১১:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি: মহাকাশে পাঠানো হলো গাঁজা গাছের বীজ

সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক অভিযানে গাঁজা গাছের বীজ পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। ২৩ জুন, সোমবার, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে শুরু হয় এই ঐতিহাসিক যাত্রা। অভিযানে ব্যবহৃত হয় একটি ছোট জৈব ইনকিউবেটর ‘মায়াস্যাট-১’, যা পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর ওপর দিয়ে ঘুরে উচ্চ মাত্রার বিকিরণের প্রভাবে উদ্ভিদের জিনগত পরিবর্তন শনাক্ত করতে সাহায্য করবে।

এই প্রকল্পের নাম ‘মার্টিয়ান গ্রো’, যেটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্লোভেনিয়ার রিসার্চ ন্যাচার ইনস্টিটিউটের বোঝিদার রাদিশিচ। তিনি মহাকাশে গাঁজা চাষের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রায় ১৫০টি গাঁজা গাছের বীজ পাঠানো হয়েছে মায়াস্যাট-১ ইনকিউবেটরে। উদ্দেশ্য একটাই—মহাকাশের কঠিন পরিবেশে এ উদ্ভিদ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা বোঝা এবং ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহে চাষযোগ্য একটি উদ্ভিদ হিসেবে গাঁজার উপযোগিতা নির্ধারণ করা।

কেন গাঁজা?

রাদিশিচ বলেন, গাঁজা একটি বহুমুখী ও অভিযোজিত উদ্ভিদ। এটি খাবার, প্রোটিন, টেক্সটাইল, নির্মাণ সামগ্রী, ঔষধ এবং প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। এটি তুলনামূলক কম পানি এবং পুষ্টি নিয়েও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে। অতএব, ভবিষ্যতের চন্দ্র বা মঙ্গল ঘাঁটির জন্য এটি হতে পারে একটি আদর্শ ফসল।

বিভিন্ন গবেষক যেমন গ্যারি ইয়েটস এবং নাসা বিজ্ঞানী ড. মার্শাল পোর্টারফিল্ডও একমত যে গাঁজার জিনগত পরিবর্তন, বিকিরণ সহ্যক্ষমতা এবং স্থায়িত্ব মহাকাশ কৃষির জন্য একে উপযুক্ত করে তোলে।

এরপর কী?

মিশন শেষে মায়াস্যাট-১ প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করবে এবং ইউরোপে ফিরিয়ে আনা হবে। আগামী দুই বছর ধরে রাদিশিচের দল লুবলিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের সঙ্গে যৌথভাবে মহাকাশে যাওয়া বীজ থেকে ক্লোন তৈরি করে পরীক্ষা চালাবে। লক্ষ্য থাকবে—জিনগত পরিবর্তন, ক্যানাবিনয়েড (যেমন THC ও CBD) উৎপাদনে পার্থক্য, পাতা, শিকড় ও জল ব্যবহারসহ গাছের কাঠামোগত ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা।

গবেষকরা মনে করেন, এমন ফলাফল গবেষণার নতুন দ্বার খুলতে পারে এবং পৃথিবীতে গাঁজার বিজ্ঞানভিত্তিক স্বীকৃতি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। যদিও মহাকাশে গাঁজা চাষ এখনো দূরের স্বপ্ন, তবে এই অভিযান ভবিষ্যতের মহাকাশ কৃষি ও উদ্ভিদ অভিযোজন গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

গেনোপ্ল্যান্ট নামের স্লোভেনিয়ান মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ চাষ প্রকল্পের জন্য ২০২৭ সালে একটি নতুন ইনকিউবেটর পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, যেখানে একাধিক বছর ধরে উদ্ভিদের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

এই গবেষণা ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে গাঁজাকে ‘সুপারক্রপ’ হিসেবে তুলে ধরতে পারে, আর একইসঙ্গে পৃথিবীতেও উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সহায়ক হবে। গবেষক লুমির হানুশ আশাবাদী, “যদি উল্লেখযোগ্য ফলাফল আসে, তবে তা গাঁজার বৈজ্ঞানিক গুরুত্বকে দ্রুততরভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে।”

মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি: মহাকাশে পাঠানো হলো গাঁজা গাছের বীজ

০৬:১০:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক অভিযানে গাঁজা গাছের বীজ পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। ২৩ জুন, সোমবার, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে শুরু হয় এই ঐতিহাসিক যাত্রা। অভিযানে ব্যবহৃত হয় একটি ছোট জৈব ইনকিউবেটর ‘মায়াস্যাট-১’, যা পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর ওপর দিয়ে ঘুরে উচ্চ মাত্রার বিকিরণের প্রভাবে উদ্ভিদের জিনগত পরিবর্তন শনাক্ত করতে সাহায্য করবে।

এই প্রকল্পের নাম ‘মার্টিয়ান গ্রো’, যেটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্লোভেনিয়ার রিসার্চ ন্যাচার ইনস্টিটিউটের বোঝিদার রাদিশিচ। তিনি মহাকাশে গাঁজা চাষের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রায় ১৫০টি গাঁজা গাছের বীজ পাঠানো হয়েছে মায়াস্যাট-১ ইনকিউবেটরে। উদ্দেশ্য একটাই—মহাকাশের কঠিন পরিবেশে এ উদ্ভিদ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা বোঝা এবং ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহে চাষযোগ্য একটি উদ্ভিদ হিসেবে গাঁজার উপযোগিতা নির্ধারণ করা।

কেন গাঁজা?

রাদিশিচ বলেন, গাঁজা একটি বহুমুখী ও অভিযোজিত উদ্ভিদ। এটি খাবার, প্রোটিন, টেক্সটাইল, নির্মাণ সামগ্রী, ঔষধ এবং প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। এটি তুলনামূলক কম পানি এবং পুষ্টি নিয়েও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে। অতএব, ভবিষ্যতের চন্দ্র বা মঙ্গল ঘাঁটির জন্য এটি হতে পারে একটি আদর্শ ফসল।

বিভিন্ন গবেষক যেমন গ্যারি ইয়েটস এবং নাসা বিজ্ঞানী ড. মার্শাল পোর্টারফিল্ডও একমত যে গাঁজার জিনগত পরিবর্তন, বিকিরণ সহ্যক্ষমতা এবং স্থায়িত্ব মহাকাশ কৃষির জন্য একে উপযুক্ত করে তোলে।

এরপর কী?

মিশন শেষে মায়াস্যাট-১ প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করবে এবং ইউরোপে ফিরিয়ে আনা হবে। আগামী দুই বছর ধরে রাদিশিচের দল লুবলিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের সঙ্গে যৌথভাবে মহাকাশে যাওয়া বীজ থেকে ক্লোন তৈরি করে পরীক্ষা চালাবে। লক্ষ্য থাকবে—জিনগত পরিবর্তন, ক্যানাবিনয়েড (যেমন THC ও CBD) উৎপাদনে পার্থক্য, পাতা, শিকড় ও জল ব্যবহারসহ গাছের কাঠামোগত ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা।

গবেষকরা মনে করেন, এমন ফলাফল গবেষণার নতুন দ্বার খুলতে পারে এবং পৃথিবীতে গাঁজার বিজ্ঞানভিত্তিক স্বীকৃতি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। যদিও মহাকাশে গাঁজা চাষ এখনো দূরের স্বপ্ন, তবে এই অভিযান ভবিষ্যতের মহাকাশ কৃষি ও উদ্ভিদ অভিযোজন গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

গেনোপ্ল্যান্ট নামের স্লোভেনিয়ান মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ চাষ প্রকল্পের জন্য ২০২৭ সালে একটি নতুন ইনকিউবেটর পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, যেখানে একাধিক বছর ধরে উদ্ভিদের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

এই গবেষণা ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে গাঁজাকে ‘সুপারক্রপ’ হিসেবে তুলে ধরতে পারে, আর একইসঙ্গে পৃথিবীতেও উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সহায়ক হবে। গবেষক লুমির হানুশ আশাবাদী, “যদি উল্লেখযোগ্য ফলাফল আসে, তবে তা গাঁজার বৈজ্ঞানিক গুরুত্বকে দ্রুততরভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে।”