০২:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৮)

মহারাজ বললেন, ‘এ কথার অর্থ কী?’ তারা জবাব দিল, ‘নালন্দার ভিক্ষুরা তো ‘আকাশকুসুমবাদী’, নামমাত্র বৌদ্ধ। ওদের সঙ্গে কাপালিকদের প্রভেদ কী?’

এসব মতের সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য যদি আমরা নাও করতে পারি তবু এর কোনো একটা মত সত্য হলে অন্য মতটা যে ভুল হতেই হবে তার কোন অর্থ নেই। প্রকৃত দোষ এঁদের ভাষ্যকারদের। এই সময়ে হিউ এনচাঙ ‘হুই-চুঙ-লুন’ (মতসমন্বয়) নামে সংস্কৃতভাষায় তিন হাজার শ্লোকে একখানা গ্রন্থ রচনা করেন। নালন্দার পণ্ডিতবর্গ সে গ্রন্থ সাদরে গ্রহণ করেন।

হীনযানীদেরই হিউএনচাঙ প্রকৃত বিপক্ষ জ্ঞান করতেন আর তাদের বিরুদ্ধেই তাঁর তীক্ষ্ণ যুক্তিগুলি ব্যবহৃত হত। হীনযানীরাও মহাযানীদের কম বিরোধিতা করতেন না। উড়িষ্যার হীনযানীরা হর্ষবর্ধনকে বলেছিল, ‘মহারাজ, শুনলাম, নালন্দা বিহারের কাছে একটি পিতলে মোড়া মস্ত জাঁকালো বিহার তৈরি করে দিয়েছেন। তাহলে একটা কাপালিক মন্দির বা ঐ জাতীয় কিছু তৈরি করলেই বা দোষ কী ছিল?’

মহারাজ বললেন, ‘এ কথার অর্থ কী?’ তারা জবাব দিল, ‘নালন্দার ভিক্ষুরা তো ‘আকাশকুসুমবাদী’, নামমাত্র বৌদ্ধ। ওদের সঙ্গে কাপালিকদের প্রভেদ কী?’

একদিন, এক লোকায়তিকমতবাদী ব্রাহ্মণ নালন্দার ভিক্ষুদের সঙ্গে তর্ক করতে এসে চল্লিশটি পূর্বপক্ষ লিখে মন্দির-তোরণে ঝুলিয়ে দিল আর বললে যে, ভিতরের কেউ যদি এই মত খণ্ডন করতে পারে তা হলে আমার শির দিব।

কয়েকদিন পর্যন্ত কেউ উত্তর দিল না। তার পর ধর্মগুরু হিউ এনচাঙের আদেশে তাঁর একজন অনুচর ঐ লেখাগুলি ছিড়ে পদদলিভকরল। ব্রাহ্মণ খুব রেগে তাকে বললে, ‘তুমি কে?’

সে উত্তর করলে, ‘আমি মহাযানদেবের ভৃত্য। (হিউএনচাঙকে নালন্দায় মহাযানদেব বলা হত।) ব্রাহ্মণ আগেই ধর্মগুরুর খ্যাতি শুনেছিল; তাই প্রথমে তাঁর সঙ্গে তর্ক করতে চায় নি। ধর্মগুরু তাকে ডেকে পাঠালেন আর শীলভদ্র ও অন্যসমস্ত ভিক্ষুদের সম্মুখে সাংখ্যমতবাদ খণ্ডন করলেন। তখন ব্রাহ্মণ উঠে বললে, ‘আমার হার হয়েছে। আমার পণ অনুসারে শির দিতে প্রস্তুত আছি।’

ধর্মগুরু বললেন, ‘আমরা, শাক্যপুত্ররা, লোকের মৃত্যু ইচ্ছা করি না। তুমি আমার ভৃত্য হলেই হবে।’ ব্রাহ্মণ আনন্দে সম্মত হল। হিউ এনচাঙ বুঝেছিলেন যে, এই ব্রাহ্মণের হীনযান শাস্ত্রে ভালো জ্ঞানই আছে। তাই ব্রাহ্মণ তাঁর আদেশে হীনযান শাস্ত্রে দুই-একটি দুরূহ স্থানের ব্যাখ্যা করে তাঁকে বুঝিয়ে দিতে, হিউ এনচাঙ খুশি হয়ে তাকে মুক্তি দিলেন। বিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করতে হলে তাদের শাস্ত্রও যে খুব ভালো করে জানা দরকার এ জ্ঞান তাঁর যথেষ্টই ছিল।

(চলবে)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৭)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৭)

 

সুপ্রিম কোর্টের রায়কে পাশ কাটানোর কৌশল খুঁজছে বিচারকরা, ফেরাতে পারবে কি USAID

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৮)

০৯:০০:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫

মহারাজ বললেন, ‘এ কথার অর্থ কী?’ তারা জবাব দিল, ‘নালন্দার ভিক্ষুরা তো ‘আকাশকুসুমবাদী’, নামমাত্র বৌদ্ধ। ওদের সঙ্গে কাপালিকদের প্রভেদ কী?’

