বাংলাদেশের মাপে যে ক’টি নির্বাচন ভালো হয়েছে, তার একটি হয়েছিল এ. টি. এম. শামসুল হুদার হাত দিয়ে। তবে সত্য হলো, সে সময়ের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং সেনাবাহিনীপ্রধান চেয়েছিলেন বলেই এতটা ইনক্লুসিভ ও পাবলিক পার্টিসিপেটরি নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল। ওই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য, এবং অধিকাংশ স্থানে ভোটাররা নিজ হাতে, নিজ পছন্দমতো ব্যালটে সিল মারতে পেরেছিলেন—এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এরপরেও যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা কতটুকু, তা হয়তো জনসাধারণ জানে না। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের মানের একটি ভালো নির্বাচন তাঁর হাত দিয়েই হয়েছিল। সেই নির্বাচনের সময় তৈরি হয়েছিল ভোটার আইডি কার্ড, যা আজ ‘ন্যাশনাল আইডি কার্ড’ নামে পরিচিত। এই কার্ড-প্রকল্পের পূর্ব ইতিহাস আর সামনে না আনাই ভালো।
অন্যদিকে, সচিব হিসেবেও তিনি ছিলেন প্রশংসনীয়। তাঁর ছাত্রজীবনের রাজনীতির সঙ্গে আওয়ামী রাজনীতির দূরত্ব ছিল অনেক। তবু তাঁর আমলে আওয়ামী লীগ ও তাদের নিজস্ব জোট সর্বাধিক আসন পেয়েছিল। সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাঁকে নিরপেক্ষ না বলে উপায় নেই।
ভদ্রলোক তিরাশি বছর বয়সে মারা গেছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায়, হয়তো তিনি আরও কিছু দিন বেঁচে থাকতে পারতেন। তবে তাঁর মৃত্যুর পর সামাজিক ফোরামে দুটি বক্তব্য বিশেষভাবে ঘুরছে—একটি হলো, বিভিন্ন তথাকথিত ‘প্রেশার গ্রুপ’ (মব) ভদ্রলোককে গ্রেফতার করার হুমকি দিচ্ছিল; হয়তো এই চাপই তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়েছে। আরেকটি বক্তব্য হলো, ভদ্রলোক মারা গিয়ে অসম্মানিত হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছেন।
একজন সম্মানিত ও সাংবিধানিক দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর যে সমাজে এ ধরনের মন্তব্য ভেসে আসে, সে সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে আর নতুন করে বলার কিছু থাকে না।
বরং এখন শুধু বলা যায়—যদিও তিনি পরিণত বয়সে মারা গেছেন, তবু যে-কোনো মৃত্যুই তাঁর পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, এবং সেখানে শোকের ভারও অনেক বড়। এই দুটি বেদনা তাঁদের পরিবার কাটিয়ে উঠুক।
সর্বোপরি, তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহানুভূতি, আর সাবেক সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ. টি. এম. শামসুল হুদার জীবন ও কর্মের প্রতি রইল শ্রদ্ধা।