০২:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
শিক্ষার্থী-শিক্ষকের প্রেমের গল্প নিয়ে বিতর্কে বন্ধ হলো দক্ষিণ কোরিয়ার কে-ড্রামা পাকিস্তানে সীমাহীন শ্রমিক শোষণ আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাসাদে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক: ক্লিওপেট্রা ও সিজারের কথোপকথন হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪৯) বাংলাদেশে ইভ টিজিং- নারী মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতার সংকট এপি’র প্রতিবেদন: হাসিনা-বিরোধী বিদ্রোহের পরিণতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ মধুমতী নদী: দক্ষিনের যোগাযোগ পথ মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল ধ্বংস করা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর চিরসবুজ নায়িকা মৌসুমী: রূপালী পর্দার এক যুগের প্রতীক কাপ্তাই লেকের মাছের বৈচিত্র্য ও মাছ ধরার রীতি – পার্বত্য চট্টগ্রামের জলে জীবনের গল্প

হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত জাপানি নাগরিকদের—পরিচয় ও পরিবারের কথা

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস জঙ্গি হামলা হয়। ১২ ঘণ্টার এই জিম্মি সংকটে ২০ বিদেশি ও বাংলাদেশি নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করে হামলাকারীরা। নিহতদের মধ্যে ৭ জন ছিলেন জাপানি নাগরিক। এদের সবাই ছিলেন বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পে নিযুক্ত জাপানি বিশেষজ্ঞ বা প্রকৌশলী।

এ ঘটনা জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ইতিহাসে এক শোকাবহ অধ্যায় হয়ে রয়েছে। নিহতদের পরিচয়, কাজের ক্ষেত্র, তাদের পরিবার ও ব্যক্তিগত গল্প—সবকিছুই জাপান ও বাংলাদেশ দুই দেশের মানুষের হৃদয়ে গভীর শোক এবং শ্রদ্ধার স্থান করে নিয়েছে।

কতজন জাপানি নিহত হয়েছিলেন?
হোলি আর্টিজান হামলায় মোট ৭ জন জাপানি নাগরিক নিহত হন। তাঁরা সবাই জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (JICA)-এর অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পে কাজ করছিলেন। মূলত তাঁরা ছিলেন অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, জরিপ প্রকৌশলী এবং টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে তাদের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নিহত জাপানি নাগরিকদের নাম, বয়স ও পরিচয়
হামলায় নিহত জাপানি নাগরিকদের নাম ও পরিচয় সরকারি সূত্র এবং জাপানি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী:

১. কুনিও ওকাই (Kunio Okai)
বয়স: ৫৬
পরিচয়: টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট
কাজ: সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সিনিয়র বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জাইকার সঙ্গে কাজ করেছেন।
পরিবার: স্ত্রী এবং দুই সন্তান জাপানে থাকেন। খুবই দায়িত্বশীল এবং স্নেহশীল বাবা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

২. কোজি কোজিমা (Koji Kojima)
বয়স: ৪৮
পরিচয়: জরিপ প্রকৌশলী
কাজ: বাংলাদেশে সড়ক প্রকল্পের জরিপ কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশে এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় মিশন।
পরিবার: স্ত্রী এবং এক মেয়ে। পরিবার নিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশে আসার গল্প করতেন।

৩. ইয়ুকি তাতসুশি (Yuki Tatsushi)
বয়স: ২৬
পরিচয়: তরুণ প্রকৌশলী
কাজ: জাইকা প্রকল্পে সহকারী জরিপ কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশে যোগদান করেন মাত্র কয়েক মাস আগে। এটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদেশি মিশন।
পরিবার: পিতা-মাতা জাপানে, একমাত্র সন্তান ছিলেন। তাদের স্বপ্ন ছিল ছেলের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা হবে।

৪. ওগাসাওরা মিচিও (Michio Ogasawara)
বয়স: ৫৬
পরিচয়: অভিজ্ঞ সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার
কাজ: রোড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পে মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক বছরের অভিজ্ঞতা।
পরিবার: স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়ে। পরিবার তাঁকে ‘শান্ত স্বভাবের মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

