১১:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

চাহিদার ইঙ্গিতে তেলের দাম বৃদ্ধি, ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়

তেলের দাম সামান্য বৃদ্ধি

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সামান্য বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা চীনের চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত এবং সৌদি আরব ও রাশিয়ার সরবরাহের তথ্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। তবে তারা খুব সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন ৬ জুলাইয়ের ওপেক প্লাস বৈঠকের আগে, যেখানে আগস্টের উৎপাদন নীতি ঠিক হবে।

ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩৭ সেন্ট বা ০.৬ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৭.১১ ডলারে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ৩৪ সেন্ট বা প্রায় ০.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫.৪৫ ডলারে।

চীনের উৎপাদন বৃদ্ধি ও চাহিদার আভাস

যুক্তরাষ্ট্রের তেল ব্রোকারেজ ফার্ম লিকুইডিটি এনার্জির ঝুঁকি বিশ্লেষক র‍্যান্ডাল রোথেনবার্গ জানিয়েছেন, চীনে বেসরকারি খাতের একটি জরিপে দেখা গেছে, জুন মাসে কারখানার উৎপাদন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে চীনের তেলের চাহিদা বাড়বে বলে বাজারে আশাবাদ তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবের আগস্ট মাসের জন্য এশীয় ক্রেতাদের কাছে তেলের দাম গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে নিয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে রাশিয়ার ইএসপিও ব্লেন্ড ক্রুডের দামও ভালো অবস্থায় রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী দৃঢ় চাহিদার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ওপেক প্লাসের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা

তেলের দামের এই বৃদ্ধিকে সীমিত রেখেছে ওপেক প্লাসের আসন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে বাজারের শঙ্কা। মে, জুন এবং জুলাই মাসে যে বড় উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে, আগস্টেও ঠিক ততটাই উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে ওপেক প্লাসের চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।

৬ জুলাইয়ের বৈঠকে তারা আগস্টে দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

স্টোনএক্সের এনার্জি বিশ্লেষক অ্যালেক্স হোডেস বলেছেন, ‘‘সব নজর এখন ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তের দিকে। তারা মার্কিন শেল প্রযোজকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাজার দখলের লক্ষ্যেই উৎপাদন বাড়াতে চায়।’’

মার্কিন শেল প্রযোজকদের রেকর্ড উৎপাদন

মার্কিন শেল তেল উৎপাদকরা এপ্রিল মাসে রেকর্ড পরিমাণ তেল উত্তোলন করেছে। ওপেক প্লাস গ্রুপের লক্ষ্য তাদের কাছ থেকে বাজারের অংশ ফের দখল করা।

এছাড়া গ্রুপটি তাদের সদস্যদের মধ্যে যেসব দেশ বেশি উৎপাদন করছে, তাদের শাস্তি দিতেও পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ওপেক প্লাসের সদস্য কাজাখস্তান গত মাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে তেল উৎপাদন করেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে একটি সূত্র।

সৌদি আরবের রপ্তানি বৃদ্ধি

ওপেক প্লাসের প্রধান নেতা সৌদি আরব জুন মাসে গত এক বছরে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে তেল রপ্তানি করেছে। ডেটা ফার্ম কেপলারের তথ্য অনুযায়ী, গ্রীষ্মকালে দেশীয় চাহিদা বেশি থাকার সময়েও রপ্তানি চুক্তির শর্তের চেয়ে বেশি তেল বিদেশে পাঠানো হয়েছে।

হোডেস বলেন, ‘‘এই রপ্তানি গ্রীষ্মকালীন অভ্যন্তরীণ চাহিদার শীর্ষ সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত বিদেশে যাচ্ছে।’’

যুক্তরাষ্ট্রের মজুত বৃদ্ধি

আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত তেলের মজুত ৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল বেড়েছে। তবে এ সংক্রান্ত সরকারি তথ্য বুধবার প্রকাশিত হবে।

বাণিজ্য আলোচনা ও শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা

এদিকে বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৯ জুলাইয়ের শুল্ক সময়সীমার আগে বাণিজ্য আলোচনার অগ্রগতি নিয়েও নজর রাখছেন। ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি সময়সীমা বাড়ানোর কথা ভাবছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি খুব কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। ট্রাম্পও বলেছেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তি সম্ভব, তবে জাপানের সঙ্গে হওয়ার বিষয়ে তিনি সন্দিহান।

বেসেন্ট সতর্ক করেছেন, ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা শেষ হলে শুল্ক হার ১০ শতাংশ থেকে এপ্রিলের ঘোষণার মূল হারে ফিরে যেতে পারে, যা দেশগুলিকে নতুন করে অনেক বেশি শুল্কের মুখে ফেলবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে তারা শুল্ক থেকে তাৎক্ষণিক ছাড় চাইছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘জীবন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ইচ্ছা এবং শক্তির বিষয় নয়’

