১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

সংযত নিয়োগ নীতি: ধীরে এগোচ্ছে আমিরাতের কোম্পানিগুলো

২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নিয়োগ বাজারে একটি স্পষ্ট প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—নতুন কর্মী নিয়োগে বাড়তি সতর্কতা। এর প্রধান কারণ হলো কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন করে আরোপিত করপোরেট ট্যাক্সের চাপ এবং খরচ কমিয়ে আনার প্রয়োজন।

নিয়োগে সতর্কতা, বিশেষ করে খরচ নিয়ন্ত্রণে

ইউএই-এর মতো সৌদি আরবেও একই ধরনের সতর্কতা দেখা যাচ্ছে। তবে প্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মীর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি অর্থ ব্যয় করতেও প্রস্তুত। প্রয়োজনে প্রণোদনাও বাড়ানো হচ্ছে।

২০২৫ সালের প্রথমার্ধের নিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে টাস্কান কনসালটেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হাসান বাবাত বলেন, “মার্কিন আমদানি শুল্ক নিয়ে এপ্রিলে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তখন কিছু বড় ব্যবসা গোষ্ঠীতে নিয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তবে সামগ্রিকভাবে দক্ষ কর্মীর চাহিদায় বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।”

তিনি জানান, ইউএই ও সৌদি আরবে ভারী উৎপাদন, আতিথেয়তা এবং বিনোদন খাতে বেতন বাড়ার হার খুবই কম—২০২৫ সালে শূন্য থেকে তিন শতাংশের মধ্যে সীমিত। কারণ, এই খাতে কর্মীর যোগান যথেষ্ট এবং বাজার অনেকটাই পূর্ণ।

চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা বেশি, পদের সংখ্যা সীমিত

মানপাওয়ার গ্রুপের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউএই-তে পরিবহন ও লজিস্টিক খাতে কিছু নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বেশির ভাগ খাতে দেখা যাচ্ছে, সীমিত সংখ্যক পদের জন্য বিপুল সংখ্যক প্রার্থী প্রতিযোগিতা করছেন।

একজন এইচআর ম্যানেজার বলেন, “এ ধরনের পরিস্থিতিতে বেতন বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া, অনেক কোম্পানি বুঝে গেছে যে শিগগিরই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অটোমেশন আরও চাকরি হ্রাস করবে। এটি ভবিষ্যতের নয়—এখনকার বাস্তবতা।”

করের বোঝা বাড়ায় খরচের হিসাব-নিকাশ

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যেসব কোম্পানি জানুয়ারি–ডিসেম্বর আর্থিক বছরে চলে, তাদের প্রথম করপোরেট ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলোর হাতে কম অর্থ থাকবে, তাই তারা নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আরও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করছে।

কয়েকজন অর্থ পরিচালক ও নিয়োগকর্তা বলছেন, ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে কোম্পানিগুলোকে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে করসহ সব খরচ নতুন করে হিসাব করতে হবে এবং ২০২৬ সালের জন্য নিয়োগ পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে।

প্রযুক্তি খাতে ট্যালেন্ট যুদ্ধে প্রিমিয়াম অফার

তবে এআই এবং নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি নিয়ে যখন প্রশ্ন আসে, তখন দক্ষ কর্মীর জন্য ইউএই এবং সৌদি আরবের কোম্পানিগুলো খরচে কার্পণ্য করছে না। হাসান বাবাত বলেন, “এটি একরকম ট্যালেন্টের জন্য যুদ্ধ তৈরি করছে।”

এটি শুধু প্রযুক্তি খাতেই নয়—অবকাঠামো, পর্যটন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

টাস্কানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “২০২৪ সালে ইউএই এবং সৌদি আরবে সাইন-অন বোনাস ও রিটেনশন বোনাসের ব্যবহার বেড়েছে, বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ের নির্বাহী ও প্রযুক্তি ট্যালেন্টদের ক্ষেত্রে। কোম্পানিগুলো প্রার্থীর আগের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা বোনাস পর্যন্ত কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে—যা আগে এ অঞ্চলে খুব কম দেখা যেত।”

