ব্রাহ্মণ আনন্দে কামরূপে ফিরে গিয়ে সেখানকার রাজার কাছে হিউ এনচাঙের কথা বলল।একদিন ‘বজ্র’ নামক একজন নগ্ন নিগ্রন্থ ব্রহ্মচারী হঠাৎ ধর্মগুরুর ঘরে প্রবেশ করল। এ আবার ভবিষ্যৎ বলতে পারত। হিউ এনচাঙতাকে বললেন, ‘আমি এখানে এক বৎসর আর কয়েক মাস থেকে শাস্ত্র আলোচনা আর অধ্যয়ন করছি। এখন দেশে ফিরে যেতে চাই কিন্তু যাওয়া সম্ভব হবে কি না, যাওয়া উচিত হবে কি না, আর কতদিন বাঁচব জানতে চাই। আমার কোষ্ঠী বিচার করে বলুন।’
নিগ্রন্থ বিচার করে বলল, ‘ধর্মগুরুর এখানে থাকা ভালো। ভারতের সব লোকেরই আপনার প্রতি গভীর ভক্তি আছে। ফিরে যাওয়াও ভালো কিন্তু তত ভালো নয়। আপনি আর দশ বছর বাঁচবেন। বর্তমান সৌভাগ্য কতদিন চলবে বলতে পারলাম না।’
ধর্মগুরু বললেন, ‘ফিরে যাওয়াই আমার মনের ইচ্ছা। কিন্তু সঙ্গে বহু দেবমূর্তি আর শাস্ত্রগ্রন্থ আছে, সেগুলি কী করে নিয়ে যাব?’
নিগ্রন্থ বললে, ‘চিন্তা নেই। শীলাদিত্য রাজা আর কুমার রাজা (কামরূপরাজ) আপনার সঙ্গে লোক দেবেন। আপনি নির্বিঘ্নে যেতে পারবেন।’
ধর্মগুরু বললেন, ‘এ দুই রাজাকে তো আমি চোখেও দেখি নি। এ সৌভাগ্য আমার কী করে হবে?’
নিগ্রন্থ বলল, ‘কুমাররাজা আপনাকে নিমন্ত্রণ করার জন্যে লোক পাঠিয়েছেন। তারা দুই তিন দিনেই পৌঁছবে। কুমাররাজার সঙ্গে সাক্ষাতের পর শীলাদিত্যের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হবে।’
এই কথা বলে সে চলে গেল।
হিউএনচাঙ তখন ফিরে যাওয়াই স্থির করলেন, আর তাঁর সংগৃহীত মূর্তি ও শাস্ত্রগুলি গোছাতে লাগলেন।
নালান্দার পণ্ডিত সমাজ তাঁকে এত শ্রদ্ধা করতেন আর তাঁকে নিজেদেরই একজন বলে জ্ঞান করতেন যে তাঁকে চীনে না ফিরে গিয়ে তাঁদের সঙ্গেই থেকে যেতে বললেন। তাঁরা বললেন, ‘ভারতবর্ষই ভগবান বুদ্ধের জন্মভূমি। যদিও তিনি আর পৃথিবীতে নেই তবু এখানেই তাঁর জীবনের সব স্মৃতিচিহ্নগুলি রয়েছে। সেইগুলি দেখে বেড়ানো, তাঁর ‘গুণগান করা, এতেই আপনার জীবনের আনন্দ হবে। এখানে এলেনই যদি তবে হঠাৎ আমাদের ছেড়ে গিয়ে লাভ কী? তা ছাড়া চীনদেশ ম্লেচ্ছদের দেশ।
(চলবে)
হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৮)