ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখোমুখি
দ্য হেগে ন্যাটো সম্মেলনের ফাঁকে মার্কো রুবিও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দেন, যেখানে তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন-ইসরায়েলি যৌথ হামলার পেছনের কৌশল এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
হামলার ফলাফল
রুবিও বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখন এক সপ্তাহ আগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে গেছে। ফোরদো, ইসফাহান ও নাটানজে যে হামলা চালানো হয়েছে, তাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফোরদোতে গভীর ভূগর্ভে থাকা স্থাপনায় ‘পেনেট্রেটর বোমা’ ব্যবহার করা হয়।
গোপন তথ্য ফাঁসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
রুবিও বলেন, গোয়েন্দা সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক। এসব ফাঁস তথ্য বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয় এবং অনেক সময় প্রশাসনকে হেয় করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়।
ভবিষ্যতের হামলার সম্ভাবনা?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, এই হামলা ছিল এককালীন একটি অভিযান। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশনা ছিল, তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করতে হবে, এবং যেন কোনো প্রাণহানি না ঘটে।
এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতিও কার্যকর হয়। রুবিও মনে করেন, এই পদক্ষেপই সংঘর্ষের ইতি টেনেছে।
যুদ্ধ নয়, সমঝোতার প্রত্যাশা
রুবিও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চান না, বরং সমঝোতার মাধ্যমে একটি চুক্তি চান। তবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে ইরান এগোলে যুক্তরাষ্ট্র বসে থাকবে না।
প্রশাসনের অবস্থান: সরকার বদল নয়, আত্মরক্ষার কৌশল
রুবিও ব্যাখ্যা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ইরান সরকারকে সরিয়ে দেওয়া নয়। যদি ইরান সরকার জনগণের উন্নয়নের চেয়ে সন্ত্রাসে অর্থ ব্যয় করে, তবে জনগণই হয়তো সরকার পরিবর্তনের উদ্যোগ নেবে।
যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলের ভূমিকা
রুবিও জানান, ইসরায়েল স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল, তাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে এবং তারা আর হামলা করবে না, যদি ইরান প্রতিক্রিয়া না দেখায়। শেষ মুহূর্তে একটি রকেট হামলায় পাঁচজন ইসরায়েলি নিহত হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফোনে ইসরায়েলকে শান্ত থাকতে বলেন এবং তারা হামলা থেকে সরে আসে।
ন্যাটো সম্মেলনে ৫% প্রতিশ্রুতি
রুবিও জানান, এই সম্মেলনে ন্যাটো সদস্যরা তাদের সামরিক ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি মূলত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দীর্ঘমেয়াদি চাপ প্রয়োগের ফল। তবে স্পেন এখনো এতে পূর্ণ সমর্থন দেয়নি।
ইউক্রেন সংকট ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান
রুবিও বলেন, রাশিয়া এখনো যুদ্ধে জয়লাভের চেষ্টা করছে, তবে এতে তাদের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৮০ হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। এই যুদ্ধ অকারণ, রক্তক্ষয়ী ও ধ্বংসাত্মক।
তিনি আরও জানান, আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে এখনই যদি সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে শান্তির আলোচনার সুযোগও হারিয়ে যাবে।
প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ
রুবিও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ক্যাবিনেট সদস্যরা নানা মতামত দেন ঠিকই, তবে সিদ্ধান্ত একাই নেন প্রেসিডেন্ট এবং বাকিদের দায়িত্ব সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা।
তিনি আরও বলেন, তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী—দুই ভূমিকায় কাজ করছেন। এতে করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আরও দ্রুত হচ্ছে।
এনএসসির ভূমিকা
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (NSC) একটি সমন্বয়কারী কাঠামো, যেটি বিভিন্ন দপ্তরকে একত্রিত করে প্রেসিডেন্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে সহায়তা করে। রুবিও বলেন, এই কাঠামো এখন পর্যন্ত সফলভাবে কাজ করছে, বিশেষ করে ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত মোকাবিলায়।