৫. শিমোকুবো নোবুহিরো (Nobuhiro Shimokubo)
বয়স: ৪৪
পরিচয়: পরিবহন বিশেষজ্ঞ
কাজ: জাইকা ফিজিবিলিটি স্টাডি টিমের সদস্য। বাংলাদেশের রাস্তার মান উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছিলেন।
পরিবার: স্ত্রী এবং দুই সন্তান জাপানে। জাপানের গণমাধ্যমে স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছেন, “তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসতেন।”

৬. তামুরা কাতসুয়ো (Katsuo Tamura)
বয়স: ৫০
পরিচয়: প্রধান প্রকল্প ব্যবস্থাপক
কাজ: টিমের নেতৃত্বে ছিলেন। জাইকার সঙ্গে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ছিল। বাংলাদেশে বহুবার আসা-যাওয়া করেছিলেন।
পরিবার: স্ত্রী, এক কিশোর ছেলে এবং এক মেয়ে। পরিবার বলেছে, “তিনি বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বাড়ি ভাবতেন।”

৭. হোশি তাকিউকি (Takayuki Hoshi)
বয়স: ৪০
পরিচয়: প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ
কাজ: রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগে পারদর্শী ছিলেন। প্রকল্পের টেকনিক্যাল দিক সামলাতেন।
পরিবার: স্ত্রী এবং এক ছোট ছেলে। স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “সে সবসময় বলত, বাংলাদেশে মানুষ দারুণ অতিথিপরায়ণ।”

তাঁদের কাজ এবং অবদান
এ সাতজন বিশেষজ্ঞ কাজ করছিলেন বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (JICA)-এর অর্থায়নে এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে বিভিন্ন জরিপ, রোড ডিজাইন, ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হচ্ছিল।

তাঁদের কাজের উদ্দেশ্য ছিল:

  • বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন
  • দুর্ঘটনা হ্রাস
  • পণ্য পরিবহন সহজ করা
  • আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানো
  • জনগণের যাতায়াত স্বস্তিদায়ক করা

জাইকার কর্মকর্তারা বলেছেন, এদের প্রতিটি ছিলেন “জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের সেতুবন্ধ”। তাঁরা শুধু চাকরি নয়, দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি বিনিময় ঘটাতেন।

পরিবারের শোক ও প্রতিক্রিয়া
হামলার পরে নিহতদের পরিবার জাপানে সংবাদমাধ্যমে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন। কিছু পরিবারের কথা এখানে তুলে ধরা হলো:

ওগাসাওরা মিচিও-র স্ত্রী বলেছেন: “আমরা গর্বিত যে তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করছিলেন। কিন্তু তাঁর এভাবে চলে যাওয়া সহ্য করা যায় না।”

শিমোকুবো নোবুহিরো-র স্ত্রী বলেছেন: “তিনি সবসময় বলতেন, বাংলাদেশের মানুষ খুব আন্তরিক। তাঁর জন্যই বাংলাদেশে যাওয়াটা এত সহজ হয়েছিল।”

তামুরা কাতসুয়ো-র ছেলে বলেছেন: “আমার বাবা সবসময় বলতেন—বাংলাদেশের রাস্তা ভালো হলে মানুষের জীবন ভালো হবে। আমি ওনার স্বপ্ন শেষ করবো।”

বাংলাদেশে ও জাপানে শোক
এই হত্যাকাণ্ড জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ককে গভীর শোকের আবহে আচ্ছন্ন করে। বাংলাদেশ সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের জনগণ গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। জাপান সরকারও বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলে—“এই সন্ত্রাসীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”

জাপানি সরকার নিহতদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গার্ড অব অনার দিয়ে সমাধিস্থ করে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শোক পালন করা হয়। ঢাকায় জাপান দূতাবাস এবং জাইকা বাংলাদেশের অফিসে নিহতদের ছবি রাখা হয় স্মৃতিস্তম্ভের মতো করে।

বাংলাদেশে তাদের স্মৃতিরক্ষার উদ্যোগ
ঢাকায় জাইকা এবং বাংলাদেশ সরকার মিলিয়ে নিহতদের স্মৃতিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন:

  • গুলশান ২-এর কাছের এক মোড়ে “জাপানি মেমোরিয়াল কর্নার” স্থাপন
  • জাইকা অফিসে বিশেষ স্মারক ফলক
  • জাইকার নতুন প্রকল্পে নিহতদের নাম স্মরণীয় করে রাখা

হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত সাতজন জাপানি নাগরিক ছিলেন বাংলাদেশের বন্ধু। তাঁদের স্বপ্ন ছিল—বাংলাদেশের রাস্তা, সেতু, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বমানের হবে। তাঁদের মৃত্যু দুই দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। আরো কাঁদাবে যদি তাদের স্মরণ করা থেকে দূরে সরে যাওয়া হয়।

শিক্ষার্থী-শিক্ষকের প্রেমের গল্প নিয়ে বিতর্কে বন্ধ হলো দক্ষিণ কোরিয়ার কে-ড্রামা

হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত জাপানি নাগরিকদের—পরিচয় ও পরিবারের কথা

০৭:০০:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস জঙ্গি হামলা হয়। ১২ ঘণ্টার এই জিম্মি সংকটে ২০ বিদেশি ও বাংলাদেশি নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করে হামলাকারীরা। নিহতদের মধ্যে ৭ জন ছিলেন জাপানি নাগরিক। এদের সবাই ছিলেন বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পে নিযুক্ত জাপানি বিশেষজ্ঞ বা প্রকৌশলী।

এ ঘটনা জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ইতিহাসে এক শোকাবহ অধ্যায় হয়ে রয়েছে। নিহতদের পরিচয়, কাজের ক্ষেত্র, তাদের পরিবার ও ব্যক্তিগত গল্প—সবকিছুই জাপান ও বাংলাদেশ দুই দেশের মানুষের হৃদয়ে গভীর শোক এবং শ্রদ্ধার স্থান করে নিয়েছে।

কতজন জাপানি নিহত হয়েছিলেন?
হোলি আর্টিজান হামলায় মোট ৭ জন জাপানি নাগরিক নিহত হন। তাঁরা সবাই জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (JICA)-এর অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পে কাজ করছিলেন। মূলত তাঁরা ছিলেন অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, জরিপ প্রকৌশলী এবং টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে তাদের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নিহত জাপানি নাগরিকদের নাম, বয়স ও পরিচয়
হামলায় নিহত জাপানি নাগরিকদের নাম ও পরিচয় সরকারি সূত্র এবং জাপানি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী:

১. কুনিও ওকাই (Kunio Okai)
বয়স: ৫৬
পরিচয়: টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট
কাজ: সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সিনিয়র বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জাইকার সঙ্গে কাজ করেছেন।
পরিবার: স্ত্রী এবং দুই সন্তান জাপানে থাকেন। খুবই দায়িত্বশীল এবং স্নেহশীল বাবা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

২. কোজি কোজিমা (Koji Kojima)
বয়স: ৪৮
পরিচয়: জরিপ প্রকৌশলী
কাজ: বাংলাদেশে সড়ক প্রকল্পের জরিপ কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশে এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় মিশন।
পরিবার: স্ত্রী এবং এক মেয়ে। পরিবার নিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশে আসার গল্প করতেন।

৩. ইয়ুকি তাতসুশি (Yuki Tatsushi)
বয়স: ২৬
পরিচয়: তরুণ প্রকৌশলী
কাজ: জাইকা প্রকল্পে সহকারী জরিপ কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশে যোগদান করেন মাত্র কয়েক মাস আগে। এটাই ছিল তাঁর প্রথম বিদেশি মিশন।
পরিবার: পিতা-মাতা জাপানে, একমাত্র সন্তান ছিলেন। তাদের স্বপ্ন ছিল ছেলের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা হবে।

৪. ওগাসাওরা মিচিও (Michio Ogasawara)
বয়স: ৫৬
পরিচয়: অভিজ্ঞ সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার
কাজ: রোড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পে মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক বছরের অভিজ্ঞতা।
পরিবার: স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়ে। পরিবার তাঁকে ‘শান্ত স্বভাবের মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

৫. শিমোকুবো নোবুহিরো (Nobuhiro Shimokubo)
বয়স: ৪৪
পরিচয়: পরিবহন বিশেষজ্ঞ
কাজ: জাইকা ফিজিবিলিটি স্টাডি টিমের সদস্য। বাংলাদেশের রাস্তার মান উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছিলেন।
পরিবার: স্ত্রী এবং দুই সন্তান জাপানে। জাপানের গণমাধ্যমে স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছেন, “তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসতেন।”

