শীলভদ্রের আদেশে এক তর্কসভায় উপস্থিত হয়ে তিনি যোগাচারী ভিক্ষু সিংহরশ্মিকে বলেন যে, তিনি নিজে নাগার্জনের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেছেন
আবার নালন্দা
হিউএনচাঙ আবার নালন্দায় উপস্থিত হয়ে শীলভদ্রকে প্রণাম করলেন। তাঁর তীর্থ ভ্রমণ একরকম সাঙ্গ হল; কাজেই এখন ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রের অনুশীলনে নিশ্চিন্তভাবে নিজেকে নিয়োগ করবার অবসর পেলেন। নালন্দা থেকে পঁচিশ মাইল দূরে অন্য এক মঠে প্রজ্ঞাভদ্র নামে সর্বাস্তিবাদমতাবলম্বী একজন বিদ্বান ভিক্ষু আছেন জানতে পেরে তিনি তাঁর কাছে গিয়ে দুই মাস ছিলেন।
নালন্দার কাছে ‘যষ্টিবনগিরি’ নামক পাহাড়ে জয়সেন নামে একজন ক্ষত্রিয় মহাপণ্ডিত বৌদ্ধ ভিক্ষু ছিলেন। ইনি স্থিতমতির আর শীলভদ্রের শিষ্য। বৌদ্ধ ও বৈদিক সমস্ত শাস্ত্রে এর প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য দেশবিখ্যাত ছিল। হিউএনচাঙ এর কাছে কয়েক মাস থেকে নানা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। হিউ এনচাঙের শিষ্য হুইলি বলেন যে, এইখানে থাকবার সময়ে ধর্মগুরু এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বপ্নে মনে হল যেন তিনি নালন্দার মঠেই আছেন।
কিন্তু মঠগুলি জনশূন্য আর প্রাঙ্গণ অতিশয় অপরিষ্কার; কারণ সেখানে অনেকগুলি মহিষ বাঁধা আছে। কোনো সন্ন্যাসী বা শ্রমণের দেখা পাওয়া গেল না। ধর্মগুরু যেন ‘বালাদিত্য ভবনে’ প্রবেশ করে চারতলায় একজন উজ্জ্বল স্বর্ণবর্ণ পুরুষকে দেখলেন। তাঁর মুখের ভাব কঠোর ও গম্ভীর।
ইনি (বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী) দূরে অঙ্গুলি নির্দেশ করে দেখালেন, যেন একটা বিস্তৃত অগ্নিশিখা গ্রাম নগরী ভস্মীভূত করতে করতে চলেছে। আর অনতিবিলম্বে হর্ষবর্ধনের মৃত্যু আর তার ফলে দেশময় যে ভীষণ অরাজকতা হবে সেই সম্বন্ধে উচ্চৈঃস্বরে ভবিষ্যদ্বাণী করে হিউ এনচাঙকে শীঘ্রই দেশে ফিরতে বললেন।
মহাযানপন্থীরা এই সময়ে দুইদলে বিভক্ত ছিলেন, একদল অসঙ্গ ও বসুবন্ধু কর্তৃক উপদিষ্ট ‘বিজ্ঞানবাদ’ ও ‘যোগাচার’ মতাবলম্বী (শীলভদ্র এই দলের লোক), আর অন্য দল নাগার্জুন প্রদর্শিত ‘মাধ্যমিক’ মতাবলম্বী। এই দুই দলের তর্ক বা বিবাদের অন্ত ছিল না। কিন্তু হিউএনচাঙ এ সময়ে এই দুই দলের বিতর্কের যেন উপরে ছিলেন।
শীলভদ্রের আদেশে এক তর্কসভায় উপস্থিত হয়ে তিনি যোগাচারী ভিক্ষু সিংহরশ্মিকে বলেন যে, তিনি নিজে নাগার্জনের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করেছেন; যোগাচ’রও তিনি জানেন। তাঁর মতে যেসব সাধুরা এই-সব মত উপদেশ দিয়েছেন তাঁদের নিজেদের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না, তবে তাঁরা নিজেরা প্রত্যেকেই যেমন বুঝেছেন তেমনি লিখেছেন।
(চলবে)
সত্যেন্দ্রকুমার বসু 



















