দুর্ঘটনার চিত্র
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে ৩৭৩টি কর্মস্থল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪২২ জন শ্রমিক। বেসরকারি সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) জাতীয় ও স্থানীয় ২৬টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য দিয়েছে।
গত বছরের একই সময়ে ৪২০টি দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন, অর্থাৎ চলতি বছরও কর্মস্থল দুর্ঘটনা বন্ধ হয়নি।
খাতভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান
এসআরএসের জরিপ বলছে, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে পরিবহন খাতে—মোট ২০৭ জন শ্রমিক।
এরপর রয়েছে:
· সেবাখাত: ৬৫ জন
· কৃষি খাত: ৫৯ জন
· নির্মাণ খাত: ৫৯ জন
· কল-কারখানা ও উৎপাদনশীল খাত: ৩২ জন
মৃত্যুর কারণসমূহ
দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে:
· সড়ক দুর্ঘটনা: ২৬৭ জন
· বিদ্যুৎস্পৃষ্ট: ৪০ জন
· বজ্রপাত: ৫৬ জন
· উপর থেকে পড়ে: ২৩ জন
· ভারী বস্তুর আঘাত: ৯ জন
· বিষাক্ত গ্যাস: ১ জন
· পানিতে ডুবে: ৫ জন
· আগুন ও বিস্ফোরণ: ১২ জন
· মাটি বা দেয়াল ধসে: ৮ জন
· অন্যান্য কারণ: ১ জন
দুর্ঘটনার পেছনের কারণ
এসআরএস বলছে, শ্রমিক মৃত্যুর পেছনে রয়েছে একাধিক দায় এবং সমস্যা:
· দুর্বল অবকাঠামো
· ঝুঁকিপূর্ণ যন্ত্রপাতি
· কারিগরি ত্রুটি
· অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা
· অদক্ষ চালক
· শ্রমিকদের ঝুঁকিসচেতনতার অভাব
· নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের ঘাটতি
· সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE) না থাকা
· মালিকদের শ্রম আইন ও নিরাপত্তা নীতিমালার প্রতি উদাসীনতা
এছাড়া, অতিরিক্ত কাজের চাপ, বিশ্রামের অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং দুর্ঘটনার পর জরুরি চিকিৎসার অভাবও শ্রমিক মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ
এসআরএসের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, প্রযুক্তি ও শিল্পের ধরন বদলালেও দুর্ঘটনা বন্ধ হয়নি, বরং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে, সুপারিশও আছে। কিন্তু সংস্কারের সুফল শ্রমিকদের কাছে পৌঁছাবে না, যদি কাজের পরিবেশ নিরাপদ না করা যায়।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনা কমাতে সেক্টরভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় এবং সরকারি পরিদর্শন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
তাঁর কথায়, দেশে নিরাপত্তা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাইকে দায়িত্ববান হতে হবে। প্রতিটি সেক্টরের জন্য আলাদা নিরাপত্তা নির্দেশনা থাকা উচিত, যাতে মালিকরা নিজেদের নীতি তৈরি করতে পারেন।
ত্রিপক্ষীয় দায়িত্ব
এসআরএস মনে করে, নিরাপদ কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব একা কারও নয়। এটি মালিক, সরকার এবং শ্রমিক—তিন পক্ষের সমন্বিত দায়িত্ব।
· মালিককে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহসহ।
· সরকারের দায়িত্ব হলো নিরাপত্তা আইন তৈরি করা, তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
· শ্রমিকদের দায়িত্ব মালিকের দেওয়া নির্দেশনা ও নিরাপত্তাবিধি মেনে চলা।
এই তিন পক্ষের সমন্বয় ছাড়া দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়।