যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের কার্যসূচি: ২৩ জুন ২০২৫
২৩ জুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, ডেপুটি সেক্রেটারি ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ ও মাইকেল রিগাস ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দপ্তরে বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নেন। রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অ্যালিসন হুকার এবং ইউরোপ ও আফ্রিকা বিষয়ক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস ও অ্যাঙ্গোলায় সফররত ছিলেন।
লুক্সেমবার্গের জাতীয় দিবসে শুভেচ্ছা
এক প্রেস বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও লুক্সেমবার্গের গ্র্যান্ড ডিউকের জন্মদিনে দেশটির জনগণকে অভিনন্দন জানান। তিনি ১৯৪৪ সালের নাৎসি জার্মান দখল থেকে মুক্তির স্মরণ এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন। লুক্সেমবার্গের জাতীয় প্রতিরক্ষায় ব্যয় বৃদ্ধি ন্যাটোর ভবিষ্যৎ দৃঢ়তার জন্য ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হেগে ন্যাটো সম্মেলন: হুইটাকারের ব্রিফিং
নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটো সম্মেলনের আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো প্রতিনিধি ম্যাথিউ হুইটাকার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে অংশ নেন। তিনি বলেন—
- ন্যাটোতে ৩২ সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক।
- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জিডিপির অন্তত ৫% প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের অঙ্গীকার সামনে এসেছে।
- এই প্রতিশ্রুতি শুধু ব্যয়ের মাত্রা নয়, এটি ন্যাটোর নতুন যুগে প্রবেশ, নিরাপত্তা পুনর্বিন্যাস ও যুগোপযোগী প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির প্রতীক।
যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য: প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ৫ শতাংশ মানদণ্ড
হুইটাকার বলেন—
- ৩.৫% সরাসরি প্রতিরক্ষা খাতে এবং বাকি ১.৫% পরোক্ষ খাতে (যেমন: সামরিক অবকাঠামো, সাইবার সুরক্ষা) ব্যয় হবে।
- উন্নত প্রযুক্তি, যেমন এআই, অটোনোমাস সিস্টেম, এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেসে বিনিয়োগ জরুরি।
- যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হলো প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই শিল্প খাত গড়ে তোলা।
জবাবদিহি ও সময়সীমা নিয়ে আলোচনা
পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো যুক্তরাষ্ট্রও ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে ৫% ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পক্ষে। হুইটাকার বলেন—
- সময়সীমা হবে “যত দ্রুত সম্ভব”।
- রাশিয়া ও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কর্মকাণ্ড এই সময়সীমা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
- প্রতিবছর বাজেট বাড়ানোর মাধ্যমে বাস্তব অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে।
ন্যাটো ও আইপি৪ (IP4) দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয়
হুইটাকার জানান, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের চারটি মিত্র রাষ্ট্র (IP4) ন্যাটো সম্মেলনে আমন্ত্রিত এবং যুক্তরাষ্ট্র চাইছে তারা যেন প্রতিরক্ষা খাতে একই রকম অগ্রগতি দেখায়।
- যুক্তরাষ্ট্র চাইছে IP4 রাষ্ট্রগুলোর ব্যয়ও ইউরোপ ও কানাডার মতো বৃদ্ধি পাক।
- বিশেষভাবে শাংগ্রি-লা সম্মেলনে এই বার্তা তুলে ধরা হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কূটনৈতিক উদ্যোগ
রাশিয়ার সাম্প্রতিক বেসামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হুইটাকার বলেন—
- কোনো সামরিক সমাধান নয়, কূটনৈতিক সমাধানই একমাত্র পথ।
- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলোচনার সময় হতাহতের ঘটনায় হতাশ।
- রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়কে সংযম বজায় রাখতে এবং আন্তরিক আলোচনায় বসার আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির বৈশ্বিক সমন্বয়
হুইটাকার জানান—
- যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা অবস্থান পর্যালোচনা আগামী গ্রীষ্ম বা শরতে শেষ হবে।
- ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে কোনো ঘাঁটি স্থানান্তর হলে তা নিরাপত্তার ফাঁক তৈরি করবে না।
- ন্যাটোর প্রতিটি সদস্যকে প্রযুক্তি ও প্রস্তুতির দিক দিয়ে সমানভাবে অগ্রসর হতে হবে।
সিনিয়র কর্মকর্তা ক্রিস্টেনসেনের নেদারল্যান্ডস সফর
নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারির দায়িত্বে থাকা ব্রেন্ট টি. ক্রিস্টেনসেন ২৩-২৫ জুন হেগ সফরে অংশ নিচ্ছেন। তিনি ন্যাটো সম্মেলনের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি ফোরামে যোগ দেবেন এবং ইউরোপ, আমেরিকা ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিনিধি ও ডাচ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
যুক্তরাষ্ট্র এবার প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ৫ শতাংশ মানদণ্ডকে কেন্দ্র করে ন্যাটোকে আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী জোটে রূপ দিতে চায়। এই সম্মেলন কেবল সামরিক প্রস্তুতির নয়, বরং প্রযুক্তি, অর্থনীতি, শিল্প খাত ও কূটনীতির এক সম্মিলিত উদাহরণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে।