০২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

আমাজনে সৌরশক্তি চালিত নৌকা, মাদক ভাঙ্গছে আদিবাসী জীবনযাত্রা

আদিবাসী নদীপথে নতুন আস্থা

পেরুর সীমান্তঘেঁষা ইকুয়েডরের আমাজনে রবিবারের তপ্ত সকালে কুসুতকাও গ্রামের দিকে ছুটল একটি ক্যানু। ২০ জন আচার যুবক খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন—এই মিলন বহু বছর পর পুনরুজ্জীবিত হল। পথের সহযাত্রী ২৪টি সৌর প্যানেল, যা সূর্যের শক্তি সঞ্চয় করে ইঞ্জিনে প্রাণ জোগায়।

সোলার নৌবহরের উত্থান

২০১৭ সালে প্রথম সূর্যশক্তিচালিত নৌকা নদীতে নামার পর থেকে আচার জনগোষ্ঠী এখন ১০টি বৈদ্যুতিক ক্যানু পরিচালনা করে—ইকুয়েডর, পেরু, ব্রাজিল এমনকি সলোমন द्वীপপুঞ্জেও। একেকটিতে সর্বোচ্চ ২০ জন যাত্রী যেতে পারেন। শিশুরা স্কুলে, রোগীরা ক্লিনিকে, শোকসভায় শবযাত্রাও চলছে এই নৌকায়। কুসুতকাওয়ের নিনকি রোলান্ড আন্টিক জানালেন, ‘‘মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা স্ত্রীর রক্তক্ষরণ থামাতে দ্রুত সেবাকেন্দ্রে পৌঁছতে পেরেছিলাম, সে আজ বেঁচে আছে এই নৌকার বদৌলতে।’’

ডিজেল বনাম সৌরদুধর্ষতার মূল্য

পাস্তাসা প্রদেশের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চলে সড়ক না থাকায় নৌযাত্রাই ভরসা। ১৯৯০-এর দশক থেকে ডিজেলচালিত ‘পেকে পেকে’ নৌকা প্রতিদিন ২০০-র বেশি ভ্রমণ করে, তবে শব্দদূষণ, ধোঁয়া ও জ্বালানি ছড়িয়ে মাছ মেরে ফেলে। জ্বালানি প্রতি গ্যালন ১০ ডলার—শহরের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি—যাত্রীভাড়াও ৫-১০ ডলার, যা অনেক আচার পরিবারের সামর্থ্যের বাইরে।

সূর্যের গল্পে ইলেকট্রিক তাপিয়াতপিয়া

পুরনো উপকথায় ‘তাপিয়াতপিয়া’ নামের বৈদ্যুতিক কাঁকড়া জলের নিচে যাত্রী বয়ে নিত। ২০০৯-এ ইংরেজি শেখাতে আসা আমেরিকান অলিভার উটনে এ গল্প শুনে সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি শিখে ফিরে এলেন—উদ্দেশ্য, উপকথার আধুনিক সংস্করণ গড়া। আচারদের সঙ্গে গড়লেন ‘কারা সোলার’ এনজিও; ২০১৭-র সেই প্রথম নৌযাত্রা ১,৮০০ কিমি পাড়ি দেয়। আগামী পাঁচ বছরে ২৫০টি সৌর ক্যানু নামানোর লক্ষ্য।

প্রযুক্তিগত ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ

জার্মানি-মার্কিন ইঞ্জিন শুকনো মৌসুমের অগভীর ধারা, ভাঙা গাছপালায় বারবার আটকে যায়। ডিজেল নৌকা এখনো দ্রুততর—দৈনন্দিন কাজেই তা বড় সুবিধা। তাই আচারদের অংশবিশেষ দ্বিধায়। এ সমস্যা মেটাতে উটনে গড়েছেন ‘মতোরেস আমাজোনাস’—স্থানীয় বাস্তবতার উপযোগী ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে।

সড়ক নয়সুরক্ষিত নদীপথ

প্রাদেশিক প্রধান আন্দ্রেস গ্রান্দা বললেন, সড়ক এলে মাদক-মদ ঢুকে বহু আদিবাসী সমাজ ভেঙেছে; তাই বিকল্প পথ জরুরি। কারা সোলারের সভাপতি নান্তু কানেলোসের কণ্ঠে দৃঢ়তা, ‘‘হাইওয়ে নয়, নদীপথই আমাদের জীবন।’’

 

আগামীর স্বপ্ন

আচাররা চান কপাওয়ারি নদীকে পুরোপুরি সৌরচালিত জলপথে রূপ দিতে—প্রাচীন ঐতিহ্য আর আধুনিক টেকনোলজির মিশেলে নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে। প্রিফেক্ট গ্রান্দার কথায়, ‘‘এ নৌকা আমাদের জমি-জঙ্গল রক্ষা করতে সহায়।’’

আমাজনে সৌরশক্তি চালিত নৌকা, মাদক ভাঙ্গছে আদিবাসী জীবনযাত্রা

১০:০০:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

আদিবাসী নদীপথে নতুন আস্থা

পেরুর সীমান্তঘেঁষা ইকুয়েডরের আমাজনে রবিবারের তপ্ত সকালে কুসুতকাও গ্রামের দিকে ছুটল একটি ক্যানু। ২০ জন আচার যুবক খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন—এই মিলন বহু বছর পর পুনরুজ্জীবিত হল। পথের সহযাত্রী ২৪টি সৌর প্যানেল, যা সূর্যের শক্তি সঞ্চয় করে ইঞ্জিনে প্রাণ জোগায়।

সোলার নৌবহরের উত্থান

২০১৭ সালে প্রথম সূর্যশক্তিচালিত নৌকা নদীতে নামার পর থেকে আচার জনগোষ্ঠী এখন ১০টি বৈদ্যুতিক ক্যানু পরিচালনা করে—ইকুয়েডর, পেরু, ব্রাজিল এমনকি সলোমন द्वীপপুঞ্জেও। একেকটিতে সর্বোচ্চ ২০ জন যাত্রী যেতে পারেন। শিশুরা স্কুলে, রোগীরা ক্লিনিকে, শোকসভায় শবযাত্রাও চলছে এই নৌকায়। কুসুতকাওয়ের নিনকি রোলান্ড আন্টিক জানালেন, ‘‘মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা স্ত্রীর রক্তক্ষরণ থামাতে দ্রুত সেবাকেন্দ্রে পৌঁছতে পেরেছিলাম, সে আজ বেঁচে আছে এই নৌকার বদৌলতে।’’

ডিজেল বনাম সৌরদুধর্ষতার মূল্য

পাস্তাসা প্রদেশের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চলে সড়ক না থাকায় নৌযাত্রাই ভরসা। ১৯৯০-এর দশক থেকে ডিজেলচালিত ‘পেকে পেকে’ নৌকা প্রতিদিন ২০০-র বেশি ভ্রমণ করে, তবে শব্দদূষণ, ধোঁয়া ও জ্বালানি ছড়িয়ে মাছ মেরে ফেলে। জ্বালানি প্রতি গ্যালন ১০ ডলার—শহরের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি—যাত্রীভাড়াও ৫-১০ ডলার, যা অনেক আচার পরিবারের সামর্থ্যের বাইরে।

সূর্যের গল্পে ইলেকট্রিক তাপিয়াতপিয়া

পুরনো উপকথায় ‘তাপিয়াতপিয়া’ নামের বৈদ্যুতিক কাঁকড়া জলের নিচে যাত্রী বয়ে নিত। ২০০৯-এ ইংরেজি শেখাতে আসা আমেরিকান অলিভার উটনে এ গল্প শুনে সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি শিখে ফিরে এলেন—উদ্দেশ্য, উপকথার আধুনিক সংস্করণ গড়া। আচারদের সঙ্গে গড়লেন ‘কারা সোলার’ এনজিও; ২০১৭-র সেই প্রথম নৌযাত্রা ১,৮০০ কিমি পাড়ি দেয়। আগামী পাঁচ বছরে ২৫০টি সৌর ক্যানু নামানোর লক্ষ্য।

প্রযুক্তিগত ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ

জার্মানি-মার্কিন ইঞ্জিন শুকনো মৌসুমের অগভীর ধারা, ভাঙা গাছপালায় বারবার আটকে যায়। ডিজেল নৌকা এখনো দ্রুততর—দৈনন্দিন কাজেই তা বড় সুবিধা। তাই আচারদের অংশবিশেষ দ্বিধায়। এ সমস্যা মেটাতে উটনে গড়েছেন ‘মতোরেস আমাজোনাস’—স্থানীয় বাস্তবতার উপযোগী ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে।

সড়ক নয়সুরক্ষিত নদীপথ

প্রাদেশিক প্রধান আন্দ্রেস গ্রান্দা বললেন, সড়ক এলে মাদক-মদ ঢুকে বহু আদিবাসী সমাজ ভেঙেছে; তাই বিকল্প পথ জরুরি। কারা সোলারের সভাপতি নান্তু কানেলোসের কণ্ঠে দৃঢ়তা, ‘‘হাইওয়ে নয়, নদীপথই আমাদের জীবন।’’

 

আগামীর স্বপ্ন

আচাররা চান কপাওয়ারি নদীকে পুরোপুরি সৌরচালিত জলপথে রূপ দিতে—প্রাচীন ঐতিহ্য আর আধুনিক টেকনোলজির মিশেলে নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে। প্রিফেক্ট গ্রান্দার কথায়, ‘‘এ নৌকা আমাদের জমি-জঙ্গল রক্ষা করতে সহায়।’’