০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

ইরান হামলায় ট্রাম্পের ‘সম্পূর্ণ সাফল্য’ দাবির প্রমাণ অনুপস্থিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। তবে ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা মূল্যায়ন এবং বিশেষজ্ঞ মতামত ইঙ্গিত দেয়, ইরানের কর্মসূচি আদতে ‘অপরাজেয়’ই থেকে যেতে পারে। যাচাইযোগ্য তথ্যের ঘাটতিতে ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক সংবাদ সম্মেলন, বিবৃতি ও সামাজিক মাধ্যম পোস্টে সাফল্যের কথা বললেও তা এখনও প্রমাণিত নয়।

দ্রুত মূল্যায়নের ফাঁদ

ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডিআইএ) ফাঁস হওয়া খসড়া প্রতিবেদন জানায়, হামলাটি ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে বড়জোর কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে। পেন্টাগনের ব্রিফিংয়ে প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ স্বীকার করেন, হামলার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ ‘অত্যন্ত কম আস্থার’ কাজ। তবু তিনি একই মঞ্চে ঘোষণা করেন, “ট্রাম্পের দৃঢ় পদক্ষেপ ইরানের পরমাণু সামর্থ্য ধ্বংস করেছে এবং যুদ্ধের পথ থামিয়েছে।” বিশেষজ্ঞরা স্মরণ করিয়ে দেন, স্যাটেলাইট ছবি, ফুটেজ ও মানব গোয়েন্দা ছাড়া প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি জানতে সপ্তাহ–মাস লেগে যায়, বিশেষ করে যখন তেহরান আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশ সাময়িক স্থগিত করেছে।

ইউরেনিয়ামের ভবিষ্যৎ

হামলার আগের দিনগুলোতে ফোরদো ও ইসফাহান স্থাপনায় সারি সারি ট্রাকের চলাচল ধরা পড়ে, যা থেকে ধারণা তৈরি হয় যে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বা অতিরিক্ত সেন্ট্রিফিউজ আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হেগসেথ অবশ্য এমন কোনো প্রমাণ দেখেননি বলে জানান। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিটও বলেন, “ইরান গোপনে ইউরেনিয়াম সরিয়েছে—এমন ইঙ্গিত নেই।” তবু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, উভয় দলের সিনেটররা গোপন ব্রিফিং শেষে জানান, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পুরোটাই নিশ্চিহ্ন হয়নি। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম “এখনও সেখানেই থাকতে পারে।”

গোপন পরিকাঠামোর শঙ্কা

ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “সব পরমাণু স্থাপনা ও সামর্থ্য ধ্বংস করেছি।” অথচ ন্যাটো সম্মেলনে তিনি আবার জানান, নতুন চুক্তির দরকার নেই—মানে ইরান ইতিমধ্যেই ঝুঁকি ত্যাগ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানের বাইরে গোপন স্থাপনাগুলোর বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তি ইরানকে পুনরায় বোমা তৈরির পথে ফেরাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা অধিদপ্তর ও সিআইএর পৃথক মূল্যায়নগুলোও বলছে, স্থাপনাগুলোর ‘মূল কাঠামো’ ধ্বংস হলেও সামগ্রিক কর্মসূচি কেবল ‘গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহামের প্রশ্ন, “ইরানের পরমাণু আকাঙ্ক্ষা কি সত্যিই বিলুপ্ত হয়েছে?”

পুরো চিত্র স্পষ্ট হতে কত দিন

ট্রাম্প প্রশাসন আংশিকভাবে সাফল্যের সংজ্ঞা বদলাচ্ছে; কেউ কেউ বলছেন, ইরান–ইসরায়েল সংঘাতের সাময়িক যুদ্ধবিরতিই বড় বিজয়। হেগসেথের ভাষ্য, “সঠিক সময়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে ট্রাম্প যুদ্ধ থামানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।” একই সঙ্গে ট্রাম্প আবারও ইরানের সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদি ইরানের কর্মসূচি সত্যিই ‘চিরতরে শেষ’ হয়ে থাকে, গোপন সাইট, অবশিষ্ট ইউরেনিয়াম বা ক্ষতিগ্রস্ত সুবিধাগুলো নিয়ে দরকষাকষির প্রয়োজন পড়ে না। আর যদি এসব বক্তব্য রাজনৈতিক ঝুঁকি কমাতে দেওয়া হয়ে থাকে, ভবিষ্যৎ চুক্তিতে কর্মসূচির স্থায়ী সমাপ্তি নিশ্চিত করার চাপ বাড়বে।

পুরো পরিস্থিতি স্পষ্ট হতে এখনও কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস লাগতে পারে। এ সময়টায় ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ তত্ত্ব প্রমাণ ও অপ্রমাণের দোলাচলে থাকবে, আর যুক্তরাষ্ট্র–ইরান কূটনীতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।

