‘ইনস্ট্যান্ট রিটেইল‘ লক্ষ্যেই বড় সিদ্ধান্ত
চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট আলিবাবা গ্রুপ তাদের ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম এলেম.ই (Ele.me) এবং অনলাইন ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম ফ্লিগি (Fliggy)–কে তাদের চীনা ই-কমার্স ব্যবসার সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তাদের পূর্বঘোষিত ব্যাপক পুনর্গঠনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে এবং অর্ডার দ্রুত ডেলিভারির ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিইও এডি উ (Eddie Wu)।
সোমবার কর্মীদের পাঠানো এক অভ্যন্তরীণ চিঠিতে তিনি বলেন, “এটি আমাদের কৌশলগত অগ্রগতি নির্দেশ করে, কারণ আমরা কেবল একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ভোক্তা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে রূপ নিতে চলেছি।”
সাবেক সিইও গ্রেপ্তার, আলোচনায় এলেম.ই
এ সিদ্ধান্তের পেছনে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে এলেম.ই-এর সাবেক সিইও হান লিউ-এর গ্রেপ্তার। ৩৭ বছর বয়সী হানকে প্রতিষ্ঠানটির সাপ্লাই চেইনে দুর্নীতির অভিযোগে চীনের সাংহাই পুলিশ তদন্ত করছে। তিনি আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান জেডি ডটকম-এ কাজ করতেন এবং ২০২৪ সালের মার্চে এলেম.ই-র সিইও হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে সরিয়ে দিয়ে লজিস্টিক প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানা গেছে, গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে কর্তৃপক্ষ তাকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আটক করেছিল।
আলিবাবা জানায়, হান লিউ-এর বিষয়ে তারা নিজেরাই অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করে এবং প্রতিষ্ঠানটি কর্মস্থল-সংক্রান্ত অপরাধে ‘জিরো টলারেন্স‘ নীতিতে অটল থাকবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ভোক্তাকেন্দ্রিক মডেল
চিঠিতে উ আরও বলেন, “আমরা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা বিবেচনায় আমাদের ব্যবসার মডেল ও কাঠামো আরও দক্ষভাবে একীভূত করব, যাতে জীবনধর্মী ও মানসম্মত পণ্যের অভিজ্ঞতা দেওয়া যায়।”
আলিবাবা ২০১৮ সালে এলেম.ই কিনে নেয় এবং ২০১০ সাল থেকে ফ্লিগি তাদের ট্রাভেল সার্ভিস ব্র্যান্ড হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে এলেম.ই ‘ইনস্ট্যান্ট রিটেইল‘ বিভাগে আলিবাবার মূল ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তাওবাও-তে যুক্ত আছে, যেখানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অর্ডার, শিপিং ও ডেলিভারি শেষ হয়। ফ্লিগি যদিও সরাসরি ওই বিভাগে নেই, তবে তাওবাও অ্যাপে অন্যত্র যুক্ত আছে।
কর্মীদের প্রতিক্রিয়া: ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
আলিবাবার বেশ কয়েকজন কর্মী নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, এই একীভূতকরণ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, কারণ এতে স্থানীয় ভোক্তাদের ট্রাফিক বাড়বে এবং বিক্রয় বাড়বে বলে প্রত্যাশা।
পুনর্গঠনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসা
২০২৩ সালের মার্চে আলিবাবা ছয়টি প্রধান ব্যবসা ইউনিটে পুনর্গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল এবং এর মধ্যে পাঁচটি ইউনিটকে আলাদাভাবে তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এর কোনোটিই কার্যকর হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি ক্লাউড ইউনিট আলাদা করা এবং লজিস্টিকস প্রতিষ্ঠান কাইন্যাও ও গ্রোসারি চেইন ফ্রেশিপ্পোর আইপিও পরিকল্পনাও বাতিল করেছে। সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ ড্যানিয়েল ঝাং-এর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর এডি উ একের পর এক পদক্ষেপে পূর্ববর্তী পরিকল্পনা বাতিল করে বিভাগগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন।
‘ইনস্ট্যান্ট রিটেইল‘-এ প্রতিযোগিতা তীব্রতর হচ্ছে
চীনের অনলাইন খুচরা বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে এবং ধীর গতির ভোক্তা ব্যয়ের কারণে বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো ডিসকাউন্টে খাবার ডেলিভারির ওপর নির্ভর করছে। এতে খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে তীব্র মূল্যযুদ্ধ চলছে। কিন্তু এই ভর্তুকি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ‘ইনস্ট্যান্ট রিটেইল‘-এর দিকে ঝুঁকছে, যা তরুণ ভোক্তাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
মেইতুয়ান ইতোমধ্যে তাদের ফ্ল্যাশ পারচেজ সার্ভিসের মাধ্যমে খুচরা ই-কমার্সে প্রবেশ করেছে এবং ৩০ হাজারের বেশি মার্চেন্টের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে, যা আলিবাবা ও জেডি ডটকমের ঐতিহ্যবাহী মডেলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
সোমবার মেইতুয়ান ঘোষণা দিয়েছে, তারা পণ্য ক্যাটাগরি বাড়াবে এবং চীনের বিভিন্ন প্রান্তে গুদাম সম্প্রসারণ করবে। তারা সৌদি আরবে ‘কিমার্ট‘ নামে একটি বিদেশি ইনস্ট্যান্ট রিটেইল ব্র্যান্ড চালু করেছে এবং হংকং থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য ও ব্রাজিল পর্যন্ত বিস্তৃত বাজারে সম্প্রসারণ করছে।
আলিবাবা ও জেডি ডটকমের প্রতিক্রিয়া
মেইতুয়ানের এই আগ্রাসী কৌশলের জবাবে আলিবাবা এখন তাওবাও ইনস্ট্যান্ট কমার্সকে পরবর্তী প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে দেখছে। এখন এই প্ল্যাটফর্মটি ইউনিক্লোর সব দোকান থেকে দ্রত ডেলিভারি দিচ্ছে।
অন্যদিকে, জেডি ডটকম ইনস্ট্যান্ট রিটেইল খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। তারা বেইজিং ও সাংহাইয়ে স্পোর্টস ও বিউটি পণ্যের জন্য নতুন স্ব-পরিচালিত গুদাম চালু করছে এবং তাদের খাদ্য সরবরাহ কাঠামোকে এসব নতুন উদ্যোগে কাজে লাগাচ্ছে।
আলিবাবার নতুন এই পদক্ষেপ তাদের ই-কমার্স খাতকে নতুনভাবে সাজাতে এবং প্রতিযোগীদের সঙ্গে টেক্কা দিতে একটি সুপরিকল্পিত চেষ্টা। ফুড ও ট্রাভেল ইউনিটকে একীভূত করে তারা শুধু একটি অনলাইন শপ নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ লাইফস্টাইল প্ল্যাটফর্ম গঠনের পথে এগিয়ে চলেছে।