“উদাহরণ হিসেবে, ইউএই-এর কিছু বড় পারিবারিক ব্যবসা হাই-পোটেনশিয়াল ম্যানেজারদের ধরে রাখতে ‘ফ্যান্টম স্টক’ বা লাভ শেয়ারিং স্কিম চালু করেছে।”

“সৌদি আরবে, রিয়াদের দ্রুত বর্ধনশীল আর্থিক জেলায় কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রিমিয়াম প্রবাসী প্যাকেজ অফার করছে—যার মধ্যে থাকে উচ্চ বেস বেতন, বাড়ি, স্কুল এবং ভ্রমণের খরচ।”

বেতনের পার্থক্য ও বাড়তি চাহিদা

২০২৪ সালে একজন এআই বা মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ারের গড় বেতন ছিল মাসিক ২৮,০০০–৪৩,০০০ দিরহাম। ২০২৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৩,০০০–৪৮,০০০ দিরহাম। সৌদি আরবে এই পদের বেতন এখন ৩৫,০০০–৫০,০০০ দিরহাম পর্যন্ত।

একজন সাইবার সিকিউরিটি আর্কিটেক্টের গড় বেতন ২০২৪ সালের ২৯,০০০–৪৫,০০০ দিরহাম থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪,০০০–৫০,০০০ দিরহাম।

এক প্রযুক্তি পরামর্শক বলেন, “আমাদের কাছে আসা সব তথ্য অনুযায়ী, ইউএই এবং সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তি বিনিয়োগ কমাচ্ছে না। বরং সরকার-সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এআই-কেন্দ্রিক প্রকল্পে বিশেষ জোর দিচ্ছে।”

“যদি এই প্রকল্পগুলো থেমে যায়, তখন প্রযুক্তি ও এআই খাতে চাকরির সংকট হতে পারে। তবে আপাতত তেমন কোনো ইঙ্গিত নেই।”

সংযত নিয়োগ নীতি: ধীরে এগোচ্ছে আমিরাতের কোম্পানিগুলো

০৫:৩৫:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) নিয়োগ বাজারে একটি স্পষ্ট প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—নতুন কর্মী নিয়োগে বাড়তি সতর্কতা। এর প্রধান কারণ হলো কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন করে আরোপিত করপোরেট ট্যাক্সের চাপ এবং খরচ কমিয়ে আনার প্রয়োজন।

নিয়োগে সতর্কতা, বিশেষ করে খরচ নিয়ন্ত্রণে

ইউএই-এর মতো সৌদি আরবেও একই ধরনের সতর্কতা দেখা যাচ্ছে। তবে প্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মীর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি অর্থ ব্যয় করতেও প্রস্তুত। প্রয়োজনে প্রণোদনাও বাড়ানো হচ্ছে।

২০২৫ সালের প্রথমার্ধের নিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে টাস্কান কনসালটেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হাসান বাবাত বলেন, “মার্কিন আমদানি শুল্ক নিয়ে এপ্রিলে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তখন কিছু বড় ব্যবসা গোষ্ঠীতে নিয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তবে সামগ্রিকভাবে দক্ষ কর্মীর চাহিদায় বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।”

তিনি জানান, ইউএই ও সৌদি আরবে ভারী উৎপাদন, আতিথেয়তা এবং বিনোদন খাতে বেতন বাড়ার হার খুবই কম—২০২৫ সালে শূন্য থেকে তিন শতাংশের মধ্যে সীমিত। কারণ, এই খাতে কর্মীর যোগান যথেষ্ট এবং বাজার অনেকটাই পূর্ণ।

চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা বেশি, পদের সংখ্যা সীমিত

মানপাওয়ার গ্রুপের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউএই-তে পরিবহন ও লজিস্টিক খাতে কিছু নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বেশির ভাগ খাতে দেখা যাচ্ছে, সীমিত সংখ্যক পদের জন্য বিপুল সংখ্যক প্রার্থী প্রতিযোগিতা করছেন।

