ন ডলার, যা জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বেশি।

এই ব্লক ডিলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ১.১ বিলিয়ন ডলারের এশিয়ান পেইন্টস শেয়ার বিক্রি এবং আজিম প্রেমজির উইপ্রো শেয়ার বিক্রি।

ঋণ ও বিনিয়োগ প্রবণতা: এখনো দ্বিধাগ্রস্ত কর্পোরেট ও ভোক্তা খাত

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, যদিও সুদ কমানো হয়েছে, তবুও তাৎক্ষণিকভাবে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে পারবে না। এএনজেড ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ধীরাজ নিম বলেন, “এই বছর সুদ কমানোর প্রভাবে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে না।”

২০২৪ সালের মার্চে আরবিআই সুদ কমানোর পর মার্চে ব্যক্তিগত ঋণ ১.২৪ শতাংশ বেড়ে ৬৮৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ালেও এপ্রিল মাসে এই প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ০.৫ শতাংশে।

আরবিআই জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুনে ভারতের ঘরোয়া ঋণ জিডিপির ৪২.৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে আগের বছরের মার্চে ছিল ৩৭.৬ শতাংশ।

কর্পোরেট বিনিয়োগ ও অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতা

হিন্দুস্তান জিঙ্ক সম্প্রতি তিন বছরে ১.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এবং জেএসডব্লিউ গ্রুপ পশ্চিম ভারতে নতুন একটি স্টিল প্লান্ট স্থাপনে ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করার পরিকল্পনা করছে।

তবে সরকারিভাবে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে মূলধনী ব্যয় (Capex) ৫৬.৪ বিলিয়ন ডলার হতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম।

ফিচ রেটিংসের ঊর্ধ্বতন পরিচালক সস্বতা গুহ বলেন, “সাধারণত কর্পোরেটরা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় যখন উৎপাদন ক্ষমতা ৮৫ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত তা ৭৫ শতাংশ অতিক্রম করেনি। এই কারণেই প্রত্যাশিত হারে কর্পোরেট বিনিয়োগ বাড়েনি।”

ভারতের আইপিও বাজারে আশার আলো দেখা যাচ্ছে বটে, তবে ভোক্তা ঋণ ও কর্পোরেট বিনিয়োগে বাস্তব প্রবাহ দেখা না গেলে বাজারের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন অনেক বেশি সতর্ক এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে আইপিও বাজারে ব্যস্ততা বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও এর পূর্ণ জোয়ার আসতে সময় লাগতে পারে।