যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি সারা দেশে প্রযোজ্য ইনজাঙ্কশন (nationwide injunction) জারির ক্ষমতা সীমিত করে এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। অনেকে এটাকে বিচারব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা হিসেবে দেখেছেন। তবে বাস্তবে তাৎক্ষণিক প্রভাব তুলনামূলক সীমিত হয়েছে।
বিশেষ করে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের একক ক্ষমতায় ফেডারেল সরকারকে রূপান্তর ও খরচ কমানোর উদ্যোগে এই রায়ের প্রভাব সরাসরি বড় কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
সুদূরপ্রসারী প্রভাবের আশা, তবে তাৎক্ষণিক প্রভাব সীমিত
এখনও রায়টি কার্যকর হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি বিচারব্যবস্থার নিয়ম-কানুনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধীরা নতুন কৌশল নিয়েছেন।
যেখানে আগে “ইউনিভার্সাল ইনজাঙ্কশন” চাইত, এখন তারা মামলা দিচ্ছেন “ক্লাস অ্যাকশন” আকারে বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে। আদালতগুলোও আপাতত এই নতুন ধরনের যুক্তি গ্রহণ করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।
বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে মামলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ
যদি সুপ্রিম কোর্ট ভবিষ্যতে এই বিকল্প পথগুলোও সংকীর্ণ করতে চায়, তবুও এসব আইনি লড়াই মেটাতে মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে।
অনেক বিচারক ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন ও তার বিরোধী পক্ষকে ডেকে জিজ্ঞাসা করছেন—তাদের চলমান মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় কীভাবে প্রয়োগ হবে। এ নিয়ে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত মামলা
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে অন্তত চারটি মামলায় জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার অস্বীকার করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এ কারণেই সুপ্রিম কোর্টের ইনজাঙ্কশন বিষয়ক রায়ের সূত্রপাত। এখন সেই মামলাগুলোর বিচারকরা ঠিক করবেন—তাদের জারি করা দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা আদেশগুলো এখনও বৈধ কি না।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে—যদি মামলাগুলি রাজ্যগুলো করে, তখন দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা যৌক্তিক হতে পারে। অন্য অনেক আবেদনকারী দ্রুত নিজেদের মামলা ক্লাস অ্যাকশন আকারে রূপান্তর করেছেন যাতে কার্যত দেশব্যাপী প্রভাব বজায় থাকে।
শরণার্থী গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে মামলা
৯ম সার্কিট কোর্ট অফ আপিলসে ট্রাম্প প্রশাসনকে শরণার্থী গ্রহণ প্রক্রিয়া চালু রাখতে বাধ্য করা দেশব্যাপী রায় পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর এ রায় খুব বেশি বিস্তৃত হয়ে যাচ্ছে। তবে শরণার্থীদের সহায়তাকারী বেশ কয়েকটি সংস্থা বলছে—শুধুমাত্র জাতীয় পর্যায়ে প্রযোজ্য আদেশই শরণার্থীদের প্রকৃত সুরক্ষা দিতে পারে।
ট্রান্সজেন্ডার সেনা সদস্যদের নিয়ে মামলা
৯ম সার্কিট একইভাবে ট্রাম্পের ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা দেশব্যাপী রায়ও পুনর্বিবেচনা করছে।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট এই স্থগিতাদেশের তাৎক্ষণিক কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয়। এখন বিতর্ক হচ্ছে—রায়টি কি শুধু মামলাকারী সেনা সদস্যদের ক্ষেত্রেই সীমিত থাকবে? তবে মামলাকারীরা বলছেন—এভাবে সীমিত করলে তারা ‘অফিশিয়ালি অনুপযুক্ত’ হিসেবে নীতির ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হবেন, যা কার্যত বৈষম্যই সৃষ্টি করবে।
পেন্টাগনের গবেষণা তহবিল কমানো নিয়ে মামলা
বাইডেনের মনোনীত বিচারক ব্রায়ান মারফি আগামী সপ্তাহে পরামর্শ চাইছেন—পেন্টাগনের গবেষণা বাজেট কমানোর সঙ্গে যুক্ত এক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশনা কীভাবে প্রয়োগ করবেন।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা বন্ধ করা নিয়ে মামলা
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগও সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লেখ করে ডিসি সার্কিট কোর্টকে চিঠি লিখেছে। তারা বলেছে—যাতে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (USAID) বন্ধ করা ঠেকাতে জারি করা আদেশটি অনেক সীমিত করা হয়।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের দেশব্যাপী ইনজাঙ্কশন সীমিত করার রায় তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকদের থামাতে পারেনি। বরং তারা নতুন আইনি কৌশল খুঁজে নিচ্ছে—যা দীর্ঘমেয়াদে আইনি লড়াইকে জটিল ও দীর্ঘায়িত করে তুলবে।