নগদ টাকার পুরনো অভ্যাসে ফিরছে জেন জেড
ডেবিট কার্ড, মোবাইল পেমেন্ট—সবই খুব সহজ করে দিয়েছে খরচের অভ্যাসকে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় একের পর এক লেনদেন: কফি, শপিং, বন্ধুদের সঙ্গে ব্রাঞ্চ—আর শেষে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের শ্বাসকষ্ট।
এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে টিকটক এ জনপ্রিয় হয়েছে নতুন এক টিপস: ‘ক্যাশ-অনলি উইকেন্ড’। ধারণা খুব সোজা—শুক্রবার এটিএম থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ টাকা তুলে নিন, আর সেটাই আপনার পুরো উইকেন্ডের খরচ।
কোনো কার্ড নয়। কোনো অ্যাপল পে নয়। ব্যতিক্রম নেই। টাকা শেষ হলে আনন্দও শেষ।
সহজ পেমেন্টে বাজেট উড়ে যায়
আধুনিক টাচ-টু-পে বা মোবাইল ওয়ালেটের কারণে খরচ করা ভয়ংকর সহজ হয়ে গেছে। এ কারণেই এই ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতি আবার জনপ্রিয় হচ্ছে।
অর্থপরামর্শক এবং ‘দ্য ব্র্যান্ডস অ্যান্ড ব্যান্ডস’ এর প্রতিষ্ঠাতা নাদিয়া ভান্ডারহল সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আজকাল বেশিরভাগ মানুষ অ্যাপল পে বা গুগল পে দিয়ে ট্যাপ করে টাকা দেয়—ওয়ালেট পর্যন্ত বের করতে হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “এভাবেই সমস্যা হয়—টাকা খুব দ্রুত চলে যায়, কিন্তু আপনি বুঝতেই পারেন না কত খরচ করছেন।”
পরিকল্পনা করে খরচের শিক্ষা
ভান্ডারহলের মতে, এই পদ্ধতি শুধু টাকা বাঁচানোর জন্য নয়, খরচের প্রতি সচেতনতা গড়ার জন্যও।
‘ক্যাশ-অনলি উইকেন্ড’ মানে তাৎক্ষণিক লোভের বশে কেনাকাটা বন্ধ করা এবং ভাবনা করে খরচ করা।
তিনি বলেন, “আপনি ঠিক করবেন এই সপ্তাহান্তে কত খরচ করবেন, শুক্রবারে সেই পরিমাণ টাকা তুলে নেবেন, আর রবিবার পর্যন্ত সেটাই ব্যবহার করবেন।”
নগদ টাকা হাতে নিয়ে যখন খরচ কমে আসতে দেখবেন, তখন বেহিসাবি খরচ করার ঝোঁক কমে যাবে।
হাতে টাকার চাপই মূল কৌশল
এখানেই কৌশলটি কার্যকর। যখন হাতে টাকা থাকে এবং সেটি শেষ হতে দেখেন, তখন অযথা খরচের আগে দুইবার ভাবেন।
অতিরিক্ত ল্যাটে বা অদরকারি দোকানের ট্রিনকেট কেনার আগে থামতে বাধ্য হন।
ভান্ডারহল বলেন, “যদি স্বাভাবিকভাবে কার্ড টেনে দেন বা খাবার, সুবিধাজনক জিনিস, ছোটখাটো জিনিসে বেশি খরচ করেন, তাহলে এই পদ্ধতি আপনাকে সচেতন করবে।”
কীভাবে করবেন ‘ক্যাশ-অনলি উইকেন্ড’
প্রথমে নিজের ব্যাংক ব্যালান্স দেখুন, আপনার প্ল্যানগুলো ভেবে নিন—জন্মদিনের পার্টি, বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়া, মদ্যপান—সব হিসাব করে এটিএম থেকে সেই পরিমাণ টাকা তুলুন।
টাকা একটি খাম বা ছোট পাউচে রাখুন এবং কার্ড ব্যবহার না করার শপথ নিন।
তবে, ভান্ডারহল পরামর্শ দেন—একটি ব্যাকআপ কার্ড এত গভীরে লুকিয়ে রাখুন যাতে সহজে বের করতে ইচ্ছা না হয়।
আরও কিছু অর্থ সাশ্রয়ের কৌশল
এর আগে ‘দ্য পোস্ট’ রিপোর্ট করেছে যে, জেনারেশন জেড অন্য কিছু পদ্ধতিও ব্যবহার করছে, যেমন ‘ট্রিট ইয়োরসেল্ফ ট্যাক্স’ এবং ‘১ শতাংশ নিয়ম’।
‘ট্রিট ইয়োরসেল্ফ ট্যাক্স’-এর নিয়ম—প্রতিটি আকস্মিক কেনাকাটার জন্য সমপরিমাণ টাকা সঞ্চয়ে রাখুন।
যেমন, ৭ ডলারের কফি, ৩০ ডলারের লিপগ্লস, বা ২৫০ ডলারের ব্যাগ—যা-ই কিনুন, ঠিক একই পরিমাণ টাকা সঞ্চয়ে দিন।
এতে খরচ এবং সঞ্চয়ের মধ্যে ভারসাম্য আসে।
১ শতাংশ নিয়ম
‘১ শতাংশ নিয়ম’ আরও সহজ। আপনার বার্ষিক আয়ের ১ শতাংশের বেশি মূল্যের কোনো জিনিস কেনার আগে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।
উদাহরণ হিসেবে, যদি আপনার বার্ষিক আয় ৫০,০০০ ডলার হয়, তাহলে ৫০০ ডলারের বেশি দামের কিছু কিনতে চাইলে একদিন চিন্তা করুন।
পরের দিনও যদি তা সত্যি দরকার মনে হয়, কিনে ফেলুন। নাহলে—আপনার টাকা এবং ক্রেডিট স্কোর দুটোই বাঁচবে।
পুরনো দিনের নগদ টাকার কৌশল আবারও ফিরে আসছে নতুন প্রজন্মের কাছে। অটোমেটিক পেমেন্টের যুগে যেখানে খরচের হিসাব রাখা কঠিন, সেখানে হাতে টাকা গোনা মানুষকে খরচে নিয়ন্ত্রণ আর সচেতনতা আনতে বাধ্য করছে।