চাহিদার ইঙ্গিতে তেলের দাম বৃদ্ধি, ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়

১২:৩৬:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫

তেলের দাম সামান্য বৃদ্ধি

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সামান্য বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা চীনের চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত এবং সৌদি আরব ও রাশিয়ার সরবরাহের তথ্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। তবে তারা খুব সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন ৬ জুলাইয়ের ওপেক প্লাস বৈঠকের আগে, যেখানে আগস্টের উৎপাদন নীতি ঠিক হবে।

ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩৭ সেন্ট বা ০.৬ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৭.১১ ডলারে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ৩৪ সেন্ট বা প্রায় ০.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫.৪৫ ডলারে।

চীনের উৎপাদন বৃদ্ধি ও চাহিদার আভাস

যুক্তরাষ্ট্রের তেল ব্রোকারেজ ফার্ম লিকুইডিটি এনার্জির ঝুঁকি বিশ্লেষক র‍্যান্ডাল রোথেনবার্গ জানিয়েছেন, চীনে বেসরকারি খাতের একটি জরিপে দেখা গেছে, জুন মাসে কারখানার উৎপাদন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে চীনের তেলের চাহিদা বাড়বে বলে বাজারে আশাবাদ তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবের আগস্ট মাসের জন্য এশীয় ক্রেতাদের কাছে তেলের দাম গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে নিয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে রাশিয়ার ইএসপিও ব্লেন্ড ক্রুডের দামও ভালো অবস্থায় রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী দৃঢ় চাহিদার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ওপেক প্লাসের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা

তেলের দামের এই বৃদ্ধিকে সীমিত রেখেছে ওপেক প্লাসের আসন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে বাজারের শঙ্কা। মে, জুন এবং জুলাই মাসে যে বড় উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে, আগস্টেও ঠিক ততটাই উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে ওপেক প্লাসের চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।

৬ জুলাইয়ের বৈঠকে তারা আগস্টে দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

স্টোনএক্সের এনার্জি বিশ্লেষক অ্যালেক্স হোডেস বলেছেন, ‘‘সব নজর এখন ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তের দিকে। তারা মার্কিন শেল প্রযোজকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাজার দখলের লক্ষ্যেই উৎপাদন বাড়াতে চায়।’’

মার্কিন শেল প্রযোজকদের রেকর্ড উৎপাদন

মার্কিন শেল তেল উৎপাদকরা এপ্রিল মাসে রেকর্ড পরিমাণ তেল উত্তোলন করেছে। ওপেক প্লাস গ্রুপের লক্ষ্য তাদের কাছ থেকে বাজারের অংশ ফের দখল করা।

এছাড়া গ্রুপটি তাদের সদস্যদের মধ্যে যেসব দেশ বেশি উৎপাদন করছে, তাদের শাস্তি দিতেও পদক্ষেপ নিচ্ছে।

ওপেক প্লাসের সদস্য কাজাখস্তান গত মাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে তেল উৎপাদন করেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে একটি সূত্র।

সৌদি আরবের রপ্তানি বৃদ্ধি

ওপেক প্লাসের প্রধান নেতা সৌদি আরব জুন মাসে গত এক বছরে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে তেল রপ্তানি করেছে। ডেটা ফার্ম কেপলারের তথ্য অনুযায়ী, গ্রীষ্মকালে দেশীয় চাহিদা বেশি থাকার সময়েও রপ্তানি চুক্তির শর্তের চেয়ে বেশি তেল বিদেশে পাঠানো হয়েছে।

হোডেস বলেন, ‘‘এই রপ্তানি গ্রীষ্মকালীন অভ্যন্তরীণ চাহিদার শীর্ষ সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত বিদেশে যাচ্ছে।’’

যুক্তরাষ্ট্রের মজুত বৃদ্ধি

আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত তেলের মজুত ৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল বেড়েছে। তবে এ সংক্রান্ত সরকারি তথ্য বুধবার প্রকাশিত হবে।

বাণিজ্য আলোচনা ও শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা

এদিকে বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৯ জুলাইয়ের শুল্ক সময়সীমার আগে বাণিজ্য আলোচনার অগ্রগতি নিয়েও নজর রাখছেন। ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি সময়সীমা বাড়ানোর কথা ভাবছেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি খুব কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। ট্রাম্পও বলেছেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তি সম্ভব, তবে জাপানের সঙ্গে হওয়ার বিষয়ে তিনি সন্দিহান।

বেসেন্ট সতর্ক করেছেন, ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা শেষ হলে শুল্ক হার ১০ শতাংশ থেকে এপ্রিলের ঘোষণার মূল হারে ফিরে যেতে পারে, যা দেশগুলিকে নতুন করে অনেক বেশি শুল্কের মুখে ফেলবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে তারা শুল্ক থেকে তাৎক্ষণিক ছাড় চাইছে।