চোঙ্গার মুখ খুলে ভেতরের জমাট বাঁধা দ্রবণটি পেয়ালা বা পাত্রে ঢেলে দেয়া হতো
কুঞ্জরা
ঢাকায় যারা দেশী ফল বিক্রি করতেন, তাদের বলা হতো কুঞ্জরা। পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফল এনে তারা বিক্রি করতেন। এরা কখনও ফল ছাড়া অন্যকিছু বিক্রি করতেন না। আর কাবুলিওয়ালা বিক্রি করতো আঙুর, আপেল, পেশতা বাদাম প্রভৃতি।
কুলফি বরফ
কুলফি বরফের কথাতো আমরা ভুলেই গেছি। অথচ ছেলেবেলায় সন্ধ্যের পর ঢাকা গলিতে কুলফি বরফঅলার ‘কুলফি বরফ’ ডাক তো এখনও কানে বাজে। এটিও ঢাকার নিজস্ব, যদিও তা পরে কিছু জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল। সৈয়দ আলী আহসান গত শতকের চল্লিশ দশকের কুলফি বরফের একটি বর্ণনা রেখে গেছেন।
“ঢাকায় আরেকটি জিনিস পাওয়া যেত-কুলফি বরফ। টিনের চোঙ্গার মধ্যে বাদাম ও পেস্তা গুঁড়ো করে চিনি দিয়ে ঘন দুধের একটি দ্রবণ ঢেলে দেয়া হতো। চোঙ্গাটির একদিক ছিল সরু, আরেকদিক বড়, অনেকটা পানের খিলির মতো। দ্রবণটি ঢেলে দিয়ে একটি চাকতি দিয়ে চোঙ্গার মুখ বন্ধ করে দেয়া হতো এবং তার ওপর ময়দার লেই লাগিয়ে দেয়া হতো যাতে খুলে না যায়।
দুধের দ্রবণভর্তি এরকম অনেকগুলো চোঙ্গা একটি বড় হাঁড়িতে লবণ মিশ্রিত বরফের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা হতো। বরফের ঠান্ডায় এগুলো জমে যেত। যখন এগুলো বিক্রি করা হতো, তখন চোঙ্গার মুখ খুলে ভেতরের জমাট বাঁধা দ্রবণটি পেয়ালা বা পাত্রে ঢেলে দেয়া হতো। আইসক্রিমের চাইতে এই মালাই কুলফিটি ছিল বেশি সুস্বাদু। এগুলোর দামও ছিল একটু বেশি। কুলফি বরফ ঢাকার জীবন থেকে প্রায় উঠে গেছে।
এখন দুধের দাম এত বেড়েছে যে, ঘরে দুধ দিয়ে কুলফি তৈরি করলে তার দাম পড়বে অনেক এবং সে দামে কেউ কিনতে চাইবে না। এখন আইসক্রিমের ব্যবহারটা এসেছে প্রবলভাবে। আগেকার দিনের আইসক্রিমে দেশীয় স্বাদ-গন্ধ ছিল। এখনকার আইসক্রিম পাশ্চাত্যের স্বাদ-গন্ধ নিয়ে এসেছে। আমরা অনেক চেষ্টা করলেও পুরনো দিনের স্বাদ-গন্ধ ফিরিয়ে আনতে পারব না।”
(চলবে)