একজন এইচআর ম্যানেজার বলেন, “এ ধরনের পরিস্থিতিতে বেতন বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া, অনেক কোম্পানি বুঝে গেছে যে শিগগিরই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অটোমেশন আরও চাকরি হ্রাস করবে। এটি ভবিষ্যতের নয়—এখনকার বাস্তবতা।”

করের বোঝা বাড়ায় খরচের হিসাব-নিকাশ

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যেসব কোম্পানি জানুয়ারি–ডিসেম্বর আর্থিক বছরে চলে, তাদের প্রথম করপোরেট ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলোর হাতে কম অর্থ থাকবে, তাই তারা নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আরও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করছে।

কয়েকজন অর্থ পরিচালক ও নিয়োগকর্তা বলছেন, ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে কোম্পানিগুলোকে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে করসহ সব খরচ নতুন করে হিসাব করতে হবে এবং ২০২৬ সালের জন্য নিয়োগ পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে।

প্রযুক্তি খাতে ট্যালেন্ট যুদ্ধে প্রিমিয়াম অফার

তবে এআই এবং নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি নিয়ে যখন প্রশ্ন আসে, তখন দক্ষ কর্মীর জন্য ইউএই এবং সৌদি আরবের কোম্পানিগুলো খরচে কার্পণ্য করছে না। হাসান বাবাত বলেন, “এটি একরকম ট্যালেন্টের জন্য যুদ্ধ তৈরি করছে।”

এটি শুধু প্রযুক্তি খাতেই নয়—অবকাঠামো, পর্যটন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

টাস্কানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “২০২৪ সালে ইউএই এবং সৌদি আরবে সাইন-অন বোনাস ও রিটেনশন বোনাসের ব্যবহার বেড়েছে, বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ের নির্বাহী ও প্রযুক্তি ট্যালেন্টদের ক্ষেত্রে। কোম্পানিগুলো প্রার্থীর আগের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা বোনাস পর্যন্ত কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে—যা আগে এ অঞ্চলে খুব কম দেখা যেত।”

“উদাহরণ হিসেবে, ইউএই-এর কিছু বড় পারিবারিক ব্যবসা হাই-পোটেনশিয়াল ম্যানেজারদের ধরে রাখতে ‘ফ্যান্টম স্টক’ বা লাভ শেয়ারিং স্কিম চালু করেছে।”

“সৌদি আরবে, রিয়াদের দ্রুত বর্ধনশীল আর্থিক জেলায় কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রিমিয়াম প্রবাসী প্যাকেজ অফার করছে—যার মধ্যে থাকে উচ্চ বেস বেতন, বাড়ি, স্কুল এবং ভ্রমণের খরচ।”

বেতনের পার্থক্য ও বাড়তি চাহিদা

২০২৪ সালে একজন এআই বা মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ারের গড় বেতন ছিল মাসিক ২৮,০০০–৪৩,০০০ দিরহাম। ২০২৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৩,০০০–৪৮,০০০ দিরহাম। সৌদি আরবে এই পদের বেতন এখন ৩৫,০০০–৫০,০০০ দিরহাম পর্যন্ত।

একজন সাইবার সিকিউরিটি আর্কিটেক্টের গড় বেতন ২০২৪ সালের ২৯,০০০–৪৫,০০০ দিরহাম থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪,০০০–৫০,০০০ দিরহাম।

এক প্রযুক্তি পরামর্শক বলেন, “আমাদের কাছে আসা সব তথ্য অনুযায়ী, ইউএই এবং সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তি বিনিয়োগ কমাচ্ছে না। বরং সরকার-সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো এআই-কেন্দ্রিক প্রকল্পে বিশেষ জোর দিচ্ছে।”

“যদি এই প্রকল্পগুলো থেমে যায়, তখন প্রযুক্তি ও এআই খাতে চাকরির সংকট হতে পারে। তবে আপাতত তেমন কোনো ইঙ্গিত নেই।”