এসব মতের সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য যদি আমরা নাও করতে পারি তবু এর কোনো একটা মত সত্য হলে অন্য মতটা যে ভুল হতেই হবে তার কোন অর্থ নেই। প্রকৃত দোষ এঁদের ভাষ্যকারদের। এই সময়ে হিউ এনচাঙ ‘হুই-চুঙ-লুন’ (মতসমন্বয়) নামে সংস্কৃতভাষায় তিন হাজার শ্লোকে একখানা গ্রন্থ রচনা করেন। নালন্দার পণ্ডিতবর্গ সে গ্রন্থ সাদরে গ্রহণ করেন।

হীনযানীদেরই হিউএনচাঙ প্রকৃত বিপক্ষ জ্ঞান করতেন আর তাদের বিরুদ্ধেই তাঁর তীক্ষ্ণ যুক্তিগুলি ব্যবহৃত হত। হীনযানীরাও মহাযানীদের কম বিরোধিতা করতেন না। উড়িষ্যার হীনযানীরা হর্ষবর্ধনকে বলেছিল, ‘মহারাজ, শুনলাম, নালন্দা বিহারের কাছে একটি পিতলে মোড়া মস্ত জাঁকালো বিহার তৈরি করে দিয়েছেন। তাহলে একটা কাপালিক মন্দির বা ঐ জাতীয় কিছু তৈরি করলেই বা দোষ কী ছিল?’

মহারাজ বললেন, ‘এ কথার অর্থ কী?’ তারা জবাব দিল, ‘নালন্দার ভিক্ষুরা তো ‘আকাশকুসুমবাদী’, নামমাত্র বৌদ্ধ। ওদের সঙ্গে কাপালিকদের প্রভেদ কী?’

একদিন, এক লোকায়তিকমতবাদী ব্রাহ্মণ নালন্দার ভিক্ষুদের সঙ্গে তর্ক করতে এসে চল্লিশটি পূর্বপক্ষ লিখে মন্দির-তোরণে ঝুলিয়ে দিল আর বললে যে, ভিতরের কেউ যদি এই মত খণ্ডন করতে পারে তা হলে আমার শির দিব।

কয়েকদিন পর্যন্ত কেউ উত্তর দিল না। তার পর ধর্মগুরু হিউ এনচাঙের আদেশে তাঁর একজন অনুচর ঐ লেখাগুলি ছিড়ে পদদলিভকরল। ব্রাহ্মণ খুব রেগে তাকে বললে, ‘তুমি কে?’

সে উত্তর করলে, ‘আমি মহাযানদেবের ভৃত্য। (হিউএনচাঙকে নালন্দায় মহাযানদেব বলা হত।) ব্রাহ্মণ আগেই ধর্মগুরুর খ্যাতি শুনেছিল; তাই প্রথমে তাঁর সঙ্গে তর্ক করতে চায় নি। ধর্মগুরু তাকে ডেকে পাঠালেন আর শীলভদ্র ও অন্যসমস্ত ভিক্ষুদের সম্মুখে সাংখ্যমতবাদ খণ্ডন করলেন। তখন ব্রাহ্মণ উঠে বললে, ‘আমার হার হয়েছে। আমার পণ অনুসারে শির দিতে প্রস্তুত আছি।’

ধর্মগুরু বললেন, ‘আমরা, শাক্যপুত্ররা, লোকের মৃত্যু ইচ্ছা করি না। তুমি আমার ভৃত্য হলেই হবে।’ ব্রাহ্মণ আনন্দে সম্মত হল। হিউ এনচাঙ বুঝেছিলেন যে, এই ব্রাহ্মণের হীনযান শাস্ত্রে ভালো জ্ঞানই আছে। তাই ব্রাহ্মণ তাঁর আদেশে হীনযান শাস্ত্রে দুই-একটি দুরূহ স্থানের ব্যাখ্যা করে তাঁকে বুঝিয়ে দিতে, হিউ এনচাঙ খুশি হয়ে তাকে মুক্তি দিলেন। বিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করতে হলে তাদের শাস্ত্রও যে খুব ভালো করে জানা দরকার এ জ্ঞান তাঁর যথেষ্টই ছিল।

(চলবে)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৭)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৭)