‘হিউ এনচাঙ বহুদূর থেকে বৌদ্ধধর্মের অনুসন্ধানে আর যোগভূমিশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে এসেছিল।
কুমাররাজা বললেন, ‘তিনি একটা তাঁবুতে আছেন।’
শীলাদিত্য জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনার সঙ্গে আসেন নি কেন?’
কুমাররাজা উত্তরে বললেন, ‘মহারাজের তো ধর্মে প্রীতি আর সাধুদের প্রতি ভক্তি আছে। মহারাজই তাঁকে ডেকে পাঠান না।’
শীলাদিত্য বললেন, ‘বেশ। আপাততঃ আপনি যেতে পারেন। কাল আমি নিজেই যাব।’
কুমাররাজা ফিরে এসে সব কথা হিউএনচাঙকে জানিয়ে বললেন, ‘মহারাজা ওকথা বললেও আমার মনে হচ্ছে তিনি আজ রাত্রেই আসবেন। আমাদেরও অবশ্য হাজির হতে হবে। আপনি বিচলিত হবেন না।’
ধর্মগুরু বললেন, ‘হিউএনচাঙ সর্বদাই বুদ্ধের ধর্মের অনুজ্ঞা অনুসারে চলবে।’ রাত্রির প্রথম প্রহরে মহারাজা সত্যই এলেন। কতকগুলি লোক বললে যে, নদীর তীরে হাজার হাজার মশাল দেখা যাচ্ছে আর ঢাকের বাস্তও শোনা যাচ্ছে। কুমাররাজা তখন তাঁর মন্ত্রীদের আর মশালবাহীদের সঙ্গে নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গিয়ে শীলাদিত্যকে অভ্যর্থনা করলেন।
শীলাদিত্যরাজা কুচ করে যাবার সময় কয়েক শত সোনার ঢাক বাজত, প্রত্যেক পদক্ষেপে একএকবার ঢাক পেটানো হত। অন্য রাজাদের এ রকম করবার অধিকার ছিল না।
মহারাজা এসে ধর্মগুরুকে প্রণাম করে সামনে ফুল ছড়িয়ে দিলেন, আর ভক্তিভরে ধর্মগুরুর উদ্দেশে কবিতায় অনেক স্তুতি করলেন। তার পর বললেন, ‘আপনার এ শিষ্য আপনাকে আগেই নিমন্ত্রণ করে পাঠিয়েছিল। আপনি আমার অনুরোধ শোনেন নি কেন?’
উত্তরে হিউএনচাঙ বললেন, ‘হিউ এনচাঙ বহুদূর থেকে বৌদ্ধধর্মের অনুসন্ধানে আর যোগভূমিশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে এসেছিল। আমার এই শাস্ত্রপাঠ সম্পূর্ণ না হওয়ায় সে সময়ে মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসতে পারি নি।’
তখন হর্ষবর্ধনও কুমাররাজার মতন ‘চীনরাজার গীত’ সম্বন্ধে হিউএনচাঙকে জিজ্ঞাসা করলেন। তার পর অন্য কথাবার্তার পর মহারাজ বললেন, ‘আপনি আজ বিশ্রাম করুন। কাল আপনাকে নিয়ে যাব।’
পরদিন সকালে মহারাজের দূত এল। হিউ এনচাঙ ও কুমাররাজা প্রাসাদে গেলেন। শীলাদিত্য কয়েকজন অনুচর সঙ্গে করে তাঁদের অভ্যর্থনা করে ভিতরে নিয়ে সমাদরে বসালেন।
(চলবে)
হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪২)