দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের পাম ওয়েল বাজার এই বছর জৈবজ্বালানি নীতি বিবর্তন ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে দোলাচলি করছে। ইন্দোনেশিয়া–মালয়েশিয়া ছাড়াও বিশ্ববাজারে ৮৫% সরবরাহের ভার বহনকারী এই দুই দেশের ওপর আমেরিকার শুল্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্বন-নিরাপত্তা আইনের চাপ মূল্য উত্থান-পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাজারে অস্থিরতার মূল কারণ
ইউএস শুল্ক বৃদ্ধি ও ইইউ’র অনুমোদনযোগ্য উৎস বিধি চালু হওয়ার আগে থেকেই তেল উৎপাদক দেশগুলো অনিশ্চয়তায় পড়ে। সাম্প্রতিক ইরান–ইসরায়েল সংঘাত এবং এর ফলে কাঁচামাল সরবরাহে সৃষ্ট সংশয় বাজারে দাউ দাউ খেলায় তেজতা এনেছে এবং দ্রুত মূল্য ওঠানামায় প্রভাব ফেলেছে।
সরবরাহ পুনরুদ্ধার ও মূল্য পতন
আবহাওয়ার বাধা কাটিয়ে গত কয়েক মাসে উভয় দেশের উৎপাদন স্বাভাবিক হয়। এর ফলে ছয় মাসের জন্য মালয়েশিয়া লিস্টেড ক্রুড পাম ওয়েল (CPO) ভবিষ্যৎ দর জুনের শেষে টনপ্রতি ৩,৯৮৬ রিঙ্গিতে (৯৪২ ডলার) পর্যন্ত নেমে আসে—বর্ষের প্রথমার্ধে প্রায় ১৮% পতন।
বায়োডিজেল ম্যান্ডেটের প্রভাব
ইন্দোনেশিয়ার B40 নীতি, যা প্রতি লিটার ডিজেলে ৪০% পাম ওয়েল মিশ্রণের নির্দেশ দেয়, ঘরোয়া চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে এবং রপ্তানি সীমিত করেছে। তবে এ বিধি মূল্য বৃদ্ধির ধারাকে সাময়িক স্থিতিশীল করেছে।
জ্বালানি মূল্য ও পাম ওয়েল সম্পর্ক
ক্রুড অয়েলের উত্থান-পতনের সঙ্গে পাম ওয়েলের দাম যুক্ত—ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন বা পরিবহন ব্যাঘাত এ ক্ষেত্রে পাল্টা প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন জুনে ইসরায়েল–ইরানের সংঘাত বেড়ে যাওয়ার পর CPO দামের ওপর ৬% দ্রুত বৃদ্ধি দেখা যায়।
স্টক ও নীতি চালিত চাহিদা
মে মাসে মালয়েশিয়ার মজুদ ২০ লক্ষ টন ছাড়িয়ে গেছে, আগের তিন মাসে ধারাবাহিক বৃদ্ধি হিসেবে সবচেয়ে বেশি। ইন্দোনেশিয়ার GAPKI তথ্যেও এপ্রিল মাসে মজুদ ৫১% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের মে মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ।
ভবিষ্যত ঝুঁকি ও নীতি পরিবর্তন
ইন্দোনেশিয়া B50 নীতিতে যেতে পারে, যার ফলে দেশীয় চাহিদা প্রতি বছর ১০–২০ লক্ষ টন বৃদ্ধি পাবে। রপ্তানি সংকুচিত হতে পারে এবং বিশ্ববাজারে স্থিতিশীলতার ওপর চাপ পড়বে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র–ইউরোপীয় শুল্ক (ইন্দোনেশিয়ায় ৩২%, মালয়েশিয়ায় ২৪%) নতুন করে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
প্রতিবেশী অর্থনীতিতে গুরুত্ব
ইন্দোনেশিয়ায় জিডিপিতে পাম ওয়েলের অবদান ৩–৪% এবং লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান এর ওপর নির্ভরশীল। মালয়েশিয়ায় কৃষি রপ্তানিতে এটি শীর্ষে। তাই দুই দেশের নীতি ও আবহাওয়ার ঝুঁকি বিশ্ববাজারে সরবরাহে ‘সংক্ষিপ্ত একাগ্রতা’ তৈরি করেছে।
নীতিমালার চাপ ও অভিযোজন
ইউরোপের অবক্ষয়ন-নিয়ন্ত্রণ আইন, যা ডিসেম্বর থেকে কার্যকর, উৎপাদকদের অতিরিক্ত খরচ বাড়াবে। ছোট চাষিরা প্রমাণপত্র সংগ্রহে দুর্বল হওয়ার আশঙ্কায় বাজারে প্রবেশে বাধার মুখে পড়তে পারে। মালয়েশিয়ায় সরকার নতুন বাজার (চীন, ভারত, ইইউ) চিহ্নিত করে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।
উপসংহার
স্থানীয় মজুদ, নীতি-চালিত চাহিদা ও জ্বালানির বাজার থেকে সৃষ্ট ফসলভিত্তিক বাইফল পরোক্ষভাবে মূল্য সমর্থন করলেও, সামনের দিনে পরিবর্তনশীল বায়োডিজেল নির্দেশনা, আন্তর্জাতিক শুল্ক এবং ভূরাজনৈতিক ঝাঁকুনি পাম ওয়েল বাজারে চলমান অস্থিরতা বজায় রাখবে।