ইরান হামলায় ট্রাম্পের ‘সম্পূর্ণ সাফল্য’ দাবির প্রমাণ অনুপস্থিত

১২:৫১:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। তবে ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা মূল্যায়ন এবং বিশেষজ্ঞ মতামত ইঙ্গিত দেয়, ইরানের কর্মসূচি আদতে ‘অপরাজেয়’ই থেকে যেতে পারে। যাচাইযোগ্য তথ্যের ঘাটতিতে ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক সংবাদ সম্মেলন, বিবৃতি ও সামাজিক মাধ্যম পোস্টে সাফল্যের কথা বললেও তা এখনও প্রমাণিত নয়।

দ্রুত মূল্যায়নের ফাঁদ

ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডিআইএ) ফাঁস হওয়া খসড়া প্রতিবেদন জানায়, হামলাটি ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে বড়জোর কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে। পেন্টাগনের ব্রিফিংয়ে প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ স্বীকার করেন, হামলার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ ‘অত্যন্ত কম আস্থার’ কাজ। তবু তিনি একই মঞ্চে ঘোষণা করেন, “ট্রাম্পের দৃঢ় পদক্ষেপ ইরানের পরমাণু সামর্থ্য ধ্বংস করেছে এবং যুদ্ধের পথ থামিয়েছে।” বিশেষজ্ঞরা স্মরণ করিয়ে দেন, স্যাটেলাইট ছবি, ফুটেজ ও মানব গোয়েন্দা ছাড়া প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি জানতে সপ্তাহ–মাস লেগে যায়, বিশেষ করে যখন তেহরান আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশ সাময়িক স্থগিত করেছে।

ইউরেনিয়ামের ভবিষ্যৎ

হামলার আগের দিনগুলোতে ফোরদো ও ইসফাহান স্থাপনায় সারি সারি ট্রাকের চলাচল ধরা পড়ে, যা থেকে ধারণা তৈরি হয় যে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বা অতিরিক্ত সেন্ট্রিফিউজ আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হেগসেথ অবশ্য এমন কোনো প্রমাণ দেখেননি বলে জানান। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিটও বলেন, “ইরান গোপনে ইউরেনিয়াম সরিয়েছে—এমন ইঙ্গিত নেই।” তবু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, উভয় দলের সিনেটররা গোপন ব্রিফিং শেষে জানান, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পুরোটাই নিশ্চিহ্ন হয়নি। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম “এখনও সেখানেই থাকতে পারে।”

গোপন পরিকাঠামোর শঙ্কা

ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “সব পরমাণু স্থাপনা ও সামর্থ্য ধ্বংস করেছি।” অথচ ন্যাটো সম্মেলনে তিনি আবার জানান, নতুন চুক্তির দরকার নেই—মানে ইরান ইতিমধ্যেই ঝুঁকি ত্যাগ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানের বাইরে গোপন স্থাপনাগুলোর বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তি ইরানকে পুনরায় বোমা তৈরির পথে ফেরাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা অধিদপ্তর ও সিআইএর পৃথক মূল্যায়নগুলোও বলছে, স্থাপনাগুলোর ‘মূল কাঠামো’ ধ্বংস হলেও সামগ্রিক কর্মসূচি কেবল ‘গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহামের প্রশ্ন, “ইরানের পরমাণু আকাঙ্ক্ষা কি সত্যিই বিলুপ্ত হয়েছে?”

পুরো চিত্র স্পষ্ট হতে কত দিন

ট্রাম্প প্রশাসন আংশিকভাবে সাফল্যের সংজ্ঞা বদলাচ্ছে; কেউ কেউ বলছেন, ইরান–ইসরায়েল সংঘাতের সাময়িক যুদ্ধবিরতিই বড় বিজয়। হেগসেথের ভাষ্য, “সঠিক সময়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে ট্রাম্প যুদ্ধ থামানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।” একই সঙ্গে ট্রাম্প আবারও ইরানের সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদি ইরানের কর্মসূচি সত্যিই ‘চিরতরে শেষ’ হয়ে থাকে, গোপন সাইট, অবশিষ্ট ইউরেনিয়াম বা ক্ষতিগ্রস্ত সুবিধাগুলো নিয়ে দরকষাকষির প্রয়োজন পড়ে না। আর যদি এসব বক্তব্য রাজনৈতিক ঝুঁকি কমাতে দেওয়া হয়ে থাকে, ভবিষ্যৎ চুক্তিতে কর্মসূচির স্থায়ী সমাপ্তি নিশ্চিত করার চাপ বাড়বে।

পুরো পরিস্থিতি স্পষ্ট হতে এখনও কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস লাগতে পারে। এ সময়টায় ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ তত্ত্ব প্রমাণ ও অপ্রমাণের দোলাচলে থাকবে, আর যুক্তরাষ্ট্র–ইরান কূটনীতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।