চতুর্থ সিজন নিয়ে হাজির হয়েছে ‘পঞ্চায়েত’, আর তার সঙ্গে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একসময় যেটি ছিল সহজ-সরল গল্প বলার এবং মৃদু হাসির অনন্য নিদর্শন, এবার সেই ধারাবাহিকটাই পা ফেলেছে আরও বেশি আবেগপ্রবণ ও রাজনৈতিক জমিনে। এই পরিবর্তন সাহসী, কিন্তু পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ বলা যায় না।
আগের সিজনগুলো যেখানে মাটির গন্ধ মিশ্রিত আন্তরিকতায় ভরা ছিল, সেখানে এই সিজনে গল্পের ধারা অনেক বেশি জটিল। ফুলেরা যেন আগের মতো সরল নয়—পুরনো চেনা মুখগুলো আছে, কিন্তু তাদের জীবন অনেক বেশি ভারাক্রান্ত। চরিত্রগুলো যেন একেকটা বিষাদে ঢেকে গেছে, আর রাজনৈতিক চাপাচাপি সেই আবহকেই ঘন করে তুলেছে।
আবেগ যখন হাসির জায়গা দখল করে
চতুর্থ সিজনের শুরুটা হয় তৃতীয় সিজনের ঠিক পরপর। অভিষেক অবশেষে ৯৭.০৫ পার্সেন্টাইল নিয়ে ক্যাট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। বহু কাঙ্ক্ষিত এই সাফল্যটি আশানুরূপ আনন্দ বয়ে আনার কথা থাকলেও, সেটি ডুবে যায় ফুলেরার রাজনৈতিক গোলযোগ আর সম্পর্কের টানাপোড়েনে। রিঙ্কির সঙ্গে অভিষেকের সম্পর্ক সামনে এগোয় ঠিকই, কিন্তু সেই মুহূর্তগুলোও যেন চাপা পড়ে যায় নির্বাচনের উত্তাপে।
প্রধানজির পরাজয় ও কৃষ্ণি দেবীর বিজয় ফুলেরার রাজনীতিতে এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। যে রাজনীতি আগে ছিল ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে মোড়া, এখন তা হয়ে উঠেছে রীতিমতো গুরুতর। চরিত্রগুলোর সাথে গল্পের পরিপক্বতা দেখানো প্রশংসনীয় হলেও, অনেক সময় এই পরিবর্তন ভারসাম্যহীন মনে হয়। পঞ্চায়েতের চেনা হাস্যরস এবার স্পষ্টভাবেই অনুপস্থিত।
অভিনয়ই এখনও সবচেয়ে বড় শক্তি
গল্পের ছন্দপতন সত্ত্বেও, পঞ্চায়েত এখনও দাঁড়িয়ে আছে তার অসাধারণ অভিনয়শিল্পীদের কাঁধে ভর করে। জিতেন্দ্র কুমার ‘অভিষেক’ চরিত্রে এক সংযত অভিনয়ের মাধ্যমে চরিত্রটির দ্বিধা, হতাশা ও অভ্যন্তরীণ সংগ্রামকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন। নীনা গুপ্তা ও রঘুবীর যাদবের অভিনয়ে রয়েছে পূর্বের মতোই স্বাভাবিকতা ও দৃঢ়তা, যদিও এবার হাসির সুযোগ কম। ফয়সাল মালিক (প্রহ্লাদ) এই সিজনে আরও উজ্জ্বল, বিশেষ করে শোক ও মানসিক টানাপোড়েনের সূক্ষ্ম প্রকাশে।
দ্বিধান্বিত দর্শক প্রতিক্রিয়া
এই সিজন নিয়ে দর্শকদের মতামত বিভক্ত। কেউ কেউ আবেগপূর্ণ গল্প বলার এই নতুন ধারা প্রশংসা করেছেন, আবার অনেকেই আগের মতো হালকা মেজাজের গল্পের অভাব অনুভব করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ধীরগতি’, ‘জটিল’, ‘শুধু অভিনয় দেখে টিকে আছে’—এই শব্দগুলোই সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
সিজনটি ব্যর্থ না হলেও, এটা আগের সিজনগুলোর মতো ধারালো নয়। আবেগের ভারে গল্পটা কখনও কখনও চাপা পড়ে গেছে। সিরিজটি আরও ‘গম্ভীর’ হতে গিয়ে কোথাও যেন তার আসল আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে।
সামনে কী অপেক্ষা করছে?
এই সিজনটা সম্ভবত একটি সেতু—পঞ্চায়েতের ভবিষ্যৎ গল্পকে একটি নতুন মোড়ে নিয়ে যেতে চায়। যদি পরবর্তী সিজনে এই সিরিজটি তার পুরনো আবেগ ও নতুন বাস্তবতাকে একসঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারে, তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় সাফল্য।
এই মুহূর্তে, পঞ্চায়েত সিজন ৪ হলো একটি পরিবর্তনশীল গ্রাম। চরিত্রগুলো এখনও মন ছুঁয়ে যায়, কিন্তু গল্প বলার হৃদয় যেন কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। এটা পরিণতির পথ নাকি শুধুই একটি ক্ষণিকের মোড়? সে উত্তর সময়ই দেবে।