নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ১৬-তম ‘টয়্ বিজ’ আন্তর্জাতিক বীটুবি এক্সপোর ফাঁকে শুক্রবার বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কোনো নির্ধারিত সময়সীমার চাপে পড়ে ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই করবে না। মার্কিন প্রশাসনের নির্ধারিত ৯ জুলাইয়ের সম্ভাব্য শেষ সময়সীমা সামনে থাকলেও গয়ালের বক্তব্য, জাতীয় স্বার্থই চূড়ান্ত; অসম্পূর্ণ খসড়া নিয়ে তড়িঘড়ি চুক্তি নয়।
আলোচনার বর্তমান অবস্থা
- এক সপ্তাহের ওয়াশিংটন বৈঠক শেষে প্রধান আলোচক রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল বুধবার দিল্লি ফিরেছে।
- অন্তর্বর্তী চুক্তির খসড়া হাতে থাকলেও গাড়ি–যন্ত্রাংশ ও কৃষিখাতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইস্যু মীমাংসিত নয়।
- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘শুধুমাত্র পণ্যের’ (Early Harvest) পর্যায়ে একটি প্রাথমিক সমঝোতা নিয়ে কথা চলছে, যা ২০২৫ সালের অক্টোবরে পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির ভিত্তি হবে।
কৃষি-খাতে ভারতীয় আপত্তি
- জেনেটিক্যালি মডিফাইড (জিএম) সয়াবিন ও ভুট্টা ভারতীয় আইনে নিষিদ্ধ; তাই ‘নন-জিএম’ শংসাপত্র ছাড়া এ পণ্য আমদানিতে সম্মতি নেই।
- কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষায় নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে সীমিত ছাড় দিতে ভারত প্রস্তুত, তবে কৃষি বাজার সম্পূর্ণ খোলার কোনো প্রশ্ন নেই।
দুগ্ধ খাতের উদ্বেগ
- ভারতের অধিকাংশ দুগ্ধ খামার এখনো জীবিকা-নির্ভর, যেখানে একটি-দুটি গরু-মহিষেই পরিবারের আয় চলে।
- যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প-ভিত্তিক বৃহৎ খামারের সঙ্গে এ ক্ষুদ্র খামারিরা প্রতিযোগিতা করতে পারবে না—এই যুক্তি তুলে ধরেছে ভারত।
- ধর্মীয়-সামাজিক সংবেদনশীলতার কারণেও আমেরিকান পশুখাদ্যে থাকা অ-মাংসাশী উপাদান প্রশ্নবিদ্ধ।
পাল্টা শুল্ক ও ডব্লিউটিও-তে ভারত
- ২৬% ‘লিবারেশন ডে’ পাল্টা শুল্কের পুরোটা প্রত্যাহার চাননি ভারত; আংশিক ছাড়ের বিনিময়ে সীমিত কৃষি-ছাড় দিতেও রাজি।
- গাড়ি ও যন্ত্রাংশে মার্কিন সুরক্ষা শুল্কের জবাবে কিছু মার্কিন পণ্যে ভারত নিজের পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) জানিয়েছে। এতে বছরে প্রায় ৭২৩.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ভবিষ্যৎ রূপরেখা
- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ফেব্রুয়ারি ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য স্থির করেছেন।
- অক্টোবরে যে সামগ্রিক চুক্তি আসার কথা, সেখানে সেবা ও বিনিয়োগ অধ্যায়ও যোগ হবে।
সমান্তরাল বাণিজ্য আলোচনা
ভারত একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করেছে; ইইউ, নিউজিল্যান্ড, ওমান, চিলি ও পেরুর সঙ্গে আলোচনাও এগিয়ে চলছে। গয়ালের মন্তব্য, “জাতীয় স্বার্থই সর্বোচ্চ; দুই পক্ষ লাভবান হলেই এফটিএ সম্ভব।”
৯ জুলাইয়ের সময়সীমা যতই এগিয়ে আসুক, ভারত শেষ মুহূর্তের চাপ মানবে না—এটাই বাণিজ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট ইঙ্গিত। আলোচক দল ভার্চুয়াল মাধ্যমে কথাবার্তা চালিয়ে যাবে, তবে ‘সম্পূর্ণ, সুষ্পষ্ট ও জাতীয় স্বার্থ-সম্মত’ রূপ না পাওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি ঘোষণা হবে না।