রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের জেরে দামে ব্যাপক উর্ধ্বগতি
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চীন সরকার নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন চালু করার পর ড্রোন যন্ত্রাংশের দাম অভাবনীয়ভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এই দাম তিনগুণ বা তার চেয়েও বেশি হয়েছে। রপ্তানির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পর এই দাম বাড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
চীনের শুল্ক প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, দুই-ব্যবহারযোগ্য (dual-use) পণ্যের রপ্তানিতে অনুমতির বাধ্যবাধকতা জারির পর ড্রোনে ব্যবহৃত অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের রপ্তানি কমে গেছে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে ইঞ্জিন, মোটর, লেজার যন্ত্রপাতি এবং শত্রু ড্রোনকে বিভ্রান্ত করতে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ নির্গমণ যন্ত্র।
ইনফ্রারেড যন্ত্রাংশে কমেছে রপ্তানি, বেড়েছে দাম
ড্রোনে ব্যবহৃত ইনফ্রারেড থার্মোগ্রাফি যন্ত্র — যা অন্ধকারে বা উঁচু জায়গায় মানুষের উপস্থিতি শনাক্ত করতে সক্ষম — এর রপ্তানিও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে, এসব যন্ত্রের রপ্তানির পরিমাণ ৩০ শতাংশ কমে গেছে, কিন্তু রপ্তানিমূল্য ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে প্রতি ইউনিটের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এসব যন্ত্রের রপ্তানি ৬০ শতাংশ কমে গেছে, কিন্তু প্রতি ইউনিটের দাম বেড়ে ৩.৫ গুণ হয়েছে।
অন্যান্য যন্ত্রাংশেও সংকট
ড্রোনে স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ‘ইনর্শিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিট’-এর বিশ্বব্যাপী রপ্তানি প্রায় ৮০ শতাংশ কমেছে এবং প্রতি ইউনিটের দাম চারগুণ বেড়েছে। ডিসি মোটরের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে এবং এসি মোটরের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
ইউরোপেও মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব
Financial Times-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কারণে ড্রোন যন্ত্রাংশের দাম বাড়ছে। এক ফরাসি সামরিক ড্রোন নির্মাতা যখন চীন থেকে থার্মাল ক্যামেরা আমদানির চেষ্টা করে, তখন সরবরাহকারীরা আগের দামের দ্বিগুণ মূল্য দাবি করে—রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি এড়াতে।
বৈশ্বিক বাজারে চীনের আধিপত্য
বর্তমানে বিশ্বের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বাণিজ্যিক ড্রোন চীনেই তৈরি হয়। চীন সেন্সর, স্পিড কন্ট্রোলারসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। সাবেক মার্কিন সিনেটর (বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মার্কো রুবিওর অফিস ২০২৪ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনা কোম্পানি DJI বাণিজ্যিক ড্রোন বাজারে সবচেয়ে প্রভাবশালী।
ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় প্রযুক্তিগত প্রতিক্রিয়া
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়, তখন চীন আমেরিকান ড্রোন কোম্পানি স্কাইডিও-র ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর ফলে স্কাইডিও চীনা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতে না পারায় ব্যাটারি সরবরাহে সংকটে পড়ে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ডিসি মোটরের চালান প্রায় ৮০ শতাংশ কমেছে, কিন্তু রাশিয়ায় এসব চালান বেড়েছে ২৩ গুণ। ইনর্শিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিটের রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ শতাংশ কমেছে, কিন্তু রাশিয়ায় দ্বিগুণ হয়েছে।
সামরিক ও কূটনৈতিক চাপের হাতিয়ার হতে পারে ড্রোন
চীন সরকার বলছে, এসব রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য হলো যন্ত্রাংশের সামরিক ব্যবহার ঠেকানো। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কৌশলগত চাপ প্রয়োগের একটি উপায়ও হতে পারে। এর আগে চীন যখন বিরল খনিজ রপ্তানিতে বাধা দেয়, তখন বৈশ্বিক গাড়ি ও অস্ত্রশিল্পে বড় ধাক্কা লাগে। একইভাবে ড্রোন খাতকেও চীন একটি কৌশলগত কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।