১২:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনীতি অনিশ্চিত: মাহাথিরের সতর্ক বার্তা

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহামাদ সম্প্রতি আইটিভি-কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে “খুব বেশি আশাবাদী নন”। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাকে স্বাগত জানালেও, মাহাথিরের মতে “একই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পর এখন সবাই আলাদা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে”—যা স্থিতিশীল গণতন্ত্র গড়ে তোলার পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কেন হতাশ মাহাথির?

ঐক্যের ভাঙন

মাহাথির স্মরণ করিয়ে দেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে অপসারণের আন্দোলনে বিপুল জনসমর্থন থাকলেও “কী ধরনের সরকার চাই”—এ বিষয়ে ঐক্যমত সৃষ্টি হয়নি। এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি নিজস্ব এজেন্ডা সামনে আনায় ‘ভেতরের কলহ’ বাড়ছে।

গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ

তার ভাষায়, “গণতন্ত্রের সমস্যাই হলো—মানুষ সর্বদা সেরা নেতৃত্ব বেছে নেয় না; কখনও ভুল লোককেও বেছে নেয়।” ভোটাররা যদি দায়িত্বশীল না হন, অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়বে বলেই তিনি মনে করেন।

আঞ্চলিক স্বীকৃতি ও ভৌগোলিক বাধা

বাংলাদেশের আসিয়ান (ASEAN)-এ অন্তর্ভুক্তি চেষ্টাকে প্রশংসা করলেও মাহাথির দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভৌগোলিক সীমা আমরা ভেঙে দিতে পারি না; তা হলে আসিয়ান দ্বিতীয় জাতিসংঘে পরিণত হবে।” অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভৌগোলিক বাস্তবতা তাকে সংশয়ী করে তুলেছে।

রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক চাপ

মাহাথির মনে করিয়ে দেন, ১০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের ওপর ইতিমধ্যে বৈশ্বিক চাপ আছে। রাজনৈতিক উদ্ভ্রান্তি বাড়লে এই সংকটের সমাধান আরও পিছিয়ে যেতে পারে।

ইউনুস-প্রশংসাতবু পরামর্শ দিতে অনিচ্ছুক

মাহাথির আইটিভিকে জানান, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের “ব্যক্তিগত ক্ষমতার লোলুপতা নেই” বলে তিনি শ্রদ্ধা করেন। দুই নেতার টোকিও-বৈঠকে ইউনুস বাংলাদেশের সংস্কার-পরিকল্পনা আলোচনা করলেও, মাহাথির কোনো ‘পরামর্শগুরু’ হতে রাজি নন: “আমি শুনেছি, কিন্তু বাংলাদেশকে উপদেশ দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই,”—এ মন্তব্য থেকেই তার সতর্ক অবস্থান স্পষ্ট।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে

  • নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
    “ঐক্যের অভাব ও অন্তঃকলহ—এ দু’টি কারণই মাহাথিরের অনাস্থার মূল ভিত্তি; আন্তর্জাতিক মহলে এ বার্তা শোনা যাচ্ছে।”
  • মালয়েশিয়া-ভিত্তিক কর্মী কাবির আনোয়ার
    “মাহাথিরের বক্তব্য বাংলাদেশকে সতর্ক সংকেত দেয়: আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও কূটনৈতিক সমর্থন ধরে রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি।”

সামনে কী?

মাহাথিরের মতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য “জনগণকেই ভালো নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে”—তা না হলে আন্দোলনের ফাটল সামাল দিতে চ্যালেঞ্জ বাড়বে। অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ২০২৬-এর মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; কিন্তু মাহাথিরের সন্দেহ, “দ্রুত গৃহীভূত স্বার্থসংঘাত” সেই পথ কঠিন করে তুলবে।

সাবেক মালয়েশিয়ান নেতার এই উন্মুক্ত শঙ্কা বাংলাদেশের রাজনীতিকদের জন্য এক ধরনের ‘রিয়ালিটি-চেক’। চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে কার্যকর সংলাপ ও বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ না থাকলে, আন্তর্জাতিক আস্থা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে—মাহাথির মোহামাদের সতর্কবার্তা সেটিই নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিল।

বাংলাদেশের রাজনীতি অনিশ্চিত: মাহাথিরের সতর্ক বার্তা

০৩:৫২:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহামাদ সম্প্রতি আইটিভি-কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে “খুব বেশি আশাবাদী নন”। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাকে স্বাগত জানালেও, মাহাথিরের মতে “একই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পর এখন সবাই আলাদা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে”—যা স্থিতিশীল গণতন্ত্র গড়ে তোলার পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কেন হতাশ মাহাথির?