৬. তামুরা কাতসুয়ো (Katsuo Tamura)
বয়স: ৫০
পরিচয়: প্রধান প্রকল্প ব্যবস্থাপক
কাজ: টিমের নেতৃত্বে ছিলেন। জাইকার সঙ্গে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ছিল। বাংলাদেশে বহুবার আসা-যাওয়া করেছিলেন।
পরিবার: স্ত্রী, এক কিশোর ছেলে এবং এক মেয়ে। পরিবার বলেছে, “তিনি বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বাড়ি ভাবতেন।”

৭. হোশি তাকিউকি (Takayuki Hoshi)
বয়স: ৪০
পরিচয়: প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ
কাজ: রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগে পারদর্শী ছিলেন। প্রকল্পের টেকনিক্যাল দিক সামলাতেন।
পরিবার: স্ত্রী এবং এক ছোট ছেলে। স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “সে সবসময় বলত, বাংলাদেশে মানুষ দারুণ অতিথিপরায়ণ।”

তাঁদের কাজ এবং অবদান
এ সাতজন বিশেষজ্ঞ কাজ করছিলেন বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (JICA)-এর অর্থায়নে এই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে বিভিন্ন জরিপ, রোড ডিজাইন, ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হচ্ছিল।

তাঁদের কাজের উদ্দেশ্য ছিল:

  • বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন
  • দুর্ঘটনা হ্রাস
  • পণ্য পরিবহন সহজ করা
  • আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানো
  • জনগণের যাতায়াত স্বস্তিদায়ক করা

জাইকার কর্মকর্তারা বলেছেন, এদের প্রতিটি ছিলেন “জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের সেতুবন্ধ”। তাঁরা শুধু চাকরি নয়, দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি বিনিময় ঘটাতেন।

পরিবারের শোক ও প্রতিক্রিয়া
হামলার পরে নিহতদের পরিবার জাপানে সংবাদমাধ্যমে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন। কিছু পরিবারের কথা এখানে তুলে ধরা হলো:

ওগাসাওরা মিচিও-র স্ত্রী বলেছেন: “আমরা গর্বিত যে তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করছিলেন। কিন্তু তাঁর এভাবে চলে যাওয়া সহ্য করা যায় না।”

শিমোকুবো নোবুহিরো-র স্ত্রী বলেছেন: “তিনি সবসময় বলতেন, বাংলাদেশের মানুষ খুব আন্তরিক। তাঁর জন্যই বাংলাদেশে যাওয়াটা এত সহজ হয়েছিল।”

তামুরা কাতসুয়ো-র ছেলে বলেছেন: “আমার বাবা সবসময় বলতেন—বাংলাদেশের রাস্তা ভালো হলে মানুষের জীবন ভালো হবে। আমি ওনার স্বপ্ন শেষ করবো।”

বাংলাদেশে ও জাপানে শোক
এই হত্যাকাণ্ড জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ককে গভীর শোকের আবহে আচ্ছন্ন করে। বাংলাদেশ সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের জনগণ গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। জাপান সরকারও বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলে—“এই সন্ত্রাসীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”

জাপানি সরকার নিহতদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গার্ড অব অনার দিয়ে সমাধিস্থ করে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শোক পালন করা হয়। ঢাকায় জাপান দূতাবাস এবং জাইকা বাংলাদেশের অফিসে নিহতদের ছবি রাখা হয় স্মৃতিস্তম্ভের মতো করে।

বাংলাদেশে তাদের স্মৃতিরক্ষার উদ্যোগ
ঢাকায় জাইকা এবং বাংলাদেশ সরকার মিলিয়ে নিহতদের স্মৃতিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন:

  • গুলশান ২-এর কাছের এক মোড়ে “জাপানি মেমোরিয়াল কর্নার” স্থাপন
  • জাইকা অফিসে বিশেষ স্মারক ফলক
  • জাইকার নতুন প্রকল্পে নিহতদের নাম স্মরণীয় করে রাখা

হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত সাতজন জাপানি নাগরিক ছিলেন বাংলাদেশের বন্ধু। তাঁদের স্বপ্ন ছিল—বাংলাদেশের রাস্তা, সেতু, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বমানের হবে। তাঁদের মৃত্যু দুই দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। আরো কাঁদাবে যদি তাদের স্মরণ করা থেকে দূরে সরে যাওয়া হয়।