ঐক্যের ভাঙন

মাহাথির স্মরণ করিয়ে দেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে অপসারণের আন্দোলনে বিপুল জনসমর্থন থাকলেও “কী ধরনের সরকার চাই”—এ বিষয়ে ঐক্যমত সৃষ্টি হয়নি। এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি নিজস্ব এজেন্ডা সামনে আনায় ‘ভেতরের কলহ’ বাড়ছে।

গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ

তার ভাষায়, “গণতন্ত্রের সমস্যাই হলো—মানুষ সর্বদা সেরা নেতৃত্ব বেছে নেয় না; কখনও ভুল লোককেও বেছে নেয়।” ভোটাররা যদি দায়িত্বশীল না হন, অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়বে বলেই তিনি মনে করেন।

আঞ্চলিক স্বীকৃতি ও ভৌগোলিক বাধা

বাংলাদেশের আসিয়ান (ASEAN)-এ অন্তর্ভুক্তি চেষ্টাকে প্রশংসা করলেও মাহাথির দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভৌগোলিক সীমা আমরা ভেঙে দিতে পারি না; তা হলে আসিয়ান দ্বিতীয় জাতিসংঘে পরিণত হবে।” অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভৌগোলিক বাস্তবতা তাকে সংশয়ী করে তুলেছে।

রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক চাপ

মাহাথির মনে করিয়ে দেন, ১০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের ওপর ইতিমধ্যে বৈশ্বিক চাপ আছে। রাজনৈতিক উদ্ভ্রান্তি বাড়লে এই সংকটের সমাধান আরও পিছিয়ে যেতে পারে।

ইউনুস-প্রশংসাতবু পরামর্শ দিতে অনিচ্ছুক

মাহাথির আইটিভিকে জানান, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের “ব্যক্তিগত ক্ষমতার লোলুপতা নেই” বলে তিনি শ্রদ্ধা করেন। দুই নেতার টোকিও-বৈঠকে ইউনুস বাংলাদেশের সংস্কার-পরিকল্পনা আলোচনা করলেও, মাহাথির কোনো ‘পরামর্শগুরু’ হতে রাজি নন: “আমি শুনেছি, কিন্তু বাংলাদেশকে উপদেশ দেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই,”—এ মন্তব্য থেকেই তার সতর্ক অবস্থান স্পষ্ট।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে

  • নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
    “ঐক্যের অভাব ও অন্তঃকলহ—এ দু’টি কারণই মাহাথিরের অনাস্থার মূল ভিত্তি; আন্তর্জাতিক মহলে এ বার্তা শোনা যাচ্ছে।”
  • মালয়েশিয়া-ভিত্তিক কর্মী কাবির আনোয়ার
    “মাহাথিরের বক্তব্য বাংলাদেশকে সতর্ক সংকেত দেয়: আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও কূটনৈতিক সমর্থন ধরে রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি।”

সামনে কী?

মাহাথিরের মতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য “জনগণকেই ভালো নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে”—তা না হলে আন্দোলনের ফাটল সামাল দিতে চ্যালেঞ্জ বাড়বে। অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ২০২৬-এর মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; কিন্তু মাহাথিরের সন্দেহ, “দ্রুত গৃহীভূত স্বার্থসংঘাত” সেই পথ কঠিন করে তুলবে।

সাবেক মালয়েশিয়ান নেতার এই উন্মুক্ত শঙ্কা বাংলাদেশের রাজনীতিকদের জন্য এক ধরনের ‘রিয়ালিটি-চেক’। চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে কার্যকর সংলাপ ও বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ না থাকলে, আন্তর্জাতিক আস্থা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে—মাহাথির মোহামাদের সতর্কবার্তা সেটিই নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিল।